পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায়
শিশুরা বড় অসহায়
উঃ মাগো আমাকে কেউ একটু আলো দেবে,
একটু প্রতিবাদী বারুদ!
আমি আবার হাসব!
জীবনের ফুলঝুরি জ্বালাব।
এই যে এই শিকর বাকড়
এই ভূখণ্ড শ্বশুরালয়
সর্বত্র আজ থিমথিমে শোক।
কোথাও কোনো মানুষ নেই,
আছে শুকনো ডালপালা।
তোমরা শুধু দু হাত তুলে নাচতে বলো•••
কবিতার শব্দে শোকাহত হৃদপিণ্ড
কেঁদে উঠলে ধমক দাও
বিশ্বাস কর এখানে কোনো
ঝুমঝুমির আনন্দ নেই, মৃতদেরও
শান্তি নেই।
চিতা নেই, নদীরাও
মৃত।
ঢেউ নেই, আছে
কান্নাবৎ দেহ।
মন্দিরে বাজে না শাঁখ, বাজে
না ঘণ্টা।
ধূপের ধোঁয়ায় পবিত্র হয় না এই
ধরাধাম।
পুরোহিত নেই। ফুলের গন্ধ নেই।
ভক্তির প্লাবন নেই ।
আছে শুধু মদের ভকভকে গন্ধ!
মাতাল ঈশ্বর আর পাড়াতুতো কাকুদের
কামার্ত লিঙ্গ!
বিকৃত উল্লাসে রক্তে ভেসে যাচ্ছে
অপরিণত যোনীদ্বার।
ঐদ্যাখো আমাদের আদরের মৃত সন্তান!
চোখে তাঁর অভিমানী চরাচর!
মন্দিরে অধিষ্ঠিত ঈশ্বরের নেশাতুর
হাততালির শব্দে
ভেঙে যাচ্ছে সম্পর্কের অম্লান
বিশ্বাস!
শিশুরা বড় অসহায়, আলোহীন!
একটু আলো দেবে কেউ, মনুষ্যত্বের,
প্রতিবাদের ?
একাদশীর সন্ধ্যায়
ইদানিং একাদশীর সন্ধ্যায়
নিয়মিত নিরামিষ রাজনীতির
পাঠ নিই আমরা দুজন।
আমরা দুজনেই আনাড়ি পাঠক
কেউ জানি না সংসার সম্পর্ক
আর বাজারের লেনদেন!
সস্তার পাউডার, আঁশছাড়া
মাছ
কি করে কিনতেন ছেলের বাবা
ভেবে ভেবে আকুল হই
ছেলের মনখারাপ জেগে ওঠে অহরহ
শাঁখাবিহীন হাতে আমার নীরব
যন্ত্রণা
কিলবিল করে ওঠে ছাদের কার্নিসে
ওর ন্যাড়া মাথায় সদ্য ওঠা চুলের
কুচোয়
বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও
ভালোবাসা
চেটেপুটে খেয়ে নেয় ঋণ সহযোগে
রৌদ্র উঠলে বাজারের থলে হাতে
খুঁজতে যাবে সস্তার দোকান
আর কাঁধে তুলে নেবে চুল থেকে নখ
পাঁচমিশালি দায়িত্বের গুরুভার।
আমার কোনো তুমি নেই
আজকাল আমি আর তুমি ছাড়া
কবিতার শব্দব্যঞ্জনা কেমন যেন
পানসে বোধ হয়
প্রসঙ্গত বলা ভালো
আমার কিন্তু কোন তুমি নেই
কদাচিৎ ঝুলতে থাকা
কোনো বন্ধুসুলভ তীর
হৃদয়ের এ ফোঁড় ও ফোঁড় হলে
পুরনো দিনের গান আমাকে
পাগল করে তোলে
সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের পদতলে
উগড়ে দিই যাবতীয় দুঃখপাতা মন
অনুপ মান্না কিম্বা জগন্ময়ের গানে
হাতড়ে হাতড়ে খুঁজি জীবনের
সবচেয়ে বড় হাহাকার
আবার একা হতে হতে
আমার বহু হারানো স্মৃতিসঙ্গী
নিঃসীম শূন্য আড়াইতলাকেই
প্রেমিক মনে হয়
ঘরের দেয়ালে ঝুরঝুরে কান্নারা
সজল হয়ে ভিজিয়ে দেয় বালিশ।
চিত্রপট
পৃথিবীর দীর্ঘতম চুমুর খোঁজে
এগিয়ে চলেছি উজানের লক্ষ্যে
নক্ষত্রের তাপে সেঁকে নিচ্ছি আদিম
অঞ্চল
ঠোঁটদুটো একই নিবিষ্টতায় থিরথির!
