মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

দীপ্তনীল ব্যানারজী


দীপ্তনীল ব্যানারজী

এভাবেও ভালোবাসা যায়

জমানো ভাললাগা আর অভিমানগুলোর যত্নে বোনা
আবরনের একটা সুতোও আর অবশিষ্ট থাকেনি।
না চাইতেও আমাতে উপগত হয়েছ তুমি।
প্রেমের দিবসে গোলাপ, জন্মদিনে যত্নে
বানানো পায়সান্ন তুমি নিয়েছ চেটেপুটে কিন্তু
কুণ্ঠার ধুসরতায় ভারী করে তুলেছ পরিবেশ। 
সাতটা জন্ম ধরে মাঝরাতে তোমার ব্যস্ত মুঠোফোন
আমায় শান্তির ঘুম দিয়েছে আর ব্যস্ত রেখেছে তোমাকে
গজিয়ে ওঠা মাকড়সার জালের থেকে কারন খুঁজে আনতে।
তবু প্রত্যেক বসন্তোৎসবে রাঙিয়ে দিয়ে যাই তোমায়
আর তুমি নিজের শরীরে মনে ধারন কর সেই রঙ।
জিজ্ঞেস করা হয়নি মাঝরাতে কে থাকে মুঠোফোনের ওপাশে
কার শরীরের উত্তাপ এই অসময়ে জ্বর নিয়ে এলো।
জানাতে গিয়েও থমকে গেছ, প্রেমিক হিসেবে মেলাতে ব্যর্থ।
সাতটা জন্ম ভালবেসেও জানা হলনা তোমার প্রেমিক আছে?
যদি থাকে। মন শক্ত কর। প্রস্তুত হও তাকে বিদায় দেবার।
তোমার প্রেমে সে ভিখারী হতে পারে, আমার দয়ায় নয়। 
  






অস্তিত্ব

হাতের আঙ্গুলে বেড়ে ওঠাওই নখের
মতই তোমার জীবনে জড়িয়ে আছি আমি।
পরম যত্নে লালন করে আকার দিয়েছ
মনের মত করে রঙ্গিন করে তুলেছ আমায়।
দারুণ চিন্তা আর হতাশায় জর্জরিত হয়ে
ক্ষতবিক্ষত করেছ আমাকে, আর তোমার দুদণ্ড
নিশ্চিন্ততার বিনিময়ে মেনে নিয়েছি এই
ব্যভিচারী ক্ষয়িষ্ণুতার পৌনপনিক দাসত্ব।
শ্বাপদাক্রান্ত, একাকী নিঃসঙ্গ রাতে হঠাৎ।
আমার আনাড়ি তীক্ষ্ণতা আগলে রেখেছে তোমায়।
মাটির চার ফুট নীচে অনন্ত শয্যায় যখন
নিজের গায়ের মাংসও পচে গলে ছেড়ে গেছে,
অবিকৃত আমি পূতিগন্ধ উপেক্ষা করে তোমার পাশেই।

তবু দৈবাৎ অসাবধানতায় নিজের আঁচড় ছেড়ে গেলে
প্রতিশোধে আমায় ভেঙ্গে খণ্ড খণ্ড করেছ পরম আশ্লেষে  
যদিও উপড়ে ফেলার অক্ষমতা ভেংচি কেটেছে তখনো।
স্বার্থপরতা জানে সে যন্ত্রণা তোমার সহ্যের অতীত।







কবিতার মনখারাপ না মনখারাপের কবিতা

কবিতার মনখারাপ না মনখারাপের কবিতা
একটা আস্ত দিনের যে সময়ে গোলাপি মিলতে চায় নীলে
বা নীল মিশে যায় ঘন কালো রঙে
সেই ক্ষণে মনের প্রসব যন্ত্রণার চীৎকার এ
কিছু ছেঁড়া কথা পরিণতি পায়, কবিতায়।

কোনও পর্ণমোচী আলসে দুপুরে নিঃসঙ্গ চিলেকোঠায়
বা অন্তর প্রান্তর এক করে কোন শ্রাবন সন্ধ্যার অবিরাম বৃষ্টি
সহবাসে ছন্দ, ভাষা আর আত্মার মিল; নতুন সৃষ্টি।

শুধু না পাওয়া আর না মেটার আক্ষেপ এ থেকে যাওয়া,
আছে আরও কিছু; ধর্ম, রাজনীতি, শ্রমিকের খিদে
নাহলে বেশ্যার যোনিদ্বার, সামান্যই দামী।

