জ্যোতির্ময় মুখার্জি
অপদার্থ, রবীন্দ্রনাথ
আমি কখনো রবীন্দ্রনাথ লিখিনি। আই
মিন্ টু সে,
কখনো রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কবিতা লিখিনি। রবীন্দ্রনাথ খেয়েছি।
রবীন্দ্রনাথ শুয়েছি। এমনকি পটি করতে করতেও রবীন্দ্রনাথ এসেছে অনায়াসে। কিন্তু কখনো
রবীন্দ্রনাথ আঁকিনি আমি
যদিও এ ব্যর্থতা আমার নয়। একবারো
কি ভেবে দেখেছেন,
এই অপদার্থের পদার্থটুকু যদি রবীন্দ্রনাথ বোলাতে বোলাতেই চলে যায়।
তাহলে বাকি থাকা অ দিয়ে আমি কীভাবে এই অসম্ভব সম্ভাবনাটা সম্ভব করে তুলব
ভার্চুয়াল ডায়েরি -৪
ধরা যাক আমি কবিতা লিখছি। কিন্তু
লিখলেই যে কবিতা হয়ে যাবে এমন তো কোনও কথা নেই। আদতে লিখছি। কিছু শব্দ পাশাপাশি, হাতে
হাত রেখে হাঁটি হাঁটি পা পা
শব্দ?! সেটা আবার কী বস্তু ? জানো না? ওই যে, যা দিয়ে ছবিগুলোকে বাঁধিয়ে রাখা যায়। হুম্,
তাইতো ব্যাপারটা তো কোনদিন খেয়াল করিনি। কিন্তু প্রশ্ন সেটা নয়।
প্রশ্নটা হল, কী লিখছি? কেন লিখছি?
জানি না তো বা জানি হয়তো, একটা ক-বি-তা।
পত্রিকায় দেবো বলে
এতদূর পর্যন্ত খুব সরল। কোথাও কোনও
জটিলতা নেই। জটিলতা দেখা দিলো তখন, যখন শেষরাতে নিভু নিভু
লন্ঠনের আলোটা তার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলাাম, তুমি
কে গা?
ভার্চুয়াল ডায়েরি -৫
যেদিন থেকে ভার্চুয়াল ডায়েরি লিখতে
শুরু করেছিলাম,
ভাবিনি এটা আমাকে এইভাবে সার্ভিসিং সেন্টারের পথ চিনিয়ে দেবে।
নাট্-বল্টুগুলোকে একটু তৈলমর্দন করে ছেড়ে দেবে ঝকাঝক চাকচক ফিটফাট ঝ্যাকা ঝ্যাক্
করে। না না, এটা কোনো হেঁয়ালি নয়। এটা বেশ কবিতা থেকে গদ্যে
বা গদ্য থেকে কবিতায়, অলেখা থেকে লেখায় বা অলেখাকে লেখাতে
কনভার্ট করে নেওয়ার ফুলপ্রুফ্ পদ্ধতি (প্যাহেলে ইসতেমাল করো, ফির্ বিশ্ওয়াশ্ করো)
একটু খুলেই বলা যাক ব্যাপারটা। এই
ধরুন,
উদাহরণ হিসেবে আমাকেই নেওয়া যাক, মাঝে মাঝেই
আমাকে গদ্য লিখতে হয় আবার কবিতাও। কারণটাও আমার কাছে জলবৎ তরলম্, লিখতে পারি তাই লিখি, আর লিখি কারণ পত্রিকায় ছাপাব
বলে। এতদূর পর্যন্ত ঠিকঠাক, সমস্যা নেই কোথাও। সমস্যা হয়ে
যায় তখনই, যখন চড়াই থেকে উৎরাইয়ের পথে আর উৎরাই থেকে চড়াই।
ক্রমাগত ওঠা আর নামা, নামা আর ওঠা করতে করতে হাঁটু যে হাঁফ
ছাড়িয়া হাঁটিব না আর প্রভু বলিয়া বসে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে। তারপর’ও তো আবার পেশিতে পেশিতে ছড়িয়ে পড়া ল্যাকটিক্ অ্যাসিডের মৌনতা আছেই।
অতঃপর, নিরুপায় হইয়া জানলায় চোখ কেলাইয়া গুনিতং মেঘং
সুকান্তর মতো ঠিক গালে হাত দিয়ে
ভাবতে না বসলেও,
ভাবতেই হয় বস্, কী লিখি…কী
লিখি….কীভাবেই বা লিখি…..কবিতা ছেড়ে
কীভাবেই বা হেঁটে যাই গদ্যের কাছাকাছি বা রিভার্স গিয়ারররররররর…...আপনি বলবেন, দূর, অতো ভাবার কী
আছে, জাস্ট লেখো। যা খুশি লেখো, যা মন
চায় তাই লেখো, গদ্য না কবিতা ভাববে না একদম। প্রাণ মিশল না
মেধা, মর্ডান না পোস্ট মডার্ন, আবেগ
মিশল না কাঁচকলা তাতে ভাবার কী আছে। আদতে তো তুমি লিখছো। জাস্ট লিখছো। জানি বস্
জানি, আমি লেখাই লিখি, আর আমি যাই লিখব
তা আপনি পড়তে বাধ্য…. কিন্তু…….এই
কিন্তুর পরেই যে মেঘ জমে আছে। বৃষ্টি হয় না কেন ?
তারপর যদি আবার বউ বলে বসে, সেই
কবে থেকে বলছি মেয়ের ওষুধটা আনতে, মনে থাকে না?
কোন ওষুধটা বলতো?
তা মনে থাকবে কেন, সারাদিন
তোমার ওই লেখালেখি নিয়েই থাকো। ওটাই তোমাকে খেতে দেবে। একটু সংসারী হও সংসারী।
অগত্যা, কানের মধ্য দিয়ে চালান করে দিয়ে আঙুল, ব্রহ্মতালু চুলকাইতে চুলকাইতে ভাবি, তাই তো ওষুধটার
নাম কি…...থুকুচি কী?
হলুদবাসা -১
ভালোবাসার রং লাল জেনেছিলাম, কখন
যে পাতাঝরা দিনে হলুদ হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।
এখন যদি হলুদ রংটিকে ভালোবাসায়
রূপান্তরিত করতে হয়,
তাহলে এক হাতে নিতে হবে হলুদ করবী, অন্য হাতে
ফুটুক লাল।
তবুও যে লালে হলুদ মিশবে বা হলুদে
লাল তার নিশ্চয়তা গীতবিতানেও নেই, কিন্তু আমরা অনায়াসেই মিশিয়ে ফেলতে
পারি আমাদের হাতের রংগুলি।
হলুদবাসা -২
হলুদ রংটিকে কীভাবে ভালবাসায়
রূপান্তরিত করতে হবে আমার জানা নেই, কিন্তু বাসাটি যখন ভেঙে
পড়লো তিন টুকরো হয়ে, আমি সযত্নে কুড়িয়ে নিয়েছিলাম হলুদের
টুকরোগুলি।
এখন হ’এর
দিকে তাকাতেই যে হাওয়া বইবে, এটা জানা থাকলেও জানা ছিল না যে,
খর গ্রীষ্মের মাঠ ভেঙে হেঁটে আসা সে হাওয়া ভিজিয়ে দেবে না আমাকে
অতঃপর, ডুবিয়ে
নেবার পালা তোমার দ’এ।