মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

সৌমী শাঁখারী


সৌমী শাঁখারী

বিস্মৃতি

স্মৃতির অতলে তলিয়ে ভালোবাসা খোঁজে কেউ..
বোঝে না এ সুখে মন ভেঙ্গে হয় গুড়ো গুড়ো হয় আরো!
রাত্রিকালীন সানাই মিঠে বোলে হাড় পাঁজরের দরজায় সজোরে ধাক্কা মারে।
নদীর পলকা চরে ছাই হয়ে পড়ে আছে
আমাদের মেলামেশার সৎকারের কোন এক পুরানো ঝড়জলের রাত্রি।
এখন সেখানে আনন্দ রঙ মেখে চু কিতকিত খেলে বাচ্চাবেলার ছেলেমানুষী ঢেউ!!
শোনে না সাবালক মেঘ বালকের হাজারো বারণ..
সবার অলক্ষে সাগরনীল মন দিয়ে বসে দুঃখিনী বালুকাবেলা কে।
ফুলের কোমল ঘায়ে মূর্চ্ছা যেতে হয় সাততাড়াতাড়ি।
যখন বেনামী সম্পর্ক বলপূর্বক লুঠ করে তার সর্বস্ব।
মুছিয়ে দেয় তার যৌবনকালীন চাহিদার আদর সম্মান।
এক ঝটকায়।
এই কি তবে মনকে মনের কাছে সস্তার পলকা
রঙীন কাগজে মুড়ে উপহার দেওয়ার শাসন?
চাই না স্মৃতির রেলিংঘেরা শীত ব্যালকনির ঝাপসা কুয়াশার আমেজ..
বেশ জানি এখন ঝুপঝুপে ভিজে নিজের কান্নার ছবি
 চোখের নিভৃত কক্ষে টাঙিয়ে রাখতে।
বুকের ঝলসানো আলোয় তাদের রূপ খোলে প্রতিটা মেঘাচ্ছন্ন তারা ডোবা রাতে।
কোনো এক মায়াবী ছলনায় তারা
আমার জীবন্ত প্রেমের ধর্ষিত শরীরকে করে রেখেছে সতেজ!!







আচ্ছাদন

আবেগের ভারে নুইয়ে আসা নদীটি আর ছোঁবে না শিলাপ্রস্তরের ওই খন্ড!
অনেক সয়েছে সে ঘাতকের যাতন
এখন তার চোখের যত্নে নিয়মিত বাসনার সহস্র পিপীলিকার মৃত্যু
সময়ের তিরতিরে রক্তস্রোতে শেষমেশ শানিয়েছে ন্যায়দন্ড!
অবেলায় সন্ধ্যে কাঁদে মেঘের বালখিল্যতায়
কোল জুড়ে বৃষ্টি নামে চাবুকের ঘায়ে!
বয়সের প্রাজ্ঞসীমা পেরিয়ে রাত্রি অবশ্য সাবালক..
কান্না ঢাকতে এগিয়ে আসে বিচক্ষণ পায়ে!
রোজ খুন জখমের বলি বাড়ে রাজপথে..
চারিদিক থেকে ধেয়ে আসে শব্দযান
ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় সাধের ইচ্ছেকে
অশ্রুর অপচয়ে গতিপথ সাজাতে সে হয়রান!
অজানার টানে বন্ধুর পথ বেশ মানানসই..
খাঁজ কাটা পাহাড়ের লাবণ্যও মনকাড়া!
নদীর পেলব বুক শুকিয়ে আসে
জলের ধোওয়ায় যে থাকতেই হবে পাঁকহারা!
রাজপথের রঙীন বর্ম ঢেকে রাখে অক্ষমতা..
মধ্যরাতে ঝড় ওঠে চোখের স্নায়ুতন্ত্রে!
অজস্র জোনাক কেঁপে ওঠে বারংবার
চাঁদ চুপিসারে ঘেমে ওঠে আকাশের ষড়যন্ত্রে!!







কলিকাল

সপ্তদীপার পার ছুঁয়ে
আকাশ ছিলো জমাট কালো..
তুমি মেঘের কাছে ক্ষণিক নীল চাইলে!
একটু চাওয়ায় অঝোর স্বপ্ন ঝরিয়ে..
শেষে বৃষ্টি সেজেই থমকে গেলে!
তড়িৎ তেজে চলকে
রামধনু আলতো রঙে দাঁড়ালো..
রেখায় সেদিন কমলা লালের অবোধ ছড়াছড়ি!
ভুলেই গেলে এমন মিছে দোলায়..
আলেয়ারই শোকটা নাছোড় ভালোর কড়াকড়ি!
সবুজ ভাষা গুনে..
নদীর দেশে যৌবনী পারাপার!
মনের জলে মাঝির ছলাৎ সুরের টান
তোমায় অবাক দিশায় আস্তেধীরে ডাকে..
বৈঠা বেয়ে ঢেউয়ের মিঠে স্নান!
কাপড়ে আঁকা নকশীগান..
সিঁদুর টিপে বসন্তের কৃষ্ণচূড়া উত্থাল পাথাল!
মেঠো পথে বাউলিয়া শান্ত সুবাস
কেমন যেনো অবুঝ ব্যথার রাতে..
খুঁড়ছে মনের লুকিয়ে রাখা নিঃশ্বাস!!