তবু, আয়না ঔজ্জ্বল্য হারায় রোজকার বাঁচায়
কলসী হাঁড়ি সাজিয়ে ছোটো নদী ধরে বংশী
হাটে চলে গেছে বহুদিন, আর ফেরা হয়নি।
রোজের আঁচলে মোছা ঘাম বা কী বোর্ডের একঘেয়ে টকটক শব্দ
এখানে জায়গা হয়না, না বাড়ালে স্লিপিং পিল এর বিক্রী।
ধর্ষণ করাই যায় যখন ইচ্ছে, যদি ধর্ষিতার সম্মতি থাকে
আর মুখে হাসি থাকে পরদিন সকালে।

তবু তা থেকে কবিতা জন্মালে প্রকাশক সন্দিহান
বলে ওঠে এ বই আপনার চলবে তো?”
আর তাই না পাওয়ার হতাশাই রয়ে গেছে সাথে
হয়তো কখনো তা হয়েছে সোচ্চার প্রতিবাদ।
তবু আজ কাল পরশুর থেমে থাকা রোজ এ
দূরত্ব বেড়ে চলে জীবনের থেকে বাজার কে দ্যাখা যায় অনেক স্পষ্ট।








প্রাক্তনকে লেখা চিঠি

সময় থাকুক আলোকবর্ষ দূরে,
ভালোবেসে শুধু মুহূর্তেরাই দামী।
দখলদারি ফলানোর খেলা ছেড়ে,
দূর থেকে শুধু একটুকু ছুঁয়ে থামি।
তোমার প্রেমিক নগ্ন করেছে তোমায়,
তুমিও খুঁজেছ আদিম রিপুর সুখ।
আলো নিভিয়ে আঁধার এনেছি আমি,
জেনে তোমার লজ্জা লুকোতেই উন্মুখ। 
কথা না রাখার দোষ নিও না প্রিয়া,
চুক্তি করোনি দলিল দস্তাবেজে।
তাই চোখে অনুপস্থিত একফোঁটা জল ছিল,
ছেড়ে গেছ যবে নিজের মালিক নিজে।
তবু জাতিস্মরের নাছোড়বান্দা জেদে,
ফেলে আসা ক্ষণ কুড়িয়ে চলেছি একা।
সিগারেট হয়ে ধোঁয়াতে উড়িয়ে দেবো,
টের পাবে ঠিক নাও যদি হয় দেখা। 
পাটিগনিত টা একবার খুলে দেখো,
লাভের খাতায় জমল কিছু, না ফাঁকা।
শুন্যই পাবে চুমুর দিব্যি প্রিয়া,
শিখে নাও বাঁচা আমার মতোই একা। 








রোদ্দুরের দাগ

অন্ধকার ছাপাখানার থেকে প্রসারিত এখন জগত টা,
স্বপ্ন কখনো রোদ্দুর হতে চায়নি।
তবু রোদের দাগ টা ছোটবেলা জুড়েই ছিল-
বাড়ির সামনের পুকুর পার করে দেখা বারান্দা টা
আর সেই বারান্দায় এসে পরা হলদে একটা রোদ  
হাফ প্যান্টে জামা ঢুকিয়ে পুরুষালী হওয়ার চেষ্টা
সদ্য গায়ে ওঠা শাড়ির আঁচলের ভাঁজে।

দুপুরের সাথে বারান্দা বেয়ে উঠে আসা
রোদের দাগ বলে দিত সময় কটা,
কোন ঋতু, আর কোন ধুসর দুপুরে
ঝাপসা হয়ে যাওয়া দাগ টা একাকার করে দিত
একান্ত নিজস্ব নোনতা আর আকাশের মিষ্টি জল।
মেঘলা বিকেলের সোঁদা গন্ধে
নাস্তিক ছেলেটাও ভীষণ ভাবে ঈশ্বর বিশ্বাসী।
 অস্ফুট আকুতি; “বেরোতে দাও, দেখতে দাও একবার
দোতলার ছাদের সেই খোলা চুল আর অনুরুপ প্রতীক্ষা।
কি ভীষণ স্বপ্নিল বাস্তব। প্রথম ঋতুস্রাব এ ভেজা
মেয়েটার মতই অজানা আশঙ্কায় অস্থির।

আজ পঁচিশ বছর পর সামনের বাড়ি আছে
দোতলার ছাদ আছে, নিপুণ অঙ্কের হিসেবেতে ফাঁকা।
আর আছে সেই সামনের একফালি বারান্দা,
কংক্রিট জঙ্গলে রোদ ছাড়া বেহিসাবি একা