মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

শেখ সামসুল হক


শেখ সামসুল হক

সমর্থন

বাতাসের নাটুয়া তরঙ্গে নিকষ হয়ে যখন
ক্ষুধার নগ্ন হাত বাড়ালে আমার শূন্য পকেটে
আর আকাশ নীহার আসঙ্গে উদাস হয়ে তবু
অকুণ্ঠ সমর্থন চাইলে আমার শুধু আমার

এই তিরিশ খোয়ানো বসন্তের মাঠে ঘাটে তাই
নীরাজনে অসভ্য আসার যেন মকরন্দ খুঁজে
বৈজয়িক সুরে নীলাম্ভু নীলিমা একাই হারাতে
চায় আপনার যা কিছু নির্মুক্ত বাতায়ন পথে

অবাধ চাঁদের লৌকিক নির্মাল্য ছড়িয়ে
যাবার এতিম প্রহর আজকে দুরন্ত দুর্মর
নির্বিকল্প ইচ্ছার আহত পারাবত উড়ে এসে
ছিন্নভিন্ন বুকের মিনারে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে

সারাদিন দুঃখের রজনী স্বজনী বিহীন
মহানদী নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে জানে না
একবারও ভাবতে চায় না অতীত কথা কিছু
অনিয়মের আগাছা পেছনে সেদিকে নেই কেউ।






থেকে যাবো

জীবনকে জীবন হিসেবে দেখার সময় হলো না যে
শুধু কাজ আর কাজ নিয়ে যখন তখন ছুটে চলা
যৌবনের বিশাল বিজয় আজকে কেবল পরাজয়ে
নতজানু দেখছি সকাল বিকাল নিকট অনুক্ষণ

আসল নকল বুঝে ওঠা হয়নি তাইতো এখনও
দারুণ দুঃখের জয়যাত্রা যে আমাকে নিয়ে টানাটানি
করার সাহস দেখাতে খুবই খুশী এই সারা বেলা
নেই আছে সামনে সেদিকে তাকিয়ে কি হবে হতে পারে
তারচেয়ে আমার ছিলনা কেউ এই দেশে সেই ভালো
বলবো ছিলাম বড়ই একা আছি একাকি থেকে যাবো।






ভিড় নেই

চায়ের টেবিলে এখন ভিড় নেই তেমন
বন্ধুরা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত
বাংলা বাজারে যাবার কথা মনে আসে না
ফকিরাপুলের দারুণ ভিড় তীর পেরিয়ে
এদিক ওদিক হেঁটেও সুখ চেয়ে পাইনে
চায়ের টেবিলে এখন ভিড় নেই মোটেও!
দুর্বার যৌবন ঝিমায় একলা বারে বসে
পরিচিত ভূবন কুয়াশা উকুন শকুন।






দুই তীর

তেল কয়লা সোনার খনির উপর নয়
নয় ভালোবাসার অনেক পাওয়ার না পাওয়া
অন্য কোন হামলা হুমকির উপর নয়
দেশ আমার বাংলাদেশ জলের উপর
আজ ভাসছে কাঁদছে অবিরাম রাত্রিদিন
মানুষের ঘরের চালে মগ ডালে নৌকায়
নিয়েছে ঠাঁই বাঁচার শেষ লড়াই করছে
ঢাকা নগরবাসী যারা কখনো বানভাসি
দেখিনি তারাও আজ বান ভাসা নাগরিক
ছুটছে এদিক ওদিক খুঁজছে উঁচুতলা
কামরাঙ্গীর চর থেকে নিখোঁজ ত্রাণকর্মী
তাদের দুঃখ এখন আমাকে নিয়ে ব্যস্ত
নারিন্দা বসু বাজারের আত্মহত্যাকারী
দুঃখ জানি আমাকে আর ছোঁবে না অন্তত:
আজকের এইযে বান বন্যার দিনমানে
ডিক্রির চরে ঘরের চালে সাপ জোঁক ব্যাঙ
গরু ছাগল মানুষের সহাবস্থান কালে
বানে ভাসা এক কাল নাগ সঙ্গীর সন্ধানে
ডুবো ডুবো ঘরের চালে সোজা উঠতে গিয়ে
ঘুমন্ত কিশোরীর পায়ের ছোঁয়াঘাতে
ঘাড় বাকিয়ে ফণা উঁচিয়ে হানে যে ছোঁবল 
সেই কিশোরীর লাশ ভেসে যেতে দেখা দেখি
চল্লিশ বসন্ত বিদায়ী একজন মানুষ নেড়ে চেড়ে দেখছে
হিমালয় থেকে সুন্দর বন হঠাৎ বাংলাদেশ
তারপর বলা হয়েছে পদ্মার কথা -
হোয়াংহো একদা চীনের দুঃখ ছিল
এখন সুখ ছড়ায় একশ কোটি মানুষের মনে
এই পদ্মা এই গঙ্গা আর কত দিন
দুঃখের আহাজারি বয়ে আনবে দশ কোটি ঘরে
পাহাড়ের ঢল চাইনে বানের জল চাইনে
প্রকৃতির কীর্তিনাশা রূপ রং রস চাইনে
কেন বন্যা কে দেয় বন্যা কিসের বন্যা
বন্যার দুঃখ বুকে অস্থির বিচঞ্চল
পদ্মা মেঘনা যমুনার ক্লান্ত শ্রান্ত দুই তীর।






সেই হাত

হাত বাড়ালে হাত থাকে না হাতে
সেই হাতের চেয়ে আদরে হাত
ডানে বায়ে ধারে কাছে দেখিনাতো
এক যাদুর ছোঁয়া লেপ্টে আছে
সেই হাতে তার হাতে যার কথা
কেউ ভাবে না কেউ বুঝে না মোটে
তবু সে আছে দূর সুদূরে আছে
পড়ে আছে মরে যেতে পারেনি তো
সাধ তার নেই কোন অবশেষ
ঝরা বকুলের গান তার প্রাণ।