রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

সুতনু হালদার


সুতনু হালদার

সকাল

প্রতিটা সকাল ঝাড়পোছ করেই বড় হয়ে যায়, কথা বলে আধো আধো, বিছানার পরিভাষা বুঝে নিয়ে ভেঙে ফ্যালে আড়ষ্টভাব; সকাল সকাল...

যৌবন প্রতিদিন খুঁজে নেয় পৃথিবীর জলন্ত গৃহকোণ;  পরিযায়ী কথাদের হাঁটাহাঁটি--শুধু হাঁটতে গেলেই লাগেনা গৃহকোণ, প্রকৃতিতাড়িত! পরাগ মিলন, দুহাত শূন্যে নিয়ে খুঁজে পাই মুঠোভরা শূন্যতাকে...

রাতের মলিনতাকে যৌনতার বায়বীয় স্পর্শ মাখিয়ে হেঁটে চলে প্রতিটা মুহূর্তকাল,  হাঁটছে সভ্যতার অন্তর্নিহিত ভালোবাসা একধরনের যৌনতার আমেজ নিয়ে

 মার্জিত রূপকের প্রত্যুষে যৌনগন্ধী চুরমার আবেগ
 আমার প্রত্যেকটা সকালকে হাতছানি দিয়ে ডাক দ্যায়

একএকটা ডাকহরকরা মুহূর্ত অনুভূতির ক্লিভেজকে রোদ মাখাতে মাখাতে বড় হতে থাকে, আমরাও বড় হই বিন্দুর সমান্তরালে, যাবতীয় ক্লেদ ধুতে ধুতে শিশুদের স্বপ্নে নিজেদের চিনে নিতে শিখি;

কুয়াশার আড়মোড়া ভেঙে ধুলোমাখা পথ পরিণত হতে হতে সহসা উন্নাসিক হয়ে পড়ে পরিখার বাঁধাহীন স্বপ্নের মায়াজাল প্রতিটা সকাল...





বৃষ্টি

মেয়েটির বুক বরাবর নিটোল জ্যোৎস্নার মতো দাগ ছিল! এক রহস্যঘন বিচ্ছুরণের গন্ধ আমাদের যাবতীয় সত্তায় মিশে আছে, মিশেছে অক্ষরের প্রতিটা পৌনঃপুনিকতায়...

মেঘের দুষ্টুমির সমস্ত জলজ আবেগ তোমার মতোই ক্যানভাস ছিঁড়ে আমাকে বন্য করে তোলে! কামার্ত শীৎকার বাতাসের আলিঙ্গনে নির্জনতা খোঁজে, দীর্ঘশ্বাসগুলো প্রকৃত যানবাহন না পেলে অচল হতে হতে স্তব্ধতাকেই ভালোবেসে ফ্যালে!

প্রতিটি বৃষ্টিকণায় লেগে থাকা উদ্ধত যুবতীর পীনোন্নত বুকের দুঃসাহসিক অভিযান আজও চাঁদের প্রৌঢ়ত্বে আকাশ এঁকে দ্যায় ; দু'চারটি অভিযোজন আয়ত্ত হয় বায়বীয় রূপে, আর আরক্ত চুম্বন ঝরে পড়ে খরস্রোতা নদী হয়ে মিষ্টি ঠোঁটে, ঘাড়ে, বক্ষবিভাজিকা থেকে যোনীভেদ করে সুতীব্র পিপাসায় ছুটে চলে মরীচিকার নিভৃত প্রদেশে...

অদম্য বালিয়াড়ি থেকে মরুদ্যান-
মায়াবী স্পর্শসুখের ইঙ্গিতে মাতোয়ারা হতে হতে পাখোয়াজ বাজায়,  প্রান্তরে ভেসে যায় প্রেতযোনি...

কখনো প্রেমিকার ঘনিষ্ট গন্ধ জমা রেখে ঘরে ফেরে উদ্বেলিত অঙ্কুরোদ্গম; লুকিয়ে রাখা নিষিদ্ধ লিপস্টিকের দাগ বহুরূপতাকে পরম আমেজে চুমু দ্যায় আর অব্যয়ীভাব সমাসের মতো চিরকাল চেটেপুটে খেতে গিয়ে মেঘের দুষ্টুমিতে ধরা দিয়ে ফ্যালে-- নতুনত্বে
               
                               অঝোর ধারায় আবার বৃষ্টি শুরু হয় পুরুষ আর প্রকৃতিতে...





প্রথম আলাপ

প্রথম আলাপের পর প্রতিটা গাছেরই পর্ণমোচন হয়

ফোনের রিংটোনের সেটিংস চেঞ্জ করে রাখার কৌশলের আডালে চলতে থাকে ইলশে গুড়ি

প্রতিটা অধ্যায়ে স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ স্বামী-স্ত্রীর মতো একত্রে সহবাস করে! কয়েকটা রঙচটা নক্ষত্রের গতিবিধি অনামিকা কিংবা মধ্যমার নিরুচ্চারিত স্বরে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে ওঠে...

