তন্ময় ধর
চিড়িয়াখানা থেকে বলছি, স্যর
চিড়িয়াখানা থেকে বলছি, স্যর
খুব তাড়াতাড়ি আসুন, টিকিট
ফুরিয়ে যাচ্ছে
বাচ্চাদের নিয়ে আসুন,স্যর
দাঁত, নখ,
রক্ত, খাঁচা, বাসি মাংস-
সব ফুরিয়ে যাচ্ছে
দেখুন, আপনাদের
ওপাশ থেকে আমাদের এপাশের ছায়াটি দীর্ঘতর
আমাদের ফ্যাকাশে মাংসে, খিদেয়,
ময়লা জলে আলো পড়ছে
আর আপনাদের চকচকে পৃথিবীর কক্ষপথে
ঢুকছে অন্ধকার
দেখুন, ওই
কঙ্কালসার বন্দী পাখিটার দিকে চেয়ে দেখুন
আপনাদের উজ্জ্বল সেলফির ভিতর ঢুকে
পড়ছে অন্ধকার
ব্যর্থ পশুপাখির ছবি নিয়ে ফিরে
যাচ্ছে আপনার সন্তানটি
দেখুন, ওর
হাঁটাচলা কি দ্রুত পালটে যাচ্ছে !
জাদুঘর থেকে বলছি, স্যর
দরজার বাইরে দাঁড়ান, স্যর
আমি আগুন আবিষ্কার নিভিয়ে দিতে
চাইছি
উরুসন্ধির হাড়ে বড্ড যন্ত্রণা
দেখুন, ঈশ্বরের
জীবাশ্মে, যৌনাঙ্গে, তৈলচিত্রে,
ভাস্কর্যে
কিভাবে বদরক্ত দিয়ে নাম লিখে গেছে
আপনার সন্তান
অস্ত্রশস্ত্রে ধুলা ও থুতু ফেলে
কিভাবে হেঁটে গেছে, দেখুন,
প্রাচীন মানুষের দাঁত, নখ,
মুখোশ চুরি করে
দেখুন, কিভাবে
আপনার সামনে এসে দাঁড়াল, বলল-
‘বাবা, সব জাদু শেষ’
অ্যাকোয়াটিকা থেকে বলছি, স্যর
আমার আত্মহত্যার ভিডিওটা একবার
দেখবেন,স্যর
গতকাল সবচেয়ে বেশী শেয়ার হয়েছে,স্যর,
একবার দেখবেন
আমার জলের পোশাক থেকে প্রবাদ খুলে
যাচ্ছে
মাছের মায়ের পুত্রশোকে
মাছ রান্নার রেসিপিটাও একবার শেয়ার
করবেন,
স্যর
চোখে জল এসেই যাবে
মশলা নিয়ে কিন্তু স্পেশ্যাল কমেন্ট
দিতে হবে,
স্যর
শহীদ মিনার থেকে বলছি,স্যর
এখান থেকে আমলাশোল, লেনিনগ্রাদ,
সিঙ্গুর, অযোধ্যার দূরত্ব সমান
স্যর, আমি
চাই, এই বিষাক্ত মদ নিয়ে আপনি কিছু লিখুন
গন্ধটা আস্তে আস্তে এগোচ্ছে আপনার
দিকে
আপনি পারফিউমের শিশির তলায় চাপা
দিয়ে রেখেছেন
আমার মৃত্যুর খবরটা
আমার হারিয়ে-যাওয়া ভোটার কার্ডটা
কিন্তু
এখনো আপনার হাতে রয়েছে, স্যর
আমার এঁটো হাতটা
আপনার ভোক্যাল কর্ডের খুব কাছে
স্যর
কবিতাপাঠের মঞ্চ থেকে বলছি স্যর
স্যর, চেয়ার
মোছার দরকার নেই
দাড়ি কামানোর দরকার নেই
কপোতবৃত্তির পুরস্কারের মতো
টাকা ক’টা
দিন না, স্যর
বহুকাল কিছু খাই নি
তরুণ কবিকে প্রতারিত করা টাকার
স্বাদ
কেমন করে ঢুকে যাচ্ছে
মদ-জুয়া-আদিমবৃত্তিতে
চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কবিতা পড়ুন স্যর
আপনার শব্দের ভিতর আমাদের মৃতদেহটা
আরেকটু পচে উঠুক