রিয়া
ভট্টাচার্য
খুঁজে ফেরা
প্রান্তরখানা
আজ ডুবে গেছে মিঠেজলে....
ধানসিঁড়িটির
তলে থিকথিক করে কাদা,
জোনাকির আলো
নিভে গেছে মাঝরাতে....
ভেকের
কথাসরিতসাগরে জোছনারা নামে মাঝপথে,
কুয়াশার
আস্তিনে এলোমেলো যত কাব্য....
ছিঁড়েখুঁড়ে
খায় মনের কঠিন বেসাত,
আবেগের শিকে
ঝুলে থাকে ব্যার্থ অপারগতা.....
নিস্তব্ধতার
সঙ্গী কাঙাল মালসাট।
খেরো খাতার
ভাঁজে ভাঁজে জড়ানো....
শুকনো
গোলাপসম নিয়তির হাসি,
ভাঁজকরা
ইজেরে লেগে বাতিল স্বপ্নসুখ....
অভাবী
স্রোতের টানে ফিরে ফিরে আসা- যাওয়া,
রাতের
পুকুরপাড়ে মনকেমনিয়া বাঁশির সুর।
ছেঁড়া
চিঠিগুলো নীলখামে মুড়ে----
জঞ্জাল মাখে
অখণ্ড অবসরে,
ভাগ্যের ফেরে
তমালতরুডালে---
ঝোলা ফাঁসি
বলে আজও ভালোবাসি।
সুপ্ত কিছু
চাওয়া পাওয়ার হিসেব---
সুপ্তিমাঝে
মুক্তোন্যায় ঘুমিয়ে থাকে ঘোরে,
অবাক এ
পৃথিবীতে সকলই ক্ষণিক ---
বোবা কলমের
ক্লান্ত লিমেরিকে;
এবার নাহয়
হারানো জীবন খুঁজে নিক।।
মায়াবতী হয়ে ওঠ
পাষাণী
সভ্যতার বুকে বিধিবদ্ধ আঁচড়ের দাগ বেড়ে ওঠে....
খেয়ালী
উন্মাদনারা অ্যাসিড হয়ে ঝরে পড়ে তাতে,
দগ্ধ হয়
কামনার মায়াময়রূপ -----
উদ্বাস্তু
প্রতিহিংসার গজিয়ে ওঠে শেকড়,
ঠিকানাহারা
মননপক্ষীর শব পচেগলে পড়ে থাকে চৌমাথায়----
রুদ্ধকান্না
গৃধ্রসম কুরে খায় তাকে,
চোঁয়া ঢেকুর
তোলে আয়েশি কল্পনাবিলাস....
বিষবাষ্প
মেখে বুকে হাঁটে বাতাসিয়া অ্যান্টিলোপ'
কৃতঘ্ন
ভালোবাসা ভিক্ষা চায় সময়ের দরওয়াজায়----
বামাচারী
অসহায়তা;
জ্বলন্ত
শবাধারে স্ফটিকপিঁড়ি পাতে।
অনাচারের
গাছে দড়ি বেঁধে ঝোলে উদাসী বাস্তবিকতা......
পাপকৃত্তার
কালিমাখা লণ্ঠনে ভরা হয়;
অধরা স্বাতী
নক্ষত্রের ঘোলা পানি,
অন্ধকার শুষে
নেয় অগোছালো যন্ত্রণা ----
মেঘভাঙা
বর্ষাগমে ভিজে যায় অগম্য হৃদপোড়া মাটি....
শমন
পরিত্যক্ত বাতাসে ভেসে আসে-----
পবিত্রতা
ঘেরা কাঠচম্পার গন্ধ....
আদতে সব
কুলসুমের একটা অমিয় দরকার হয়;
নির্ঝরিণীসুতা মায়াবতী হয়ে ওঠার জন্য।।
বৃষ্টিভেজা প্রলাপ
উদারনীতির
বালিশের মুখ গুঁজে----
আজ অসহায়
তাকিয়ে আছে প্রসূতি আবেগায়ণ,
মাথার ওপর
ঝমঝমিয়ে বাজছে;
গলিত
তুষারকণার ব্যবচ্ছেদ ঢাক,
সম্পর্কগুলো
আবার একলা হাঁটছে রাজপথে.....