ঈশান আর নৈঋতের কৌণিক সম্পর্ক পরস্পরের পরম্পরাকে আবর্ত কোণের চাহিদায় সম্পৃক্ত করবে বলে ছুটে চলে~

 বাতাসহীন উন্মাদনায়--

প্রশ্নের যৌক্তিক সমালোচনাকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই, সমস্ত টাইপোকে আজ থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হ'ল রজঃস্বলা শব্দের গতি নির্ধারণের

ঘুণধরা পলেস্তারার যাপন

নৈমিত্তিক কিছু বোধ কাজ করে রাতের অন্ধকারে!

প্রথম আলাপের পরে--
কবিতার বান্ধব যাঁরা, পাঠকের আড়ালে তাঁরাও কবিতার সালোকসংশ্লেষে মেতে ওঠেন...






ক্ষয়ে যাওয়া দুপুরের গন্ধ

নিজস্ব দুপুরগুলো বয়সের সাথে সাথে আস্তে আস্তে ক্ষয়ে যায়, যে নদী একান্তে মেঘের সাথে মিশে থাকত, সেই নদীই যেন মোহনায় অচেনা!

স্রোতের বদল হয়। অচেনা অক্ষর মক্ষীরানি হয়ে গুঞ্জন তোলে, রঙের ঘোর বর্ণালীকে পরিচিতি দিলেও গোপন অভিসারের কথা চেপে রাখে

অভিসারের প্রাগৈতিহাসিক গন্ধ আজও যথারীতি যুবতী হয়েই জ্যোৎস্নার আলোতে মমত্ব মিশিয়ে দুধ আর জলকে আলাদা করতে ক্রমান্বয়ে ব্যর্থ!

এরপরই চারকোল, ভুষাকালি-অঙ্গারের ছোঁয়াচে
প্রতিবিম্ব ঘিরে থেকে যাওয়া বৈষয়িক হীরের
স্বপ্নদোষের আস্ফালন...

শক্তির মহোৎসাহ ঢেকে যায় মুখোশের বাহুবলে-
জ্যামিতিক বিচূর্ণিত রাশি, শব্দ, জঙ্ঘার বিমূর্ত অনুভূতি, নাক্ষত্রিক যৌনরস মিশে যায় প্রেমের প্রমার অমর্ত্যে

তবুও মনের কার্নিশে লেগে থাকা জারজ প্রেমের বীমাগুলো প্রতি রবিবারে প্রিমিয়াম নিতে আসে, একা...

কোথাও যেন নিজস্ব নিঃস্বতাগুলো
রেখে গ্যাছে হস্তিনীর মতো আঁশটে যৌনগন্ধ






বেপরোয়া

নিছক কৌতূহলী  হয়ে মুহূর্তকে টইটম্বুর হতে দেখে প্রশ্ন করেছিলাম সেই কোন শৈশবে, ঝালাপালা দিনগুলোর মধ্যে প্রেমের আঁচড়ের দাগ মাখা মুহূর্ত

কোথাও মাংসাশী ভরবেগ পুড়ে খাঁক হতে থাকে, প্রেমিকার মতো জড়িয়ে থাকে সমস্ত শিহরণ...

নিদানকাল আস্তে আস্তে এগিয়ে যখন প্রায় মধ্যচ্ছদার কাছাকাছি, ঠিক তখনই নিকোটিন আর রক্তের প্রবল সহবাস! বিছানার লণ্ডভণ্ড সংলাপগুলো পুড়ে যাবার পরে সন্ন্যাসীর আমেজে রোদের শিৎকার শোনা যায়

অনেকেই হয়ত অলিন্দ থেকে নিলয়ের বারান্দাতে শিরা-উপশিরার স্ফুটনাঙ্ককে চুমুর মতো মসৃণতা দিয়ে ভালোবাসে, কিন্তু চুমুতে মিশে থাকা আগুনের ভ্রুণ কবিতার মতো পঙক্তির পর পঙক্তিতে অভিস্রবণে মেতে ওঠে...

এত কিছুর পরেও ভালোবাসার কুয়াশা জ্যোৎস্নার তরঙ্গদৈঘ্যে হিসেবের খসড়া মেলাতে মেলাতে একদিন গদ্যের মতো বেপরোয়া খোসা ছাড়িয়ে ইশারায় নাবিক হয়ে যায়।

মোহনায় মিশে যাওয়া স্রোতগুলো আসলে অ্যানাটমি বোঝে না!

তাই বোধহয় সমুদ্রের কলতানে নক্ষত্রের ব্যভিচার ধরা যায়...