অশোক রায়
এক
নিয়মের বাইরে
আকাশটা ঝুম হয়ে আছে
রাজ্যের কালো মেঘ জড়ো করে
ভাবলাম ভাসাবে এবার এতদিনে
যা গরমটা গেল সেই ফাল্গুন থেকে
খোলায় ভাজা বাদাম খেতে খেতে
জামার বোতামটা খুলে একটু শ্বাস
নিলেম
কোথায় কি, সূর্যের
আলো পথ আটকালো
নিকষ মেঘগুলো ঝোড়ো বাতাসে উড়ে গেল
যেমন তোমার রাগ রাগিণী ঝঙ্কার দেয়
যেমন তোমার শরীর ফুলে ওঠে বর্ষায়
যেমন ফাঁক অদৃশ্য দেওয়াল বিজলির
চমকে
তেমনি কিছুই কিন্তু ঘটছে না আজ
বিষ মুছে দিয়েছে ঘন আবেগ
তোমার মুখ দিয়ে ধ্বংসের প্রেত
আমাকে টেনে নিয়ে যায় কিলিমাঞ্জারোর
গহ্বর
আর কোনোদিন ফিরব না
নীল আকাশের নীচে সবুজ দ্বীপে
আর কোনোদিন ছোঁবো না তোমাকে……।।
দুই
ওয়াক্স মিউজিয়ম
দেখছি তোমাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছি
আর সেলফি তুলে যাচ্ছি
হলুদ কিংবা নীল শাড়ি সালোয়ার অথবা
পালাজোয়
তুমি হাসছো আর গলে গলে ঝর্ণা
পাহাড়ের শিরা বেয়ে আমি ভেসে যাই
প্লাবনে
আবার উঠে আসি তোমার চিবুক ধরে
চোখের পাতায় টলটল করে ভাষার
দিক্বিদিক
তোমার স্বচ্ছ শরীরে এপার ওপার দেখা
যায়
আমাকে নিয়ে তুমি খেলা কর আর
আমি
নিমীলিত চোখে হাসি ডান থেকে বাঁ
কান বিস্তৃত
ভ্যাব্লাটা আড়মোড়া ভাঙ্গতেও ভুলে
যায়………।।
তিন
বাকি ছিল
বাকি ছিল কি কিছু
ঘামে ভেজা শরীর লেপ্টে
মাঝরাতে গান শোনা
মাংসের টুকরো দাঁতে নিয়ে
যৌবনটাকে চেনা
আলেযার বুকে হামলে পড়ে
শ্বাস প্রশ্বাস ডিঙিয়ে
দুরন্ত নদীর পানে ধাওয়া
তুমি আছ কি
বাকি ছিল কি
ঠোঁটের ওপরে শিশিরের ঘাম জমা
পরতে পরতে ভালো লাগার জাল বোনা
সব শেষ হলে আগুনে হাওয়া
বাকি ছিল আমাকে বেয়ে
আগুনের তান্ডব খেলা
বাকি ছিল শ্মশানে নাভি খুঁজে ফেরা
বাকি আছে তোমাকে বলার
শিশির আগুন পিচ্ছিল গতি ধারা
আলো অন্ধকারে নীরব কথার
পথচলা......
চার
পৃথিবী তোমাকে চাই
খুব দ্রুতই অনেক কিছু বদলে যাচ্ছে
প্রকৃতি প্রাণ দীন থেকে দীনতর
মানুষের লালসার ভোগে
যন্ত্রণায় কুঁকড়ে শামুকের খোলের
ভেতর
কিন্তু বিবর্তনময় পৃথিবীতে
থেমে থেকলে মরতে হবে
তাই খোল থেকে ঝাঁপ দাও উর্বরা
প্যারাসুটে ভর করে নামো
ফসিল হয়ে থাকা উপত্যকায়
বরফ জমলে এগোবে হিমবাহ দুরন্ত নদী
বীজ থেকে শস্য ঘুম থেকে জাগরণ
মৃত্যুর মধ্যে অঙ্কুরিত যৌবন
বেদনার কুসুম নতুন জীবন
আগে বাঁচবে পৃথিবী তারপর তুমি।।
পাঁচ
ফুটে আছো
অনেক মুখের ভিড়ে
পাখিদের কলকল নীড়ে
মল ফ্যাশনের আলোক বৃত্তে
হারিয়ে গেছ কি তুমি
রয়েছি আশা নিরাশার দোলে
একবার যাকে চেনা হয়
বারবার সেই উজ্জ্বলময়
চিরস্থায়ী রেখাপাত করে অন্তরে
মিছিলে মিশে আছে সে
ছবি তার গাঁথা থাকে ক্যামেরার
স্মৃতিতে
ট্রেনের জানলায় অফিসের
কামরায় ফেবুর ইন্দ্রজালে
আমি দেখি একঝাঁক তোমাকে একদিন প্রতিদিন
উচ্ছল উদ্দাম অবিরাম কখনো আনমন
সবখানেতে ফুটে আছো একটি করে তুমি।।
গুগ্ল সফর
গুগল ম্যাপ দেখে চলতে চলতে
কখন যে ঢুকে গেছি জঙ্গলে
টের পাইনি বাঁশবনে কখন গড়িয়েছে
দুপুর
নিঃস্তব্ধতা ঘিরে একটানা ঝিঝির সুর
ডাইনে বাঁয়ে পথ নেই সোজা মা ভবানী
হাতি হরিণের পাল ইতস্ততঃ সবুজ
বনানী
গহন বনের ভেতর একসময় সন্ধ্যা নামে
আলো আঁধারেতে ভীষণের হাতছানি ক্রমে
ক্ষুধিত লেপার্ড রাস্তা পেরোয় পলকে
আমরা ভালরকম জড়িয়ে গুগল
ট্র্যাকে
পাকা সড়ক কাঁচা রাস্তার গেড়োয় সব
খতম
শুকনো নদীর খাত এলোমেলো নিয়ে যায়
জাহান্নম
মোবাইল কাজ করেনা টাওয়ার বাড়ন্ত
ভয়ানক আতঙ্কে দগ্ধ আমরা জীবন্ত
অনেক রাত তখন একটা গাছের উঁচু ডাল
সহায়হীন আমরা সকলে রাত কাটাই চার
পল
তারা আর জোনাকির সাথে শ্বাপদের চোখ
ফেউ ডেকে চলে জানিনা কখন হয়েছে ভোর
দুটি তির কোথা থেকে এসে বেঁধে
ঠিকানা লেখা একফালি কাগজে.........।।