রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

শাহরিয়ার সোহেল


শাহরিয়ার সোহেল

আত্মায় অনন্ত প্রেম

শহর জুড়ে নেমেছে গভীর অন্ধকার
সকল আত্মা পালিয়েছে নির্ভয়ে
ধূ-ধূ বালুচর শুধু মরীচিকা দিগন্ত জুড়ে
অন্ধকারের কালোতে গতি, গতিহীন-নিষ্পৃহ
আলোর ঘূর্ণনে গতি জাগবে তবু
আত্মাগুলো এসে যাবে ঠিক-ঠাক
নিরব যাতনায় স্তব্ধ ব্যথায়
জ্বলে পুড়ে ছারখার
আলো জাগবে মায়াবী নৌকায়








অদ্ভুত আঁধার

মৃত্যু পথ যাত্রী দেখতে
বেশ ভালো লাগে
যেভাবে দেখি
আমার এক ছোট ভাইকে
ক্রমাগত তার রক্ত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
ডাক্তার বলেছে লিউকোমিয়া

সে মরে যাচ্ছে
তার জন্য খোঁড়া হচ্ছে গহীণ কবর
হাসপাতালের শয্যায় আমার হাতে হাত রেখে
সে খুশীতে আত্মহারা
ভাইয়া এসেছে ভাইয়া
হলুদ বর্ণের চক্ষু আলুথালু শরীর
বিছানায় নিস্তেজ গতিহীন
শুধু বিবর্ণ এক হাসিমাখা মুখ
মরে যাচ্ছে সে ডুকরে ডুকরে
একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে

মাথার ভেতরে পশলা পশলা ঘূণ ঝরে পড়ে
ভেঙে পড়ছে আকাশ বিশ্বজগৎ
মনে হয় যেন হারিয়ে যাচ্ছি নিজেই
সুদূর মেঘের পর মেঘ
কাশফুল তৃণগুচ্ছ ফ্যাকাশে আকাশ

তবু হারাইনি আমি অদ্যবধি
রুটিনমাফিক মিলিত হই শয্যায়
নারীর উদ্যমিত বুক শিহরণ তোলে ধমনীতে
কুঁকড়ে উঠি হারিয়ে যাই নারী থেকে প্রকৃতিতে
ক্ষুধা তৃষ্ণা কাম কিছুই কমেনি আমার
বরং দুরন্ত থেকে পেখমযুক্ত হরিণী

কুয়াশা দেখি ধোঁয়াময় অদ্ভুত আঁধার
বাস্তব থেকে এক অচেনা নগরীতে
গুচ্ছময় গোলাপ প্রবাহিত ঝর্ণাধারা
সবুজ বৃক্ষের পলিময় আস্তরণ
পাগল করে ছুটে যাওয়া অদম্য বাতাস
স্মৃতি থেকে বিস্মৃতি
চেনা নগরী থেকে বহুদূরে
অচেনা অন্ধকারে নোঙ্গর ফেলার শব্দ শোনা যায়
হয়ত জাগা হয়নি আর কখনো
সেই সব চির চেনা মানুষের মাঝে








আত্মপ্রতিকৃতি

বরফ পড়া এক রাতে
ঠিক বারটায়
প্রেমিক প্রেমিকা গাড়ি নিয়ে বের হলো
ক্রিসমাস ডে এর আনন্দ উপভোগে
বরফ পড়ছে বৃষ্টির মতো
বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দেবার পর
তারা দেখতে পেল এক পরিত্যক্ত বাড়ি
একাকী দাঁড়িয়ে আছে নি:সঙ্গ সম্রাটের মতো
গাড়ি থামিয়ে ঢুকে পড়ল বাড়িতে
দেখতে পেল বেশ কটি কক্ষ
যে দরজায় খোলে
একই রকম ঘর
দুজনে দুদিকে গিয়ে হারিয়ে ফেলল দুজনার
অদ্ভূত শিহরণে দুজনই শিহরিত আতঙ্কিত
প্রেমিকা দেখল
তারই মতো আর একজন নারী অপেক্ষায় রত
প্রেমিকও দেখল
তারই মতো এক পুরুষ প্রতীক্ষমান
সেই অদ্ভূত নারী ও পুরুষ
হত্যা করছে তাদের
প্রেমিক প্রেমিকার শরীরে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ
আর একটি দরজা খুলে
কোন ক্রমে তারা মিলিত হলো পরষ্পরে
সেই কক্ষটির মেঝের নিচে তাকিয়ে
তাদের শরীরের লোমকূপগুলো অনড় হয়ে ওঠে
মেঝের নিচে গুপ্ত ফাঁকা জায়গায়
পড়ে আছে প্রেমিক-প্রেমিকার মৃত লাশ
কোন ক্রমে বাইরের দরজাটি খুলে
তারা বেরিয়ে আসে দিগন্ত বিস্তৃত আঙ্গিনায়
তাদের শরীরে কোন রক্তের দাগ নেই
সময়-রাত ঠিক বারটা
তারা গাড়িতে উঠে পুণরায় যাত্রা শুরু করে
বরফ পড়ছে বিগলিত বৃষ্টির ন্যায়








আদিগন্ত অভিশাপ

আদিগন্ত নেমে আসছে অভিশাপ
প্রবল বর্ষণের মতো অবিরল

এক মা প্রতি রাতে
স্বহস্তে সাজিয়ে দেন
তার মধ্যবয়সী মেয়েকে
ফিতে বেঁধে দেন চুলে
ঠোঁটে লাগিয়ে দেন গাঢ় লিপিস্টিক

এবং তারপর
খুব সকালে তাকে ফিরিয়ে আনেন ঘরে








আমি কার সাধের শিকার

যে নষ্টতে আলো দেখি
সে আলোতে অন্ধ হয়ে যাই
পিপাসার স্রোত জাগে বুকের নদীতে
বুকের সবুজ মাটি পুড়ে পুড়ে ক্রমশ বধির
হলুদ কষ্টের ফুল ফোটে বিষণ্ন ক্রন্দনে
পাপের পালক উঁকি মারে নিজস্ব নির্মম নগ্নতায়
লবণাক্ত জারজ সময়ে আমি কার সাধের শিকার
পাহাড়ের স্রোত জমে অদৃশ্য অগ্নির অসহ্য অভাবে