শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮

ফিরোজ আখতার



ফিরোজ আখতার

থরের প্রেমিকা

আকাশের গা'য়ে তীব্র ফাটল ; বিস্তার আঁকাবাঁকা
নিপুণ আঘাত হেনেছে কে ? থরের হাতুড়ি যেন
ভয়াল দাঁতের হাসির ছটা, হাজার বাতি হেন
দিগসীমানায় ঐ দেখা যায় কর্ণ-রথের চাকা ৷

সেই রাতেতে শ্রান্ত মায়া : শুকতারার ডুবখেলা
বাঁশবাগানে মেঘের আদর, নগ্ন সাপলুডোয়
এক যে নারী পায়ের পাতা ডোবার জলে জুড়োয়
আকাশ থেকে ঝরে পড়ে ঘাম : ঝড়ের অবহেলা ৷

তার ক্ষুব্ধ প্রেমিক সেই সময়ে ছিন্ন ছায়াপথে
প্রেমনিষাদের তরঙ্গহানায় রক্তরাঙা হায়
যার শিঙার ফুঁ'তে, মায়ার নাদে নভোদরিয়ায়
কানফাটা রব, দুনিয়া ভাসে মেঘদূতের রথে ৷

এভাবে দিন, এভাবে রাত : সহস্র বছর পার
প্রেমিকা আজও রয়েছে বসে, ডোবার পাড়ে তার ৷







এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যার গল্প


কোন এক বরষামুখর সন্ধ্যা ছিল সেটা,
কলকাতার এক রাজপথের ঘটনা ছিল সেটা,
একটা মানুষ টানছিল তার রিক্সাখানি;
একজন বাবু তাতে বসেছিল বেশ তা জানি !
.
সারাটা দিন বৃষ্টি হইয়েছিল অবিরাম
রাস্তাগুলো কোমরজলে ডুবেছিল একদম
পঞ্চাশ টাকা দেব তোকে চল’, বলেছিলেন বাবু সুখিরাম
এক কোমর জল ঠেলে হয়েছিল বটে বিক্সাওয়ালা বেদম ।
.
বামদিকের গলিবলেছিলেন বাবু আঙুলটা বাড়িয়ে ক্লিন,
ভুলে গেছিলেন ম্যানহোলটা সেথায় খোলা ছিল কয়েকদিন ।
যমদূতসম ম্যানহোলটা হঠাত গিলে নিল চালকটিকে,
কোনক্রমে বাবু রক্ষা পেলেন, গিয়ে পড়লেন উল্টোদিকে ।
.
পরদিন ভোরে মিউনিসিপ্যালিটির লোকজন এসে আগে,
পাম্প করে জল সরাল গলির তুলল সেই দেহটাকে ।
চোখদুটো যেন দেহটা থেকে আসছিল প্রায় ঠিকরে,
নতুন ঢাকনা বসলো ম্যানহোলে বেশ শক্তপোক্ত করে ।।








মেঘ ও তালগাছের প্রেম

মাঠের পূব কোণের তালগাছটি প্রেমে পড়েছিল ভিনদেশী মেঘের ।
তখন তাদের ছিল ভরা যৌবন-
রোদের লুকোচুরি খেলা'য় সামিল হতো তারাও ।
নিরবে, অস্তরাগের গোধূলিবেলা'য় ৷
বেনীআসহকলা'র রঙিন কণা'য় ।
মেঘটি অনেক ছোট ছিল তালগাছে'র থেকে-
তবু তার ভালো লাগতো তালগাছকে ৷
কিন্তু, আশেপাশে ছিল আরো কঠিন মেঘের আনাগোণা -
ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিল তারা ৷
তাইতো এক শ্রাবণ-সন্ধ্যা'য় বজ্রপাতের তীব্র দহনে
ঝলসে দিলো তালগাছটি'কে । আয়নগুলো যখন
গা ভেদ করে নামছিল গাছটি'র -
দূর থেকে তা দেখছিল মেঘসুন্দরী ৷
কিছু পরে সে উড়ে এসে ভিজিয়ে দিয়েছিল-
তার মৃত প্রেমিকের আগাপাশতলা...








বোটানিক্যাল গার্ডেনের সেই বটগাছটি

বোটানিক্যাল গার্ডেনের সেই বটগাছটি'র নিচে দাঁড়িয়ে
কতবছর ধরে ভিজছে ছেলে'টি ৷
বর্ষা আসে, বর্ষা যায় ৷ ভীষণ নরম হয়ে ওঠে শুকনো মাটি -
কিন্তু, প্রেমিকা'র মন গলে না ৷
বৃষ্টি ভিজিয়ে দিতে থাকে লোমশ বুকের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন
আর, লোমকূপগুলি হয়ে ওঠে বালুকণা ৷
জলের তোড়ে সেই বালিরাশি মুখ বদলে দেয় নদীস্রোতের
জন্ম হয় আরেক নদী'র... আর এক জলকন্যা'র ।








ক্লোরফিলের সবুজ মায়া

শ্রাবণ তুমি পাগল করো, বৃষ্টিকণা'র নরম ফোঁটায়,
কচু পাতা'র মোমের উপর জল বালিকা'র ঘনঘটায় ৷
মেঘলা নীলের মেখলা'তে,
হাজার বাতি'র আলো'তে
ক্লোরোফিলের সবুজ মায়া শত বছরের তৃষ্ণা মেটায় ৷