ফিরোজ
আখতার
থরের প্রেমিকা
আকাশের গা'য়ে তীব্র
ফাটল ; বিস্তার
আঁকাবাঁকা
নিপুণ আঘাত হেনেছে কে ? থরের
হাতুড়ি যেন
ভয়াল দাঁতের হাসির ছটা, হাজার
বাতি হেন
দিগসীমানায় ঐ দেখা যায়
কর্ণ-রথের চাকা ৷
সেই রাতেতে শ্রান্ত মায়া :
শুকতারার ডুবখেলা
বাঁশবাগানে মেঘের আদর, নগ্ন
সাপলুডোয়
এক যে নারী পায়ের পাতা ডোবার
জলে জুড়োয়
আকাশ থেকে ঝরে পড়ে ঘাম : ঝড়ের
অবহেলা ৷
তার ক্ষুব্ধ প্রেমিক সেই সময়ে
ছিন্ন ছায়াপথে
প্রেমনিষাদের তরঙ্গহানায়
রক্তরাঙা হায়
যার শিঙার ফুঁ'তে, মায়ার
নাদে নভোদরিয়ায়
কানফাটা রব, দুনিয়া
ভাসে মেঘদূতের রথে ৷
এভাবে দিন, এভাবে
রাত : সহস্র বছর পার
প্রেমিকা আজও রয়েছে বসে, ডোবার
পাড়ে তার ৷
এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যার
গল্প
কোন এক বরষামুখর সন্ধ্যা ছিল
সেটা,
কলকাতার এক রাজপথের ঘটনা ছিল
সেটা,
একটা মানুষ টানছিল তার
রিক্সাখানি;
একজন বাবু তাতে বসেছিল বেশ তা
জানি !
.
সারাটা দিন বৃষ্টি হইয়েছিল
অবিরাম
রাস্তাগুলো কোমরজলে ডুবেছিল একদম…
‘পঞ্চাশ টাকা
দেব তোকে চল’,
বলেছিলেন বাবু সুখিরাম
এক কোমর জল ঠেলে হয়েছিল বটে
বিক্সাওয়ালা বেদম ।
.
‘বামদিকের গলি’ বলেছিলেন
বাবু আঙুলটা বাড়িয়ে ক্লিন,
ভুলে গেছিলেন ম্যানহোলটা সেথায়
খোলা ছিল কয়েকদিন ।
যমদূতসম ম্যানহোলটা হঠাত গিলে
নিল চালকটিকে,
কোনক্রমে বাবু রক্ষা পেলেন, গিয়ে
পড়লেন উল্টোদিকে ।
.
পরদিন ভোরে মিউনিসিপ্যালিটির
লোকজন এসে আগে,
পাম্প করে জল সরাল গলির তুলল সেই
দেহটাকে ।
চোখদুটো যেন দেহটা থেকে আসছিল
প্রায় ঠিকরে,
নতুন ঢাকনা বসলো ম্যানহোলে বেশ
শক্তপোক্ত করে ।।
মেঘ ও তালগাছের প্রেম
মাঠের পূব কোণের তালগাছটি প্রেমে
পড়েছিল ভিনদেশী মেঘের ।
তখন তাদের ছিল ভরা যৌবন-
রোদের লুকোচুরি খেলা'য় সামিল হতো
তারাও ।
নিরবে, অস্তরাগের
গোধূলিবেলা'য় ৷
বেনীআসহকলা'র রঙিন কণা'য় ।
মেঘটি অনেক ছোট ছিল তালগাছে'র থেকে-
তবু তার ভালো লাগতো তালগাছকে ৷
কিন্তু, আশেপাশে ছিল
আরো কঠিন মেঘের আনাগোণা -
ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিল তারা
৷
তাইতো এক শ্রাবণ-সন্ধ্যা'য় বজ্রপাতের
তীব্র দহনে
ঝলসে দিলো তালগাছটি'কে ।
আয়নগুলো যখন
গা ভেদ করে নামছিল গাছটি'র -
দূর থেকে তা দেখছিল মেঘসুন্দরী ৷
কিছু পরে সে উড়ে এসে ভিজিয়ে
দিয়েছিল-
তার মৃত প্রেমিকের আগাপাশতলা...
বোটানিক্যাল গার্ডেনের
সেই বটগাছটি
বোটানিক্যাল গার্ডেনের সেই
বটগাছটি'র
নিচে দাঁড়িয়ে
কতবছর ধরে ভিজছে ছেলে'টি ৷
বর্ষা আসে, বর্ষা
যায় ৷ ভীষণ নরম হয়ে ওঠে শুকনো মাটি -
কিন্তু, প্রেমিকা'র মন গলে না
৷
বৃষ্টি ভিজিয়ে দিতে থাকে লোমশ
বুকের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন
আর, লোমকূপগুলি
হয়ে ওঠে বালুকণা ৷
জলের তোড়ে সেই বালিরাশি মুখ
বদলে দেয় নদীস্রোতের
জন্ম হয় আরেক নদী'র... আর এক
জলকন্যা'র ।
ক্লোরফিলের সবুজ মায়া
শ্রাবণ তুমি পাগল করো, বৃষ্টিকণা'র নরম
ফোঁটায়,
কচু পাতা'র মোমের উপর
জল বালিকা'র
ঘনঘটায় ৷
মেঘলা নীলের মেখলা'তে,
হাজার বাতি'র আলো'তে
ক্লোরোফিলের সবুজ মায়া শত বছরের
তৃষ্ণা মেটায় ৷