দাগ

অসুখটা আজ বড্ডো দামী,
মনের ঘরে বাক্সবন্দী রূপকথা...
সাজিয়ে দেবে শরীরকে আবার
শীতের মাঝেও ফাগুন পেলে।
ঠিকানাটা সেই হারিয়ে বেওয়ারিশ,
পথ আগলে হিমেল ধস...
চোখের জল মোছানোর দোসর
জানিনা ভারী কোথায় মেলে।
মন মেখলাটা যেই অনামী,
আকাশপারে উঠবে বাদল হেসে...
বৃষ্টির মিছিলে শত পদাতিক
অংশ নেবে আন্দোলনের সুফলে।
মৌমাছিটা বলি হঠাৎই বেঘরে,
ফুলেরা দিয়েছে অবাক ধোঁকা...
ভালোবাসার রঙ মিছিমিছি শুকিয়ে
ফ্যাকাশে তারা নিজেরিই অন্তঃস্থলে।
মিথ্যে ছবিটার নেইতো মুক্তি,
দোল খাওয়া পাখির বিলাপ...
ঝড়ের পরে ধ্বস্ত বাতাসে
স্থিথতার দাগ খুঁজছো বিফলে!







দহন

মনে আছে তোমার?
শ্রাবণী দুপুরে সেই পথে ভেজা অভিমান
যেখানে আদর ও স্নেহ,দুজনের চোখেই ছিলো জলবন্যা!
হাওয়ার ভ্রান্তবিলাসে আজ হঠাৎ চাপা গোঙানি
বুঝি বা ফেলে আসা বন্ধুবেলার মন আনচান!
এখনও কি সাঁঝবদলের বীনায়..
আমার রাঙা ঠোঁট জড়াতে চাও স্পর্শের মায়াজালে?
সীমাহীন বেগে ধরতে চাও স্বপ্নের মেঘবাহুতে..
ছেঁড়া লহমার পাতাকে জড়ো করতে চাও বুকমাঝারে?
মনে করতে চাও,সিদ্ধ সকলই,ছিন্ন ডোরের আড়ালে!
স্মৃতি সব কলরবে ঢাকা..
চূড়ান্ত দহনের পথ কেটে কেটে বিধ্বংসী আগুনে পোড়া!
পাঁজর খুড়লে শত লেলিহান শিখার মাঝে..
একসময়ের সে নামের সুবাস নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে!
এটুকুই শান্তনীল চরাচরে প্রেমের ঠিকানা জেনো..
বালিতে যা তলিয়ে গেলেও রেখে যায় সুখভরা অবলম্বন!!








শিমুল

তোমার দেওয়া শিমুল নামটা..
এখনও বুকে আগলাই যত্নের দেরাজে!
কেউ আর ডাকখোঁজ করেনা নিত্যনৈমিত্তিক
স্মৃতির পাটাতনে ছেঁড়া ফুল সমাপতনের!
আদরভাষার রাতে হিমেল ঝাপটা..
কড়া নাড়ে মনের ঘুমঘোর গরজে!
শব্দটা রক্তিম ঠোঁটে কাঁপে থরোথরো..
পাতারা শিশির মাখে গায়ে বিবর্তনের!
সুখনদী ছিলো সেবার বসন্তে..
টানটান উত্তেজনায় রোমাঞ্চে সুন্দর ভরপুর!
পলাশ বিভুঁইয়ে রাতজাগা তারার স্বপ্ন..
খুবই ঘনঘোর উচ্চাভিলাষায় পাড়ি জমিয়েছিলো!
বোধহয় তাই লহমাভারে দিনান্তে..
নিরপরাধ আরশির জলছবিটি চুরচুর!
খানখান আলোয় ঝাপসা মৃতপ্রায় আবেগ..
চোখের মনকেমনে সাজায় চকমকি রোদগান!
তোমার দেওয়া শিমুল নামটা..
বসন্তকে কাঁদিয়ে যায় এখন মনবেহাগে!!