পল্লবী দাস
জ্যোৎস্নার জোনাক
বহুতলের ছাদ চড়া জ্যোৎস্না আর
গাছতলার জ্যোত্স্না,
দৃশ্যমান সুখ একই;
পার্থক্য শুধু কাটাকুটি খেলায়;
জটলা পাকানো সুতোর গিঁটে
যাদের ভবিষ্যৎ হুমড়ি খায়,
আধপোড়া রুটিই তাদের কিংশুক;
তবুও এরা জ্যোত্স্না এলে জোনাক
দেখে;
বাস্তবভূমি হোক না ছন্নছাড়া,
জীবন তো এদেরও হিমেল, মন
চির মরুদ্যান!
মরশুমি
অপেক্ষা আর উপেক্ষার মাঝখানের যে
জীবনযাপন ,
শুধু এইটুকুই মুক্তো,
মরুভূমির বরফে আদরের স্লেজগাড়ি;
এখানে সম্পর্কের হাওয়া আজও
বিচ্ছিরি
আবেগ ঝড়ে মুষলধারায়, যেন
লেবুফুল;
কালশিটে যত দাগ আছে সবটাকেই
আলগোছে ঘষে উঠাতে হয়,
দেখিস, একদিন
সব অভিযোগ
উড়োজাহাজে করে চলে যাবে উত্তরে;
হয়ত,সেইজন্যই আজও দেয়াল
জুড়ে শেওলা জমেনি!
ইতি চিঠি
যেতে চাইনি বলেই হয়ত যাওয়া হয়নি ,
বেডরুমের অর্কিড ভরা ফ্লাওয়ার ভাস
রোজ তাকিয়ে থাকে ছবিটার দিকে,
আমি আজকাল আর তাকাইনা;
নাকের নীচে বিন্দু বিন্দু ঘাম,
প্রতিটা মুহূর্তের পিছু ডাকে,
কাতরে উঠি ঘুম থেকে;
চোখ থেকে মেঘের দলাগুলো গলা অবদি
আটকায়,
কবে শ্বাস আটকে দেবে কে জানে;
গাড়ি করে অফিস যেতে কাঁচের ওপারের
সবটা দেখি,
সবটাই মিথ্যে,তুই
ছিলি সত্যি;
ঘটা করে খোঁপায় গোলাপ লাগেনা সে
অনেকদিন,
চুড়ি টিপ এরাও সেই থেকে আর বায়না
ধরেনা;
জানিস, এত
করে আগলে রাখার পরও হারিয়ে ফেলার ভয় হয়,
ঘরের কোণে আয়নাটা ধুলোয় ঢেকে চুপ,
বাইরে বৃষ্টিতে পাথর ঝড়ে,আর
ভিতরে আবেগ;
কাগজে মুড়ে যে জীবন আমার জন্য রেখে
গিয়েছিলি
আজ তার বয়স দুবছর,
সুখ আজ মেঝেতে ভেজা পায়ের ছাপের মত;
তোর আকাশে রোজ দুবার খোঁজ নেই,
তুই ঠিকই দেখিস; হয়ত ভালোই
আছিস,
হয়ত আবার দেখা হবে কোনো এক মাঝপথে,
কিন্ত আবেগ চাইবে আটকাতে!
মরীচিকা
লোডশেডিংয়ে কথা নেভে, রোজ
হোঁচট শেখে পা,
ব্যথা চুঁইয়ে গা ভাসে, আমি
তোয়াক্কাও করিনা;
চোখ রাঙ্গানো ঠোঁট ফুলিয়ে, পিছুটান মুদ্রাদোষ,
তুমি ভাবো সবটাই জানো,আমি
হেসে মরি ,টুঁশব্দও
করিনা;
ভালবাসা রোজ হাঁটু মোড়ে,পাশে
গভীর কোনো খাদ
তুমি ভাবো মায়ায় জড়িয়ে রাখো,আমি
চুপ ,আপত্তি তো করিনা;
বাইরে বসন্ত,ভেতরে
বর্ষা,এককাল সবুজ দেখেনি মরুভূমি
দেহ হয়ে গেছে দীঘি,মন
ঘুণে ধরা,আমি আর ওপাশ ফিরিনা;
চোখ ঢেকে,কলম
হাতে,যতবারই চাই ভিজতে,আকাশ দেয় বাধা,
তুমি ভাবো সবটাই জলপ্রপাত, ভেতরে
ঠিক দাবানল,
আমি পুড়ে যাই তবুও শ্বাস ফেলিনা!
অনাবৃত
একাকীত্ব দোসর,
ঠিক যেন কম্পাস হারিয়ে দুচোখে সমুদ্র ভাসে;
খসে পড়ার আগে জীবনের ছাদ থেকে উঁকি
মেরে
তারা দুটো নিজেকে খুঁজে নেয়,
অনাবৃত মন, রাগপোষ্য
সকাল,
দুদিকে ঠোঁট ফাটা নদী,
মাঝখানে ঘেন্নার অববাহিকায়
হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা সে দেখেনি,
দেহ মৃতবাহী যান,
আর অনুভূতির সবটাই শ্মশান!