মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

সামসুন্নাহার ফারুক


সামসুন্নাহার ফারুক

মুখর শ্রাবণে

খোঁপায় জড়ানো গাজরার মালা
কপালে দোপাটি টিপ
কপোলে কি দিলে লজ্জায় মরি
বুক করে ঢিপ ঢিপ
কি জানি কখন কে দেখে ফেলে
ছেড়ে দাও তাড়াতাড়ি
বুকের ভিতর মুখ গুজে বলি
সব তাতে বাড়াবাড়ি
বৃষ্টির ছাঁটে শিহরিত মন
পেখম তুলে যে নাচে
ঘন বর্ষণ মুখর শ্রাবণ
দ্রিমিকি দ্রিমিকি বাজে। 








আমি কবিতা হয়ে যাই

অমর করে তাকালে
আমি কবিতা হয়ে যাই
শমিত আগুনে পুড়ি
স্মৃতির পসরা সাজিয়ে
রাত জেগে জেগে লিখি
লিখি প্রেম লিখি ভালোবাসা
সুনিবিড় সান্নিধ্য মুখোমুখি
নৈঃশব্দের উচ্চারণে আঁকি
সমর্পিত হৃদয়ের নিখুঁত আলপনা
উষ্ণতার ইন্দ্রজাল মদির সম্মোহন
প্রতীক্ষার ফ্রেমে জলরঙা ছবি
প্রানবন্ত বৈকালিক আড্ডায়
চিত্তহারী হৃদয়ের সৃজনী আভায়
তরঙ্গায়িত সুখ আছড়ে পড়ে
তুমুল তীব্রতায়

দারুণ অগ্নিময় ক্ষণে নামে বর্ষণ
শুনি জীবনের কলধ্বনি
ভিতরে তোলপাড় উৎসব আয়োজন
সিক্ত হই তুমি আমি
আমরা দুজন
ধূমায়িত কফির পেয়ালায়
চোখে চোখে রেখে অমন তাকালে
ঘোর অমাবশ্যাতেও পূর্ণিমা ফোটে
আমি মনোময় কবিতা হয়ে যাই।







লীলাবতী খোয়াব

মৌণ সোনাঝরা জীবন্ত সুখ ছুঁয়ে
মনটা তখন যুবতী ক্ষণের
লাগামবিহীন ঘোড়া
নীলখামে ভরা চিঠির বদলে চিঠি
ঠা ঠা রোদ্দুরে ঠারে ঠোরে ঘোরাফেরা
গায়ে গায়ে হেসে শুধু ভালোবেসে
এলেবেলে ছুটে চলা
এসব কথা কিসের জন্য বলা?
অপার্থিব সেই দোলের খেলায়
রংধনু রং ছড়িয়ে সেদিন
আদিম তৃষ্ণার আগ্নেয় কম্পণে
রূপসী প্রেমের উপোষী আবেগে
লীলাবতী মনের কোমল খোয়াবে ছুটেছি কেবল
কেবলই ছুটেছি
দুকূল প্লাবিত জোয়ারের সন্ধ্যানে।








আনন্দ ভৈরবী

হিমাঙ্ক তাপমাত্রায়
যদি বরফে ঢেকে যায়
মানচিত্রের মুখ
জ্বলন্ত অগ্নির সন্ধ্যানে
চুম্বকিও আকর্ষণে
টেনে নিও কাছে
কঠিন আবেষ্টনে ভেঙ্গে দিও দ্বিধা
শ্বাসে শ্বাস মিলাতেই দেখা যাবে
তাবৎ উষ্ণতা ভরা শৌভিক মায়া
শীতল পাজরের বুকে পর্বত চূড়ায়
তারকা পুঞ্জের স্নিগ্ধ মেলায়
অরণ্যের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের রাগমালা
আরো একটু কাছাকাছি হলে
মিহিন মমতায়...
উচ্ছ্বাসের নান্দনিক কারুকাজে
মহাকালের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসা মায়াবী আলো
ঘোর গ্রস্ত অনুরাগে শোনাবে বৃষ্টির গান
সমৃদ্ধ বাসনার সম্মিলিত কোরাস
জীবনের কক্ষপথে নিঃশব্দে জলরং এঁকে যাওয়া
ইলোরা অজন্তা আদলের দুজন মানব- মানবী
তুমুল বাজাচ্ছে তখন আনন্দ ভৈরবী।







হতে পারি দারুণ সাহসী

যদি চাও কাছে আসি
এখনও হতে পারি দারুণ সাহসী
অষ্টাদশী গোলাপের তোড়া হাতে
এখনও ধরাতে পারি ফাগুনের নেশা
এখনও সাজাতে পারি রক্তিম বাসর
এখনও জোয়ার জাগে
ইচ্ছের দুরন্ত ঘোড়া ছোটে টগবগ
তৃষিত হৃদয়ের সুগন্ধি সৌরভ
ঘনিষ্ঠ উচ্ছাসমাখা প্রতিটি সূর্যোদয়
অমৃত আস্বাদে দোলে নাগর দোলায়
হয় যদি এলোমেলো বাকি কিছু সব
কেউ যদি পিছু ডেকে বলে সেই কথা
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি
বলো নাকো কথা ঐ যুবকের সাথে
পরোয়া করি না তাতে
চাও যদি কাছে আসি
এখনও হতে পারি দারুণ সাহসী
এখনও উঠতে পারি জ্বলে
মাঝরাতে ঘর ছেড়ে বের হতে পারি
লোক-লজ্জা -অপবাদ ভুলে।




আশির দশকের কবি সামসুন্নাহার ফারুক, জন্ম ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৪৬ সালে ঝিনাইদহ জেলার পুটিয়া গ্রামে। পিতা- মোঃ জনাব আলী মাতা- ফাতেমা খাতুন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ মাষ্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। লেখালেখি করেন খুব ছোটবেলা থেকেই। কবির ৫টি কাব্যগন্থ প্রকাশ হয়েছে-সুবর্ণ সময় -১৯৮৫, বিশ্বাসের সেই বৃক্ষটি-১৯৮৮, শ্রাবণ কফির পেয়ালা-২০১১ এবং এক মুঠো রেশমি চুড়ি-২০১২। শিশুদের জন্য লেখা কিপটে বুড়ো নাতি-২০০৬ ও কাতলা লেনের পাতলা খান ২০০৮ নামে দুটি ছড়ার বই প্রকাশিত হয়েছে। মনিটরে প্রিয় মুখকাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ২০১৪ লেখালেখির জন্য তিনি পেয়েছেন- বিকাশ সাহিত্য পুরস্কার-১৯৮৮, খলিল উল্যাহ মৃধা স্মৃতি পদক-২০০৫, পালক এওয়ার্ড -২০০৩ (ছড়া সাহিত্যে), শারদীয়া হেমন্ত কবিতা পুরস্কার-২০১২, অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন সম্মাননা -২০১১ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল স্মৃতি ফাউন্ডেশন-বিজয় সম্মাননা-২০১১ পেয়েছেন।