জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
খরা
মাঠের ছাগলগুলোকে ডেকে বললুম,তোদের
তো
বেশ মজা মাঠ-ভর্তি এমন ঘাস দেখেছিস
কখনো?
ছাগলগুলো কৌতূহলী চোখ তুলে একবার
দেখলো
তারপর আবার লেগে গেল ঘাস খেতে
নিশ্চিন্ত মুখে ভয়হীন.....
কয়েক ঘন্টা পর ফেরার পথে দেখি এক
পশুব্যবসায়ী
হাতে বহুফাঁস দড়ি তাতে বাঁধা চেনা
কয়েকটি ছাগল
অনভ্যস্ত ভঙ্গিমা সকালের খুশিমুখ
বিকেলে রোদ আর
আশঙ্কায় দগ্ধ মলিন টানতে টানতে
চলেছে মানুষ
বাসস্ট্যান্ডের দিকে অহংকারী
হাসিমুখ বস্তুত তাদের
নধর শরীর খুবই দামি আর পুরোনো
মালিকের ঘরে যে
ভীষণ খরা.......
হেমন্ত নির্মোক -- ৩
ঘনিষ্ঠ আকাশ ডাকে নক্ষত্রমেলায়
মানুষের মেলা থেকে খানিকটা দূরে
প্রাতিস্বিক তাজমহলের উপর চাতালে
দ্বিতীয় শরীর ছুঁয়ে শিল্পীর হাত
ত্রিমাত্রিক রূপ পায় জ্যোতিষ্ক
চেহারা
আনন এঁকেছে কেউ গ্র্যানাইট ছাঁদে
দেহজুড়ে হাত নাড়ে কিংকর-টাচ
হিম এসে ঢেকে দেয় দ্বৈত শরীর
চিরস্থায়ী বর দিয়ে অক্রেয় স্থাপন
সার্থক যদি হয় হেমন্ত সাধন।
টান
অভ্যস্ত আঙুল টানে প্রিয় মেঘ চুল
অবিন্যস্ত সাজে বেপরোয়া ভাব
ঘোটকী ছন্দে বাঁধা অহংকারী গতি
দুর্নিবার কোনো এক অয়স্কান্ত টান
সহযাত্রা শুরু করে একদা অজেয়
গন্তব্য জানা নেই সামনে কুয়াশা
বিক্রীতপৌরুষ ছাপ
চিরক্রীতদাস......
জিজ্ঞাসা
আজকের আকাশ যেন সেকালের বিধবার
শাড়ি
আলগোছে লেগে আছে খানিকটা বিরহের
ছাপ।
যদিও পৌষের দিন তবু হিম বিনবিন
কুয়াশা ঘিরেছে বেশ
আমার বাগান সাদাফুলে ভরে আছে গাছ।
কারও কাছে দিয়েছি কি কথা ফিরে যাবো?
যদি যাই যাবো কোথা? পাবো
কাকে? যাওয়া কি সম্ভব?
তোমার জন্য -৩
তোমার জন্য পলাশবনে রঙের খেলা আগুন
আগুন
গন্ধে ভাসে সারাটা দিন
ফাগুনবেলা দিঘল বিকেল মনের উড়াল
দৃষ্টিসীমা
ছাড়িয়ে গিয়ে ঠিকানাহীন।
উড়ছে ধুলো পাতার বুকে উদোম বাতাস
টান মানে না
নিরুদ্দেশের গয়ংগচ্ছ দেয় ছুঁড়ে কোন
খালের দিকে
কেউ জানে না।
পলাশডালে পাখপাখালির খুনসুটিতে
মধুর ছোঁয়া
শব্দগুলো গান হয়ে যায়
পরাগ মেখে ঠোটের বরণ লালের পোঁচে
টকটকে
আর চোখ যে রাঙায়!
বুকের ভেতর স্বপ্নগুলো ব্যাঙের
ছাতা অসময়ে
ভেদ করেছে বুকের জমিন
হু হু ব্যথা পাঁজর কাঁপায়
শিনশিনিয়ে কসাইছুরি
খুব উদাসীন
বাসন্তী রং দিগন্তটা হঠাৎ কালো
চাদরে কে কোন
সে কেতু করলো বিলীন?
যে মুখ দেখে রামধনু গায় বাহার রাগে
সহজ খেয়াল
সে মুখটুকু কে লুকালো?
দু এক কথা শেষ করে পাই দানববধের
প্রাণের রসদ
জাগলে ভেতর বাহির জাগে লাগে আলো।
এমন কালো সবই আড়াল যায় না দেখা
কুজ্ঝটিকায়
ভালোবাসার আঁকিবুকি
ক্লান্ত ময়াল রাতের ঘোরে কুণ্ডলীতে
ঘুমিয়ে থাকা
শীতের ঘোরে পাতাঝরার তাপের আশায়।