তন্ময় ধর
শ্রাবণ ১
‘প্রত্যাসন্নে নভসি দয়িতা জীবিতাবলম্বনার্থী
জীমূতেন স্বকুশলময়ীং হারয়িষ্যন প্রবৃত্তিম’
বৃষ্টি থেকে অল্প পর্যটক আমায় দেখছেন। তারপর তোমার ধর্ম
থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন ঐশ্বরিক জলরঙ। মৃতবৎসা এক মানচিত্র থেকে বহুদূরে এক
নিরুদ্দিষ্ট মেয়ের কাঁচা ঘুম থেকে গড়িয়ে পড়ছে প্রাচীন ইলিশ রান্নার কৌশল। জলের
সর্বত্র বোবা এক তরঙ্গের গন্ধ
লবণাক্ত পাথর থেকে বহু বর্ষা তুলে নিয়ে গিয়েছে কেউ। পাহাড়ী
গানের মৃত গর্ভফুল থেকে ঝুলে আছে একটা বিপজ্জনক শূন্যতা ও দেহকোষ। এক পা এক পা
শিকারী ডাহুকের আলোর নীচে নেমে যাচ্ছি আমি। পাখির ভয়ার্ত ডাক শুকিয়ে উঠছে ঈশ্বরের
জিভে।
পর্যটকের থার্মোফ্লাক্স থেকে জাতিস্মরতার ঘর খুলে ফেলেছি
আমি। সে ঘরে রঙ নেই। কালপুরুষ অঙ্গের পাশবিক এক নক্ষত্র শুধু বৃষ্টির পাতলা চাদরে
লিখে রেখেছে জন্মান্তরের এমব্রয়ডারি। সুতোর রঙ কোন এক উর্ণনাভদোষে শুধু বুনেই
চলেছে সন্তানের দেয়ালা... শুধু বুনেই চলেছে
শ্রাবণ ২
‘ধূমজ্যোতিঃ সলিলমরুতাং সন্নিপাতঃ ক্ব মেঘঃ
সন্দেশার্থাঃ ক্ব পটুকরণৈঃ প্রাণিভিঃ প্রাপণীয়াঃ’
সরীসৃপের দাগ থেকে একটা ছবিতে ঈশ্বর লাগছে। আয়নার ওপাশে
অন্ধযুগ থেকে গড়িয়ে পড়ছে ভয়ের ফোঁটা ফোঁটা রঙ, নাভি, উদ্বৃত্ত
নেলপালিশ। সাহসের ভিতর আমরা চুল আঁচড়ে নিচ্ছি। ফেনাভাতের ওপর তীব্র ঠেলে রাখছি
উদ্বাস্তু পরিবার। অলিখিত ঈশ্বরের ওপর মাছি বসছে।
সে মাছির দংশনশক্তির কথা সময় জানে না। সময়ের প্রহরীর
বীর্য্যশক্তি কমে যাচ্ছে। নন্দলালের উমার কমলা আলোয় তোমার মুখ পুড়ে গিয়েছে। আর এত
কাছে বৃষ রাশি। বর্ষ বর্ষ ক্ষণং মূঢ়ঃ – বড্ড নিরামিষ চলছে। ঋতুজটিলতায় পড়ে থাকা লবণের ভেতরেই ব্যায়ামের পরামর্শ
দিচ্ছেন চিকিৎসক।
পায়ের শব্দে উড়ে যাচ্ছে অর্থপূর্ণ মাছি। আর টাটকা মাংসে
গেঁথে দেওয়া হিংয়ের গন্ধ খুঁজতে এসে আমি দেখছি আবছা আলোয় তুমি জড়িয়ে দিচ্ছো
পাখিদের খাবার। রোদ্দুরে মেলে দিচ্ছো ভেজা অভিনয়ের জামাকাপড়।
শ্রাবণ ৩
‘গর্ভাধাণক্ষণপরিচয়াৎ নুনমাবদ্ধমালাঃ
সেবিষ্যন্তে নয়নসুভগং খে ভবন্তং বলাকাঃ’
জোলো হাওয়ার ভিতর একটি রহস্যময় তীর এসে বিঁধে যায়
তোমাকে-আমাকে। দৃশ্যের শেষ আর্দ্রতা থেকে মাংস চাইতে আসে বিকলাঙ্গ কালপুরুষ। আমরা
সরে যাই। মানুষের চেয়েও গভীর বৃষ্টিতে ফেনাভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
অন্য এক বিজ্ঞাপনে আমাদের ঘুমের ভেতর থেকে জলকলমীর লতা টেনে
