অর্পিতা সরকার
জলরঙ্
চাঁদ বুকে নিয়ে কালো বিলের জল
হাওয়া ভাঙে,
কুচি কুচি আলো ভাগ হয়ে যায় ডাহুক
পাখির ঠোঁটে,
সন্ধ্যার প্রেমিকটি ফেলে গেছে
দীর্ঘশ্বাসের উষ্ণতা
তারপর সন্ধ্যাতারা কপালে
প্রেমিকা ভাসিয়ে দিয়েছে
গায়ে-হলুদের শাড়ি__
জলের উঠোনে রোদের ছায়া পড়লেই
সব ফুল কুঁড়ি হয়ে যায়, পরিণত
হয় ফল।
কোনো এক শীতদেশের আগন্তুক উষ্ণতর
সুখে জল মাখে;
জলজ গেরস্থালী ভরে ওঠে...
পরিযায়ী ঋতু মুছে দেয় হলুদের দাগ।
কথা ভেঙে
কথা দিলেই রাখতে হবে এমনটাতো নয়,
সময়জলে বিষাদপাথর হতেই পারে ক্ষয়।
তবুও তুমি শামুকখোলস, শ্যাওলামোড়া
বুক
সময় পেলে মেখে নিও বৃষ্টিভেজার
সুখ।
জল মুছে দেয় বালির জীবন, চলার
পথের ছাপ,
মুখ লুকিয়েও বেঁচে থাকে আড়ালডোবা
ধাপ।
রৌদ্রে ওড়ে জমাট পলি, জলের
আলপনা,
ঝাপসা আলোয় শিখে নিও ভাঙনঢেউ গোণা।
দ্বীপভূমিতে রোজনামচা স্বভাবনীরে
কাটে,
পত্রলেখার কালির বাঁধন আঙুলভাজের পাটে।
ভুলে যাওয়া কথারা সব বিস্মৃতিদ্বীপ
বেঁধে,
বাড়িয়ে তোলে কথার খেলাপ জবান ভাঙার
খেদ-এ।
তিরিশ কিংবা কুড়ি বছর, তারও
অনেক পরে,
ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি সময় বুঝেই
মরে।
তুমিও নাহয় কথার খুনী, কী
আসে যায় তাতে,
মৃত ফুলেই প্রেম সাজিয়ে ভালোবাসা
মাতে।
শিউলি
শিউলিরা ফোটে রাত্তির হলে রোজ
সুবাস ছড়িয়ে লালপৃথিবীর কোণে,
মালা গাঁথে গানে মেটাতে প্রেমের
মৌজ
ছিঁড়ে গেলে সুতো বিস্মৃত সেই
ক্ষণে।
লোলাপাঙ্গীরা মাটি দিয়ে গড়ে মেয়ে
আত্মার তবু জনকোষে থাকে জমা,
পতিতালয়ের মৃত্তিকাকণা দিয়ে
অকালবোধনে তিমিরনাশিনী উমা।
শরৎ এসেছে, আলো
নিভে যায়
অঞ্জলি নয়, পিষ্ট
থাবায়।
শুধু একদিন , তার
বেশি নয়
দেবতা কিংবা দানবের পায়।
লেখা
হাতের লেখা বদলে গেছে অনেকদিন।
মুছতে মুছতে ক্ষয়ে গেছে স্লেট,
খসে গেছে ফ্রেমবন্দি বাঁধনগুলো ।
যত্ন করে ডুবিয়ে দিয়েছি
আমার প্রথম অক্ষর,
আমার প্রথম সূর্য,
আমার প্রথম জল,
আমার ডাকনাম...
ধাঁচ বদলে কষ্ট এঁকেছিলাম সাদা
পাতায়,
হাজার চেষ্টা করেও মোছা গেল না
তাকে
লেখারা পাল্টে গেছে সব।
স্লেটলিপি শুকিয়ে নিয়েছি জলপোকাদের
পায়ে পায়ে।
একটা সময়
'ভ' বলতে
শুধু ভালোবাসাকেই বুঝতাম।
অভাব
হাতে সময় ছিল না।
বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি সেদিন,
পথে ছড়িয়ে ছিল বকুল
গন্ধে মালা গেঁথেছি পেরিয়ে তাকে
শুধু কুড়োতে পারিনি।
মরা গাছটার পাশে ট্রেন থামে রোজ।
চোখে চোখ পড়লেই
হত্যাকারীকে চেনাতে চায়,
অস্থির হাত সময় নাড়াচাড়া করে,
তীক্ষ্ণ হুইসেল হাফ ছেড়ে বাঁচে।
মাঝপথে সাহসী হতে পারিনি।
একটা গোটা উপন্যাস নিয়ে
রক্তের মতো রঙ্গন গাছটা অপেক্ষা
করত,
পাশে বেড়ার ঘর রোজ ঝরে পড়ত
একটু একটু করে।
রাস্তার ধারে এক বৃদ্ধ বসে থাকেন
প্রতি ঋতুতে।
চলন্ত প্রণাম ছুঁড়ে দিলে
হাত তুলে আশীর্বাদ করেন,
কখনো সে হাত স্পর্শ করিনি
শোনা হয়নি শুভাকাঙ্খীর ভাষা,
সমস্ত দৃশ্যকুচি ঝেড়ে ফেলে ঘরে
ফিরি ।