একটা দুরন্ত চুমুর খোঁজ পেলেই
চিতার আগুনে নিজেকে ঋদ্ধ করব
গোপনেই কথা দিয়েছি নিজেকে
নীল হতে হতে পালক •••
লাল হতে হতে ফুলকি •••
তপ্ত লেলিহান শিখায় শেষবার
মৃত্যুর মত মিশে যাব শিনশিন স্রোতে
ছাই দিয়েই তৈরি হবে কিংবদন্তি
কবিতার রহস্যময় চিত্রপট!
কবিত্বের হয়রানি
শব্দভাণ্ডার স্তিমিত হয়ে আসছে
ম্যাডোনার
ইদানিং চোখের জ্যোতির মত ধীর
চিন্তাশক্তির মধ্যে হাজারও মাকড়সা
জাল বুনে চলেছে ক্রমাগত
মুখরোচক বিরিয়ানি 'মশলা'র
অন্তমিল খুঁজতে খুঁজতে হয়রান
কবিশক্তি
মনে মনে 'হসলা'
'কষলা' 'পশলা'য় থামতেই
কেমন যেন একটা বৃষ্টি বৃষ্টি গন্ধে
শীত শীত করে উঠল দীর্ঘ রাত
কুয়াশারা ঘিরে ধরছে আতসকাঁচে
সব ঝাপসা আর ঘুমঘুম
কে যেন কানের কাছে বলে উঠল
__ প্রবাদবাক্য "কবি
কবি ভাব, কবিত্বের অভাব"•••
চোখে কি বিড়ালে ইয়ে করেছে মা?
কবিতার চেয়ে ঘুম ভালো
আলোটা নিভিয়ে ঘুমাতে দাও না ! ••••
কে রে? ভেবে
চোখ ঘুরাতেই
বাড়ির মিনসে গাবদা হুলোটা মাছ ভাত
খেয়ে
দিব্যি সুখের লেপ থেকে মুখ বের করে
ফিক করে পিটপিট গেয়ে উঠল,
'ঝিংকি তুই বৃষ্টি হতে
পারতিস।'
ঝিংকি তুই বৃষ্টি••
উফফ্ কি অপমান!
সুগমের পথ
মৃত্যুর শিয়রে এসেও মাংসের গন্ধ
খুঁজে মরে কোনো শ্যাওলামাখা জিভ
গদের আঁঠার মত হিলহিলে লোভী
কাঙালিয়ানায়
চাটতে থাকে অসম দিগন্তের স্তন
চ্যাটচেটে নীলহাত মাতোয়ারা
হতে চায় নির্বীজ হাস্যকর চাতুর্যে
!
হে বৃদ্ধ আর কতদিন ধারালপনা
দেখাবেন?
আর কত সহবাস লিপ্সা মৃত্যুপথযাত্রী
পতঙ্গের?
যুবতী রোদের গায়ে
মেলতে চান লালসার ডানা
ছিঃ আর কত জঞ্জালে অস্পৃশ্য করবেন
শুভাময় পৃথিবীর কোল?
এবার থামুন! পিতৃ-ভাতৃ সম্পর্কের
শ্রেণীবিন্যাসে নিয়ে আসুন পারিজাত
সুগন্ধি
অগমএর পথে পিছন ফিরে বলুন
সুগমের মন্ত্র___
অসদ মা সদ্গোময়
তমস মা জ্যোতির্গময়!
প্রভুই আপনাকে পথ দেখাবে!