নিচ্ছে মহাপ্রাবৃষা। অসহায় পরমান্নের গন্ধ থেকে চিনির হিসেবের ভেতর দিয়ে আমরা
হেঁটে চলেছি। এক অসামান্য আগুন শুধু আমাদের দর্শক
গর্ভফসলের নীরবতা থেকে একই খাদক তুলে নিচ্ছে আমাদের আলো।
টের পাওয়া-না-পাওয়া বর্ষার এক শীতল পদ্ধতিতে পাখির কঙ্কাল ও সাপের খোলস দেখে চমকে
উঠছে আমাদের আলপথ। জলরঙে উড়ে যাচ্ছে অগুনতি ‘চোখ গেল’ পাখি।
শ্রাবণ ৪
‘মেঘালোকে ভবতি সুখিনোহপি অন্যথাবৃত্তি চেতঃ
কন্ঠাশ্লেষপ্রণয়িনি জনে কিং পুনর্দূরসংস্থে’
এইভাবে আরো একটা শব্দহীন শব্দ ব্যবহৃত হয় আমার মিউজিয়ামে।
ভিজিটর’স বুকে আমি বরবার সই করি। কাঁচে প্রতিবিম্ব পড়ে মৃতের
উদ্দেশ্যে রাখা ক্ষুধা, জীবাশ্ম ও
অস্ফুট দন্ডের। এত বৃষ্টিতে ভিজেছো কেন তুমি? কি নাম এই শাড়ির? তৃষার্ত সিল্ক মথে উ-কারান্ত সৃষ্টিরহস্য... গাইড যদিও বললেন, সময় অপচয় করে ফেলেছি আমরা
একটু একটু করে আগুন চুরি করে পালাচ্ছি... অবিশ্বাস্য
খানিকটা সিল্ক রুট দিয়ে... জলের ভিতর জল নেই, মৃগতৃষ্ণার চিহ্ন নেই... নিজেদের ছায়ার ভেতর বমি করছে খিদে
ও অ্যাসিডিটি... ধূসর মথ দিক পালটে নেমে আসছে অন্য প্রতিসরাংকে... আমি পৃষ্ঠা মুড়ে
রাখি রদ্যাঁ ও ক্যামিই ক্লদেলের প্রেমকাহিনীর
ফরম্যালিনের গন্ধ থেকে অবুঝ বৃষ্টি হয়েই চলেছে অবিশ্রাম।
খিদের মুখে ভুল হয়ে যায় বর্ণমালায়। আহ, চেপে ধরো এই ঐশ্বরিকটুকু। স্বরসন্ধি ভেঙে একটা ভয় গড়িয়ে পড়ছে। কীটপতঙ্গের
সাহসে সেই প্যালিওলিথিক সূর্য প্রবল
শ্রাবণ ৫
‘তাং কস্যাঞ্চিদ্ভবনবলভৌ সুপ্তপারাবতায়াং
নীত্বা রাত্রিং চিরবিলসনাৎ খিন্নবিদ্যুৎকলত্রঃ’
মেঘ-ভাঙা-আলোর আস্তরণ ঠেলে একটা আহত পশু প্রাণভিক্ষা চাইছে
তোমার জিভে,
উজ্জ্বল নাভিতে, নরম দীর্ঘশ্বাসে। প্রত্নপাথরের একটি সীমারেখা থেকে হুইসল ...তীব্র দৌড় শুরু
হচ্ছে। আর তোমার রক্তের ফিসফাসের ভেতর প্রেমের জন্ম হবে সহস্র যুগ পরে। এখন
অভিনয়ের সর্বত্র উড়ে আসছে পিপাসার্ত মাছির দল
হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছি আমি। তোমার রঙে ও জন্মান্ধ
দুধে আমি শ্বাস নিয়েই চলেছি। প্রাগিতিহাসের অস্ত্র হাতে জল থেকে সর্পমাতৃকা উঠে
এসেছেন। দুধ ও জলের গল্প আলাদা করতে করতে আমার পৌরুষকে পাথর করে ফেলেছে হংসমন্ডলীর
আলো
তুমি অভিনেত্রী হিসেবে আরো তীব্র গয়না ও ত্বকপরিচর্যা নিয়ে
ফিরে আসছো বারবার। আহত মাংসে কোন বাধা নেই। বৃষ্টিতে মা লাগছে, শব্দে মা লাগছে। মুখ নয়, রঙ থেকে ভেসে ওঠে সময়ের আরেকটু অভ্যাস। স্পর্শে ও পাখির
চোখে এইবারে ছবি গেঁথে যাবে। জীবন, জীবন। এই
বৃষ্টিতে আর এই নেলপালিশ ব্যবহার কোরো না