রিয়া ভট্টাচার্য
সময়ের খেয়ালনামা
সময়ের স্রোতে ভেসে চলা অসীম
খেয়ালনামা...
পাততাড়ি গুটায় নীলচে পথের বাঁকে,
রামধনু রঙে মিশে যায় আহিরভৈরব---
ঝরা শালবনে উদাসীন কেকা ডাকে।
পাহাড়ি পথের রুক্ষ আবেদনে...
দিন বদলায় কালের জিয়নকাঠি,
একলা আকাশ কান্না লুকোয় শেষে;
ঠিকানাহারা অচীন উড়োচিঠি।
নিবিড় যত ফন্দিফিকির শেষে....
হাল ছেড়ে দেয় ব্যার্থ দিনমণি,
সুখপাখীদের ডানায় ভাসা রোদ্দুরে;
নিগূঢ় কোনো প্রতিবাদের হাতছানি।
তোমার কলম কান্না ঝরায় রাতে...
আমার কলম নীরব অভিমানী,
দিন বদলানো সময়ের সাঁকো বেয়ে;
একলাটি হেসে এগিয়ে যেতে জানি।
কখনো নিঠুর পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে...
দেখো কতকটা সবুজ লুকিয়ে আছে,
ঢেকে দিও তাকে আকাশী চাদর তলে;
অভিমানীরা দেখেই ফেলে পাছে।।
আতশকাঁচে অনুভূতিরা
খেয়ালের আতশকাঁচ ঝাপসা হয়েছে
বর্ষাজলে....
পোড়াচাঁদের জোছনায় বেয়ে পড়ছে কলঙ্ক,
হতাশার সিগন্যালে থালা বাজিয়ে ভিক্ষে
করছে বিধাতা;
মোহময়ী আরশিভাঙা একটা নিঠুর গল্প।
নিস্তরঙ্গ তটিনীবুকে জাল ফেলে চলে
সভ্যতা....
অনুভূতিস্রোত মাছ হয়ে মাঝেমাঝে ঘাই
মারে তাতে,
জটিল বাসনারা কুক ছেড়ে কাঁদে সময়ের
দরজায়;
নিষ্প্রাণ প্রেম শুক্রাণুমালা
ছড়িয়ে দেয় বিছানাতে।
ভুখা পেটে গেয়ে কীর্তন -
কাওয়ালি...
ঠিক কতটুকু ভাত জোটাতে পেরেছ অন্ধ
নগরবাসী,
বিবেকের রোষে পুড়ে হও ছাই প্রতিপলে;
আপন কর্মদোষে আপনারে করে দোষী।
উদাসীন স্মৃতির আস্তরণতলে
ঘুমিয়েছ....
ছিনিয়ে নিয়েছ ইবলিশের পাপ ' কালের খোয়াবনামা,
মেকি প্রেমের দরজায় হেঁকে ফিরেছ
আবেগ ;
রামধনুকের গায়ে পরিয়ে দিয়েছ
নির্লিপ্তির কালো জামা।
তোমার আকাশে ধূসর মেঘের
আকুলিবিকুলি....
ভাবনার জটে ফেঁসে হাঁসফাস করে
জীবনকাল,
ধর্ম সমাজনীতির দাড়িপাল্লায় বিকিয়ে
মূল্যবোধ ;
কঠিন পাঁজরতলে মনের মুখোশী চাল।
দিন বদলানো হিসেবনিকেশে...
কল্পনাশ্রয়ী কত বিপ্লবী আগুনবাড়ি,
আদপে সবই ক্লান্ত মনের খেয়াল;
আখের গুছিয়ে উড়ে যাওয়া কাটাঘুড়ি।।
মেকি সভ্যতার প্রলাপ
কান্নারা আজ মিশেছে অনন্ত
ব্লাকহোলের দেশে...
