অরূপ গোস্বামী
ভাদর শেষে
অ ভাদু তুই আসিসনা মা
একলা বাপের ঘরে
দিনকাল ত ভাল লয় মা
সিঁটক্যে থাকি ডরে ।
রাজার বিটি হল্যেইবা কি
থোড়ায় দিছে পাত্তা
ইখন দেশে সবাই লবাব
ছাঁড়ায় যাছে মাত্তা ।
শহুর গাঁয়ে বাসে টেরেনে
বুড়ি থাক্যে ছুঁড়ি
অসুররা খায় লুট্যে পুট্যে
যেমন ঝাল মুড়ি ।
তবুও যদি মন না মানে
আসবি দেখে শুন্যে
দিনে দিনেই আসবি বাসে
নগদ ভাড়া গুন্যে ।
ইবার আল্যে দিবই কিনে
একটো মুঠা ফন
রোজেই তখন বলবি কথা
লিজের লকের সন ।
ভাদর শেষে তুরই লাগ্যে
বস্যে থাকে লকে
আদর করে পূজবে তুকে
রাখব্যে চোখে চোখে ।
ভাদু
ভাদু ছিল রাজার বেটি
কাশীপুরে ধাম
ভাদর মাসে জনম বল্যে
ভদ্রাবতী নাম ।
জনম হতেই উপচ্যে পড়ে
রাজ্যের ভাঁড়ার
গরীব ধনী বলল্য সবাই
ভাদুর চমৎকার ।
রূপে গুনে এমন মেয়্যা
ভুভারতে নাই
সবার সাথে মিলা মিশা
সবার আদর পায় ।
দিনক্যে দিন'ত
হছে বড়
ষোলর কঠা পার
বিহা দিত্যে হবেক ভাদুর
রাজার মনটা ভার ।
খুঁজে খুঁজে মিলল জামাই
রাজার ছিল্যা এক
ফর্সা রূপে ঝাঁকড়া চুলে
দেখবি কাকে দেখ ।
করত্যে বিহা ঘড়ায় চড়ে
বরযাত্রীর সনে
রাজার ছিল্যা আসত্যেছিল
সিধা পথে বনে ।
ডাকাত দলে লুটে উঁদের
নিকাষ করে জানে
ভাস্যে গেল খুশীর মেলা
চোখ্যের জলের বানে ।
বিহার রাত্যে কপাল পুড়া
দুষছ্যে উঁকে সবাই
গলায় দড়ি লিয়ে ভাদু
ঘুঁচায় জীবনটাই ।
আকাল হল্য গটা দেশে
উজাড় হল্য ঘর
বুঝল্য লকে ভাদুই ছিল
দেশে পয়মন্তর ।
করল্য শুরু ভাদর মাসে
ভাদু বিটির পূজা
মুত্তি গড়্যে গানের সুরে
সঙে খাজা গজা ।
ভাদু মুদের ঘরের বিটি
রাখব্য ভাদুর মান
ভাদুর ছুঁয়ায় হবেক দেশে
সবুজ ধানের বান ।
ভাদ্যোরা ঝড়
সাঁঝবেলাতে মাচার লতায় হলদ্যা ঝিঙা
ফুল
মনটো হামার তুঁহার লাগ্যে কচ্ছে রে
চুলবুল ।
হামাক ছাঁড়্যে ভাদর মাসে গেলি
বাপের ঘর
বুঝলিনা তুই তঁর পিয়াসে মনের বাদায়
ঝড় ।
ঝাঁঝরা ঘরে খড়ের চালে ঝরঝরা জল পড়ে
জাগ্যে বসে খাট্যের উপর মনটো কেমন
করে ।
ভাদুর সুরে মন মাতেছ্যে খাজা গজার
মেলা
জুসনা রাত্যে স্বপুন দেখি তুঁহার
হামার খেলা ।
সুয়াদ ছিল তুঁহার লাগ্যে কিনব
মেলায় দুল
একলা মরদ রাখ্যে দিহে করলিরে তুই
ভুল ।
তুঁহাক পত্থম চোতগাজনে দেখা
তেঁতুলতলে
লতুন গাছে ডুমুরপাকা তঁর হাসিতেই
মিলে ।
বোশ্যাখ মাসে করলি বিহা হলি
জীবনসাথী
তঁর লেশাতেই পাগল হয়ে কাটছ্যে
দিনরাতি ।
ঝুমুর গানে তুঁহার সনে মহুল্যা
লেশায় লাচ
তুকে লিহে স্বপুনগুল্যান করব্যই
হামি সাচ ।
মঙলিরে তুই বুঝলিনা রে মুর মনটোর
ব্যথা
নাই'ত ভরা ভাদর দিনে
কেনে গেলিস হথা
বুঝবি যখন করব্য সাঙ্ঘা ঝুমরি
মেঝ্যান সাথে
দেখবি ঘুরে ঘরটো আছে মরদটোই বেহাতে
।
ভাদ্যোরা মন
বন বিহারী পাহাড় চূড়ে
রঙ লাগ্যেছে আকাশ জুড়ে
চঞ্চলা মন হুদকে উঠে
বিজলী গেলি কুথা রে !
ভাদর মাসে ঝিরঝিরাছে
তুকে বহুত চকচক্যাছে
ফুলের মধু খাঁয়ে খাঁয়ে
ভমরা কেমন গুনগুনাছে ।
শিলিক শাড়ী কানের দুলে
ঠমক ঠমক কমর দুলে
ভাদুর সুরে মন মাত্যেছে
দুখের জীবন যাছি ভুলে ।
জুসনা রাত্যে চাঁদের বাহার
বিজলী কবে বনবি হামার
রাত্যে ঘুমাঁই স্বপুন দেখি
আসছে আল ঘুঁচাই আন্ধার ।
মা’গো হামি জুয়ান হলি
মা’গো কেনে মরিস
খাট্যে
সকাল থাক্যে রাত
দুফর বেলায় দিছিস বাড়্যে
গন্ডা তিনেক পাত ।
সকাল বেলায় গোবর ল্যাপা
ঘুঁট্যা থাপিস কাঁথে
উঁয়ার উপর মুনিশ মজুর
বাস্যাম দিছিস খাত্যে ।
গরু বাছুর মুরগি ছাগল
তুঁহেই দেখিস সবকে
দিনে দিনে বাড়ছ্যে বয়স
তাগদ যাছে হড়ক্যে ।
বাপটো হামার সাদাসিধা
কন দিকেও নাই
জৈগা জমি পৈসা টেকার
হিসাব রাখি তাই ।
বুঢ়া কালে নাই হয় সাধ
খাবি রাঁধা ভাত
খাঁয়ে দায়ে দুফর বেলায়
হবিস টুকু কাত !
দিনে রাত্যে করবে সেবা
হল্যে তুঁহার বিমার
হাত লাগাবে ঘরের কাজে
সঙ্গী হবেক তুমার ।
টুকটুক্যা বৌ আন’ন
ঘরে
কর’ন পাকা দেখা
মা’গো হামি জুয়ান হলি
নাই’ত ইখন খঁকা ।