মধুমিতা মুখোপাধ্যায়
মেঘলা মন....
মেঘলা মন দুপুরবেলায়
রোদ্দুরেতে করে স্নান!
সন্ধ্যারাতে বাষ্পে জমে
ঝরঝরিয়ে ভাসায় প্রাণ!
আষাঢ় নামায় চোখেরপাতা
কপোল গড়ায় সিন্ধুতে !
শিশিরভরা শিউলি সুবাস
হারায় ভোরের বিন্দুতে!
পৃথিবী পূর্ণা রজঃস্বলা
তবু মানবজমিন অন-আবাদ!
কালজানিতে মরণ ভাঙন
জামশেদিয়া পেয়ালা খোঁজে
রুবাইয়াত!
(মধুর স্বপ্নে)
আষাঢ়ে গল্পে......
আষাঢ়ে গল্পের মতো
আমার নিশুথিরাতের স্বপ্নগুলো
বৃষ্টিস্নাত হয়ে
সদ্যভেজা একরাশ চুলের ডগা থেকে
টুপ টুপ করে ঝরে পড়ে
তোমার ঘুমন্ত শরীরে!
প্রগাঢ় আলিঙ্গনে স্নিগ্ধ
দোলনচাঁপার গন্ধ
উন্মত্ত আবেশে ভরিয়ে নিই
আমার অলীক ভালবাসায়........
আচমকা সম্বিত ফিরলেই.....চোখ মেলে
দেখি
নির্মল লাবণ্যে মোহাবিষ্ট হয়ে
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছ তুমি 'চাঁদ'!
চরকাবুড়ির সুতোয় বোনা
তোমার পরিত্যক্ত সাদা চাদর জড়িয়ে
আমি বিষাদনীলিমা ধীর পদক্ষেপে
নেমে আসি বাস্তবে........!
বিবর্ণ জলছবিটা বিষণ্ণ তুলি দিয়ে
রাঙিয়ে নিই পুনর্বার তোমার মনের
রঙে.....
তোমার আকন্ঠ চুম্বনে শিহরিত আমার
দুই
ঠোঁট থেকে ফোঁটা ফোঁটা নীল রঙ
গড়িয়ে
ভরে তোলে ভুলের অতলান্তিক
মহাসাগর......
ফেরার পথে পিছনে চেয়ে
দেখি..........
আমি ঘরের চৌকাঠ পেরোনোর আগেই
একে একে ঝরে গেছে তোমারই দেওয়া
ভুল ভালবাসার কিংশুকের পাপড়িগুলো!
আমি সযত্নে সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে
আবার ডুবে যাই সেই
নীলে.......অতলের আহ্বানে
নতুন এক গল্পের খোঁজে......নিঃসঙ্গ
স্বপ্নের দেশে......
আষাঢ়ে এমন প্রতিটা রাতই যে
আমার অবশিষ্ট জীবনের স্বপ্নেবোনা
রাত !
(মধুর স্বপ্নে)
ফেলে আসা স্মৃতি
সহস্রাব্দ তৃষিত
একজোড়া শালিক
ভিজেছিল মুখোমুখি
দুটি ছাতার নীচে !
সুরভিত বাসরশেষের
গোলাপ অন্তর
শিউলি-বকুলকথা
সুগন্ধিত স্মৃতির পিছে!
যাযাবর প্রবণতা
নির্মল প্রলাপ-ব্যথা
বেলাগাম আকর্ষণে
ফেরারী এ-মন থেকেছে........
তোমার
দেরাজে...........!
( মধুর স্বপ্নে)
যাযাবর এক প্রেমিক.......
যৌনতাকে প্রেমের চাদরে মুড়ে
ঢেকেছ নষ্টনীড়,
বহুগামী জীবন;
কিন্তু এ মন...........
সে তো নয় যাযাবর
তোমার মতোন;
যুক্তির বল্কল খুলে
নির্লজ্জ্ব বাক্যে যথেচ্ছাচার
খোঁজেনি কখনো মুক্তির উপচার......
আত্মাতে ছুঁয়েছি যখন
একনিষ্ট মন তখন.....
শরীরের কিই বা গেল তাতে......!
উদাসী বাউল দুচোখে
ধার করা ঘুম মুছে
হাতড়েছ যে দেহের উত্তাপ
বিশ্বাসের ভুল ব্যাখ্যায়
ঘরে ফেরে অবেলায়
ওয়ালেটের ছোট্ট মোড়কের
অধ্যায়.......!
নষ্ট জ্যোৎস্নায় তবু
মলিন হয় নি এতটুকু
বিষাদনীলিমার সু-নীল !
বৃথা তুমি
হতাশায় জ্বালালে নিখিল!
(মধুর স্বপ্নে)
ভ্রূণ
আমার জানলার ঘষা কাঁচে
যখন রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের
হলুদাভ আলো প্রতিফলিত হয়
তখন নিঃসঙ্গ বিছানা জুড়ে
সিল্যুয়েটে আঁকা হয় বিরহী যক্ষের
পরম প্রিয়ার স্বপ্নের বাসভূমি
অলকাপুরীর চিত্রপট.........!
আষাঢ়ের প্রেমজালে আবদ্ধ লজ্জ্বাবতী
মেঘ
কখনো ঝিরঝির তান তোলে
একজোড়া ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমীর মিলন
বাসরে........
কখনো বা প্রবল প্রেমের ধারাবেগে
কাকভেজা ভিজিয়ে দেয়
একজোড়া পানকৌরীর বাঁধভাঙা
আকর্ষণ..........!
সারাটা রাত জুড়ে চলতে থাকে
বন্য ভালবাবাসির
মাদকতা.......নিবিড় সহবাসে
ক্লান্ত দুটি মন পরস্পরকে আঁকরে
ধরে
তলিয়ে যায় সব পেয়েছির
দেশে..........পরম আবেশে!
রাতভোর বৃষ্টির পর ভোরের সোনালী
আলো
ছোট্ট বসন্তবৌরির ডানায় এসে পড়লে
আকাশগঙ্গার পথ বেয়ে সোনারতরী
ভেসে যায় সুদুর সাইবেরিয়ায়;যেখানে
পরিযায়ী পাখিদের বাস.........বসন্ত
নামার আগেই
যারা তুমুল কলকাকলিতে ভরে তোলে
আমার নিঃস্তব্ধ জীবন! আপনার অভ্যন্তরে
অনুভূত হয়
নড়াচড়া করে ওঠছে
প্রাণ...........তার আসার সুখ
হাত ছুঁয়ে অনুভবে দেখি ছোট্ট নীল
তিলে তিলে বেড়ে উঠছে আমার জঠরে!
আমি উর্বরা পৃথিবী তখন আপন খনিজ
দুগ্ধে পরিণত করে সঞ্চিত করি
স্তনগ্রন্থিতে!
দশ মাস দশ দিনের অপেক্ষার পর
আপনের থেকেও পরম সে আপনজন
আকাশকুসুম মরুদ্যান হয়ে যেন ধরা
দেয়
এই ধূ ধূ মরুজীবনে........!
(মধুর স্বপ্নে)