মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

দিশারী মুখোপাধ্যায়


দিশারী মুখোপাধ্যায়

ঠিক ঠিকানার বাড়ি
১)

খোলা জানালা সামনে পথ তাতে যাওয়া আসা
কিছু গাছ মানুষের ক্রীতদাসকিছু আগাছা 
মানুষের প্রয়োজনে লাগেনা তাই 
মানুষ জানেনা তার প্রয়োজন
জানা আর অজানায় গলায় গলায়কোনদিকে রাম
কোনদিকে মরা মানুষ বোঝেনাখুব পণ্ডিত কিনা

রাস্তাপাকা বাড়ির জঙ্গল পার হলেঅদূরে প্রান্তর
প্রতিদিনের অস্ত যাওয়া সূর্যগুলি যেখানে জমা আছে
তাকে ট্রেজারি বলতে পার প্রসূতি ভবন তোমার
চারদিকেজানালা খোলা রাখ দীক্ষা নাও
করমর্দন কর দরজার সঙ্গে

পায়ের তালুতে আছে জন্মের কৌশল শিখে নাও






২)

একা উপরে আকাশ একা সামনে দিগন্ত
চারপাশের প্রতিবেশীরা একা একটি বেলগাছ একা
পুরনো কাঁটাগুলো ভেঙে গেছে নিচে পড়ে আছে একা
গলির রাস্তা নুনছাল ছিঁড়ে গেছে গেছে কয়েকটি দাঁত
রাস্তাটি একা তার সঙ্গে একা ভাঙা একটা গ্যারেজ
তোমার নিশ্বাস আমার গায়ে পড়ছে তুমি একা তবু
আমার প্রশ্বাস তোমার চুলে চুলগুলো একা 
আমি একা আমার সিঁড়ি একা জানালাগুলো
পরপর একাএকা সংসদের বাংলা অভিধান
কয়েকটি মশা আর একঝাঁক মৌমাছি বলে গেল
তারা একা যেরকম একা ফুলদানির সিন্থেটিক ফুলগুলো 
মানপত্র ও স্মারকগুলো একা একা শব্দটি
যেখানেই মুদ্রিত বা উচ্চারিত সে একা 
শেয়ালদা স্টেশন বড় একা






৩)

হাওয়া বইছে শীতল তাপমাত্রা পাঁচের নিচে
ঘুমের ভেতর তাপ আরো নেমে যায়আরো হাওয়া
হাওয়া আছেকথা নেই কথা বিহীন হাওয়া
সে আরো ঠান্ডা কথা নেই কেন অজানা 
নেটওয়ার্ক যথাযথ টাওয়ার সম্পূর্ণ 
তবু ছবি নেই স্টিকার বা ইমোজিও নেই

তুষারের নিচে চাপা আমি আমি নেই আমি তুষার
তুষারে আমাতে অভেদদরজা নেই দরজার কড়া নেই
কড়া নাড়াবার হাত নেই তুষারে কড়া নাড়ে না
দরজার ভেতরে তুষারবাইরে হিমোগ্লোবিন নেই
অনুচক্রিকাওতুষারের খুব খিদে খেতে ভালবাসে

সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ব্রহ্মাই হাপিস 
কেবল খিদের জ্বালায় বরফ কামড়াচ্ছে বরফকে






৪)

শব্দ অসংখ্য শব্দ অনবরত অবিরাম 
জাত ও গোত্র সহ সাদা ও কালো 
লম্বা ও বেঁটেটিকালো ও থ্যাবড়া নাকের শব্দ
আমিষ শব্দ নিরামিষও আছে
শব্দের মিছিল জনসভা চুক্তি ও চুক্তিভঙ্গ

শব্দের নখ আছে নখের জন্য আরামদায়ক থাবা
দাঁত দিয়ে বানানো শব্দজিভ দিয়ে লালানো 
চোখ দিয়ে আঁচড়াবার প্রেমে চুষবার

শব্দ ডাকে ডাকছে শব্দের মেঘ আছে 
আছে গর্জন ও চমক খিদে আছে 
তৃষ্ণা আছে শব্দ রক্ত চায় 
রক্ত তার ফেবারিট খাদ্য ও পানীয় 

শব্দের কান্নাও আছে কাঁদছে






৫)

আমি গাছ কেউ বলে উদ্ভিদ কেউ পাদপ
মানুষের আছে শ্রেণী শ্রেণী খেলা আমাদের ঘাড়েও
চাপানোওষধি বনস্পতি লতাগুল্ম ঝোপঝাড়
আমার মা আছে মাতামহী ছিলেন ছিলেন প্রমাতামহী
তারও আগে আমরা সুস্থ ও সবল ছিলাম সবুজ এবং রামধনু
আমরা আকাশ দেখি মাথার উপর মাতামহী বলতেন
আকাশ আমাদের বুকে আকাশই আমাদের বুক 
আমরা আকাশের স্পর্শ চাই আকাশ ফলাতে চাই 
ফলাই ডালে পল্লবে ফলাই সন্তান ধারণ করি
তাকেও শেখাই গান শেখাই গানের সরগম
ফসল ফলানোর গান গানের সমুদ্র 
আর শেখাই গূঢ়তত্ব আমাদের জীবন আসলে বলী
মানুষের বলী আমরা মানুষের গ্রাস 
আমরা মানুষভক্ত মানুষ আমাদের সর্বনাশা প্রভু