মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

দেবাশিস ঘোষ


দেবাশিস ঘোষ

ব্যবধান

সমস্ত ঝর ঝর গিলে চলেছে রাত্রি,
আর কোনও শব্দ গড়িয়ে নামে না
অন্ধকারের হিম ত্বক বেয়ে |
সে আমাকে জানালা চিরে
বের করে নিতে চায়,
শুষে নিতে চায়
আমার নিজস্ব বৃষ্টিকে
তার মসৃণ ত্বকে |
দেয়ালের ব্যবধান মুছে দিই,
রাত্রি আসে
বিপুল জলীয় গান নিয়ে |
আমি তার অন্ধকারে ঢুকে দেখি -
সমস্ত বৃষ্টির বিন্দুরা
আমার স্নায়ুস্পন্দে রিমঝিম তুলে
ঘুম জাগানিয়া বাউলের সাজে
ভোর ভেঙে এগিয়ে চলেছে |









উপভোক্তা

কল্লোলিনীর পেটের ভিতর
এগিয়ে চলে রচনা ও প্রেরণা ৷
ড্রিলের ফলায় পার হয় হিমযুগ,
শেষে ক্লিওপেট্রার সিংহাসনের সামনে ৷
কিছু দ্বিপদী ভাবনায় শিশুরাও যোনি ৷
আকাশকে জড়িয়ে আমাদের টাওয়ারে বসত ৷
অতন্দ্র রাত্রিভুক দীর্ঘ আঙুলে
আঁকড়ে ধরেছি সমুদ্রের ফণা ৷
আর দ্বিফলা জিভে চেটেপুটে সাফ করছি
বলাৎকার সমগ্র ৷
ত্রিপাদভূমি চাইতেই
শূন্য প্যাকেট তুলে দেখিয়েছি |








ধরা যাক

ধরা যাক
আলো কিংবা অন্ধকার কোনোটাই নেই |
ঘর বাড়ি দেশ কিংবা মিলিটারী নেই |
কেবল শ্রাবণ ঝরছে সেতারের ধুন হয়ে |
আর শাহরুখ খান বিরাট পর্দায় এসে
কাজলের সাথে খুনসুটি করছে |
কিন্তু কারো দেখবার চোখ অবধি নেই |
ভাবো কি মারাত্মক অঘটন হতো তাই হলে |
বরং অনেক আছে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত |
ছোটোদের স্কুল আছে, নাগরিক, নির্বাচন, মিলিটারী আছে
মাঝে মাঝে ভুলে যাই এতসব আছে |
বেশ তবে ফের এসো
ধরা যাক রাস্তা আছে
যদিও বা ভাঙাচোরা,
তবু তাকে রাস্তা ছাড়া অন্য নাম দিতেই পারোনা |







ক্ষতলিপি

যে কোনো ক্ষতের দাগ স্থায়ী হয় সামান্য সময়,
বাকিটুকু কাল এসে চেটেপুটে তুলে নিয়ে যায় |
বেদনার অক্ষ দ্রাঘিমা কিংবা খ্রীস্টপূর্ব নেই,
ঘড়ি আর পাত্র ধরে ব্যথা বেজে ওঠে |
রক্ত আর মাংসের স্তূপে
চেঙ্গিস নাদির শাহ চমৎকার আজও  বেঁচে আছে!
যাদের রক্তস্রোতে নাদির বা চেঙ্গিস দ্বীপ
তাদের কষ্টবোধ, শেষ যন্ত্রণার  কোনো ছায়া নেই
বাপ ভাই, ঠিকানা বা প্রত্নশেষ নেই |
গ্রামে গঞ্জে ছিল তারা ভালোবাসাময় ঘরে
ছোটো ছোটো ঈর্ষা দ্বেষ নিয়ে,
তারপর উড়ে গেছে  তৈমুরের তলোয়ারে, চোষেস্কুর নির্মম বুলেটে |
খুনীদের জীবনীতে গড়ে ওঠে ইতিহাস,
খুন হওয়া মানুষেরা সংখ্যা হয়ে ওঠে |
দুখীরাম, লক্ষী বলে
কোনও দিন বাবা যেন ডাকেনি কখনও |
হত্যাকাণ্ড, যুদ্ধ কিংবা রাষ্ট্রীয় নীতি
তুচ্ছ বিষয় নয়,
তাই তুচ্ছ মানুষের জন্য কোনো দিন
লাল কার্পেট বিছিয়ে দেয় না কেউ কক্ষণো |









যে পড়শী বসত করে কাছে

কিছু মৃত্যুর জন্য মানুষ নিজেকে প্রস্তুত করে চলে
আমকে পাকাতে হলে কিছুটা সময় ধরে জাঁক দিতে হয়
বেড়াতে যাওয়ার আগে জুতো ব্রাশ সাবান চিরুনি
গোছগাছ করে নিতে হয় |
কিছু কিছু মানুষকে মৃত্যু এসে ডাক দেয় রোজ
সে কেবল বলে, 'একটু দাঁড়ারে ভাই, আমি খুব ভীতু লোক
আরেকটু সাহস শুষে নিই এ জীবন থেকে
তারপর নিশ্চয়ই | ঠিকঠাক কতদিন বা বছর জানি না যদিও,
তবু আমি গুছিয়ে গুটিয়ে নিচ্ছি নিজেকে | একদিন ঠিক...
সে মানুষ চা খায়,পাশে মৃত্যু তার গ্লাসে ফু দিয়ে জুড়িয়ে দেয় |
অন্য সব মানুষেরা চেটেপুটে জীবনের ছিবড়ে দেখে ছাড়ে,
এত সামনে বসে থাকা মৃত্যুর নিশ্বাস বোঝে না কখনও |
আর কিছু মানুষেরা মরে গেছে তা জানার সুযোগও পায় না |
নানা রঙা জার্সি পরে মৃত্যুরা খেলা করে আমাদের সাথে |
কে কখন ডাক শোনে তার কোনো তিথি বা নক্ষত্র কিছু নেই |
মৃত্যুরা এগিয়ে চলে ছায়া ফেলে জলে, সে ছায়াকে ভালোবেসে ডেকেছি জীবন |