শৃগালী
কান্নায় মিশে হৃতমান স্বৈরতন্ত্র,
অভাবের
আস্তিনে মুখ গুটিয়ে হাসছে---
সমাপ্তি
মাদকের রাঙতামাখা মোড়ক,
কালের
বিষণ্ণতায় ঝিমোচ্ছে সারমেয়----
নিয়ন আলোর
শেষ উষ্ণতা মেখে,
স্থবির
ভাবনার অগোছালো ছলাকলা---
নিয়তির এঁটো
থালায় মিঠা পোলাওয়ের ঘ্রাণ,
বৃষ্টিরা
আজন্ম অসুখ বয়ে আনে মনের পাতায়......
রয়ে যায় কিছু
পেয়ে হারানোর দাগ।।
পাহাড়িয়া চিঠিগুচ্ছ
আকাশ থেকে
লাট খেয়ে পড়া....
কাটাঘুড়ির
দ্যোতনাময় ছন্দ,
স্বভাবদোষে
আঁকড়ে ধরে মিছে;
প্রতিবার তাই
পতনে আনন্দ।
কালের
জেব্রাক্রসিং এ থমকে দাঁড়ায়.....
নিষিদ্ধ শত
অভিমানের শকট,
আপেক্ষিকতার
বিচারে হয়ত অলীক;
পিশাচীমূর্তি
অবলম্বিতা বিকট।
পেয়ে হারানোর
বেহাগসুরো গানে...
একটানা কেঁদে
চলা গ্রামোফোনের নাকে,
বদলানো সময়ের
ইতিকথাগুলো কাব্যিক;
সুষমাজড়িয়ে
পাশাপাশি বসে থাকে।
ঝিমিয়ে পড়া
অন্ধকারের ঘুমন্ত চোখে...
দাউদাউ জ্বলে
ভাবনা ব্যতিক্রমী,
আদপে সবই
নষ্ট মনের গান;
চেতনাহারা
শব্দ কল্পক্রমী।
ক্ষুধাতুর
বুকে ঝরে হাসনুহানা রস...
অনুভবেরা ফুল
হয়ে ফোটে পাহাড়ের ঢালে ঢালে,
শুখা
নির্ঝরিণী দাগ ধুয়ে যায় বৃষ্টিতে;
এখানে
নির্লিপ্ততা নিত্য কথা বলে।
আবেগে
আস্তিনে লোকানো মায়াময় অনুভূতি...
শিশিরভেজা
ঘাসে কাঁটাবেঁধা পায়ে হাঁটে,
তৃণ আস্তরণে
জমে মুখোশী মলাট;
নি:স্ব
কবিতারা আজ কারাবালা প্রান্তরে জোটে।।
পিঞ্জরী ভাবনারা
টলমলা পায়ে
বাঁধা কন্টক নূপুর,
আঁখিপাতে
জ্বলে কৃত্তা ধরণীর অভিশাপ,
ফেনিল
উচ্ছ্বাসে গলা বেয়ে নামে লোহিত তরল......
কষ বেয়ে
গড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত মর্মোচ্ছাস।
মিথ্যে
প্রতিশ্রুতির খেলাঘরে বসে----
পুরাতন-নূতনের
বিদ্বেষী মেরুকরণ,
অতীতের ছাপে
মুছে যায় বর্তমানি আস্কারা...
সময়ের
দাঁড়িপাল্লায় চলে হৃদিমূল্যায়ন।
ক্ষতির হিসেব
চলে আগাছার ক্যান্টিনে,
সাইনাস বেয়ে
ওড়ে ধূম্রকেশী প্রেতছায়া....
আবেগের জমা
জলে প্রত্যাখ্যানের থুতু;
ঠিক এভাবেই
জীবনের নিত্য আসা যাওয়া।।