অন্ধকার মুখে পুরে কাশছে স্থবির
মানবতা,
শতেক কৌশল শেষে হাঁফায় মেকী
সভ্যতার চাটুকার '
মুখোশ খুলে বেরিয়ে পড়ে কুটিল দেঁতো
হাসি,
শব্দগুলো কাফের সেজে মিছিল করে....
গনগনে মশাল জ্বালে মানবতার মৃত
রাস্তায়,
বেবাক শত নিয়মগুচ্ছ পুড়িয়ে মারে
আবেগ '
আলবোলার নলে ভরে ফেলে উদ্বায়ী
পারদসেতু,
পৈশাচিক উল্লাসে বুভুক্ষু খুঁটে
খায় আত্মশব ----
চিবুক বেয়ে গড়িয়ে আসা নোনাজল চেটে ;
বাহারি তেষ্টা মেটায় বুদ্ধি বেচা
তোতা,
ক্যামেরার বুমে ব্যবচ্ছেদ হয়
রক্তাক্ত যোনির....
ব্যার্থ সংলাপের আতর গুঁজে কানে;
ঘুমিয়ে পড়ে মিথ্যে অভিমানী।।
আপেক্ষিকতার কালবেলা
বুক পোড়ানো কিছু গল্পগাথা....
আলগোছে শুয়ে থাকে বোবা সড়কের বাঁকে,
বৃষ্টিজলে ধুয়ে যায় আপেক্ষিক
ক্লান্তির জন্মদাগ '
মেটাতে পারেনা কলঙ্কসেতুর মরচেপড়া
ইতিহাস ---
আজন্মকালীন ব্যার্থ সোহাগনামায়
মিশিয়ে....
এক ঢোঁকে পান করে গম্ভীরা জগদ্দল,
মেঘমালিকার দরবারে বসে মিথ্যে
প্রেমের হাট ;
আরোগ্যতায় মুড়িয়ে রাখে কঠিন মনের
বেসাতি,
কিলোদরে বিক্রি হয় জায়নামাজ
বিছিয়ে।
মিথ্যা ধর্মের আস্তরণের নীচে
শুকিয়ে মরে মানবতা,
আকাশকুসুম কল্পনায় নেমে আসে রাবণের
পুষ্পকরথ----
গুঁড়িয়ে দিয়ে বোধপ্রাচীর হরণ করে
মনুষ্যত্ব,
দলা পাকিয়ে তিলজল ছড়ায়
ফল্গুতীরে....
দূষিত বিদ্বেষবাষ্পে হাঁকপাঁক করে
ফুসফুস,
শিরা - উপশিরায় উল বুনে চলে মূঢ়তা
----
কালের গর্ভে এভাবেই তলিয়ে যায়
সম্পর্কগাছ;
আপেক্ষিকতা দোষে দুষ্ট কিছু
সীমাহীন অসহায়ত্ব '
আরো ; হয়ত
অনেক কিছু।।
মিথ্যে আবেগের কুয়াশানামা
মিথ্যে দেশের সোহাগনামার হাসি....
ব্যস্ত শহরের বুকে কুয়াশা নামায়
শেষে,
নিয়ন আলোর সময় থমকে দাঁড়ায়...
এক উপেক্ষিতাকে একলা ভালোবেসে।
ক্লান্ত তারার ফুরিয়ে আসা রোদে...
ঝিলমিল করে কাঁচপোকার কাটা ডানা,
খেয়ালী মন কান্না মাখে রাতে;
স্তব্ধশোকে আঁধারিয়া আলপনা।
কঠিন যত মিথ্যে তবিলদারি...
বৃষ্টি হয়ে আকাশ থেকে ঝরে,
খোদার খিদমতে যত ব্যার্থ প্রেমিক
মন;
চিতাকাঠ সেজে শব্দ করে পোড়ে।
উদাসীন যত রুদ্ধশোকের পরে....
মায়াঘোর ছড়ায় জোছন চাঁদের হাসি,
একলা মেয়ে থমকে দাঁড়ায় চৌমাথায়;
মিথ্যেকে তবু সত্যি ভালোবাসি।।