শুক্লা মালাকার
অকপট
কিছুটা আগেও নয় কিছুটা পরেও নয়
ঠিক সেই মুহুর্তেই খসে পড়া
শাড়ীর ভাঁজে আহ্লাদ
চাঁদ নেমে এল বারান্দায়
আত্মসমর্পনে ভেসে থাকা দুটো শরীর
শান্ত, স্রোতহীন
জানালায় নিষিদ্ধ ইতিহাস
নির্জনে দুজনে চুপিচুপি অমৃতের
স্বাদ নিল
সেখানে সেই বসন্ত সন্ধ্যায়
টুপটাপ ঝরে গেল আলুথালু অসুখী মন।
প্রদীপ
বহুকাল প্রদীপে তেল দেয়া হয় নি
কালো দাগ বুকে নিয়ে আছে
সলতে পুড়েছে কবে
মজা খালের মতো শীতল অভিমান
ভোরের সোনালী রোদ
আজ এসে পড়েছে আগাছার ঝোপে
একটা লকলকে সাপ বেরিয়ে
খোলা মাঠের দিকে গেল
অনেকদিন পর প্রদীপে
তেল দিতে গিয়ে হাত কেঁপে গেল
সলতে জ্বালাতে হাত পোড়ালাম
অসময়ে মেঘ ঘন হয়েছে আকাশে
হাওয়া বইছে
বহু চেষ্টায় জ্বালানো প্রদীপ
দপ করে নিভে গেল।
সেদিনের অপেক্ষায়
গরম ভাতের গন্ধে মাতাল হয় যে বুক
সে আমার দেশ
কাঙাল জঙ্গলে অভ্রকুঁচি মাখা
মৃত কচি শরীর আমার দেশ
দশক দশক গিলে খাওয়া সন্ত্রাসী
অপরূপা বিধবা পাহাড় আমার দেশ
ব্রহ্মপুত্রের আকাশে বিলাপমুখর
মেঘের দল
আমার দেশ
দুঃখ করো না
নরম শিশির মুছিয়ে দেবে তোমার
যন্ত্রণা
খোলস ছেড়ে বেরোবেই মানবিকতা
সেদিন কান্নারা কথা খুঁজে পাবে
অভিমানী সভ্যতা রক্তচক্ষু নিয়ে
ফিরবে
সেদিন, দেশ
জুড়ে আঁকা হবে অধিকারের সুখ।
শোষণ ও মুক্তি
এখন লড়াই নিজেদের সঙ্গে
বহুকাল হল দেশের বুক থেকে মুছে
গেছে পরাধীনতা
বাইরের পৃথিবীর চোখে আমরা এক
আমাদের কোন অসুখ নেই
জানি ভিতরে অপসৃয়মান মানবিকতা
আজও স্বচ্ছলতার আগে উঠে আসে ‘গরিবী’
পুরোনো জাতিভেদের থেকে
খুব একটা তফাৎ থাকে না দলিত শব্দের
দেশের আনাচে কানাচে ধুপধাপ লাফিয়ে
বেড়াচ্ছে ধর্ম
এখন লড়াই নিজেদের
কোন এক বৃষ্টির বিকেলে হয়তো
সূর্যাস্তের সঙ্গে ধুয়ে যাবে শোষণ
পরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে শিরদাঁড়া
হাতে
চৌকাঠে এসে দাঁড়াবে মুক্তি।
সস্তার জীবন
রাতের রাস্তায় একা শুয়ে থাকা
ছিন্নভিন্ন দেহ
ট্রেনের দুলাইনে গুঁজে থাকা
স্কুলফেরত রক্তাত কিশোরী
কিম্বা পণ,চামড়ার
রঙ বা অপবাদের
সামাজিক দায় কাঁধে ঝলসানো যুবতী
দুমিনিটের ফুটেজ আর ছাপ ফেলে না
মিডিয়া চটজলদি মুখ ঘুরিয়ে ফেলে
মোবাইল বাহিত জীবন্ত মৃত্যু
প্রক্রিয়ায়,
নতুবা
স্ত্রীর প্রেমিকের হাতে খুন হয়ে
যাওয়া স্বামীর
রসালো গল্পে টি আর পি বাড়ায়
আমরাও মজা লুটি
সারাদিন রকমারী মরণ দেখে দেখে
পলান্নের ঢেঁকুর তুলি
জীবন এখন বড়োই সস্তার।