শ্রীপর্ণা চ্যাটার্জী
গাঙ্গুলী
সে
ভাদ্রের দুপুরে বাক্স -প্যাটরা
রোদে দিয়ে
ভাবতে বসেছিলাম একটা শিউলিগাছ লাগাবো
বাড়ির কোণে ।দু -এক বছর পর গাছটা
এক উঠোন ফুল দেবে ।
কয়েকটা মালা গাঁথা বাকি রয়ে গেছে ,
আমি সোনা সোনা সকালে ফুল কুড়িয়ে
মালা গেঁথে নেব।
ভাবতে ভাবতেই একটা পাখি
আমার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল
টি টি শব্দ করে।
স্থলপদ্মের তেকোনা
হলুদ পাতা
ঝরে পড়ল মিহি শব্দ করে ।
সূর্য তার রঙ বদলাল ।
আমি হাতের পাতায় খুঁজতে লাগলাম
দু বছর পরের সেই সোনার সকাল ,
'সে' আমার
সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে লাগল
ভাদ্রের দুপুরে ।
চিহ্ন
ছেলেটা হাঁটছিল ।
রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়াতেই
ফেলে আসা রাস্তায় পড়ে রইল
তার পায়ের ছাপগুলি ।
সামনে জেগে উঠল পরবর্তী পায়ের ছাপ
।
ছেলেটা পা চালাল ।
তখনই রাস্তায় ফুলেফেঁপে উঠল একটা
সমুদ্র ।
একটিমাত্র ঢেউ উঠল ।
যা সযত্নে তার জিহ্বায় মুছে
নিল সব জলছবি ।
যখনই একটি করে পা রাখে মাটিতে কেউ
তখনই একটি মাত্র ঢেউ এসে মুছে দেয়
তাকে ।
এভাবেই চিহ্নগুলি মুছে মুছে যায় ।
শিকার
যখন খাতার কাছে কলম নিয়ে এলে
কয়েকটি আর্তনাদ
জানলা দিয়ে
জিরাফের মত ঢুকে পড়ে গলা জড়িয়ে ধরে,
তখন সন্তানকে পোশাক পরাতে পরাতে
একটি লোহার বর্মের জন্য
মন উতলা হয়।
যখন বার বার ধোয়ার পরও
হাতে রক্তের দাগ লেগে থাকে
তখন আকাশের দিকে মুখ করেও
নীল রঙের আকাশ দেখা যায় না ।
একটা হরিণ
শিকারের ছবি ফুটে ওঠে
লালচে রঙের ।
সন্তান হারানোর মর্মান্তিক শব্দ
ঢুকে যায়
বাতাসের পরতে পরতে ।
খরা
বৃষ্টি নামছে না।
আকাশে চওড়া রোদ পোড়াচ্ছে ত্বক ।
ঘনকৃষ্ণ মেয়েটি সোজা হেঁটে
শহরের রাস্তায় নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাটের
ইটের জোগাড় দিচ্ছে।
ফ্ল্যাট সোজা উঠছে আকাশের
দিকে ।
মেয়েটির শরীর দুলছে না
মাদলের তালে ।
আকাশে তাই থমকে আছে মেঘ।
বৃষ্টি নামছে না।
সময়
মুহূর্ত মিলিয়ে যায় মুহূর্তের কোলে
,
অস্তমিত সূর্যালোকে খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র
যমুনার জলে । মুহূর্ত মিলিয়ে যায়
মুহূর্তের কোলে ।