রত্নদীপা দে ঘোষ
বৃষ্টি শব্দটি খুব পারিবারিক
১
মেঘের রক্ত মাংস থেকে জন্ম যার, গ্রহণের মোহ থেকে তৈরি মজ্জা আর মাংসপেশী
আরশিনগরে যে এঁকেছে দর্পণ আর শরৎশশী, যে আনন্দের আনমনা আমাকে দেখেই
অরুন্ধতীর নক্ষত্রমণ্ডলে
লুকোয় আভা, যার ডাকনাম চামেলি
আর ইস্কুলের নাম চম্পা
কবে যেন তাঁর পূর্বজন্মটির নাম ছিল ক্ষণজন্মা বসুন্ধরা
২
প্রদীপের আলো মুছে গেলে, নিভে যায় ভোর
বিদ্যুৎ আর তড়িৎখেত্রের মিলিত চুম্বক টেনে নিয়ে আসে
বৃষ্টিপাখা
চিরন্তনী নকশি কথার জলসেচ, কৃষি প্রজাতির জ্যোৎস্নায়, চাঁদই রম্ভা
অপ্সরা তিথিতে থইথই ফুসফুসের জোয়ার, প্লাবনখচিত আশা ঝরঝর
বন্যাভিজে পাখিরা লিখে রাখে কুঁড়েঘরের বাঁক, ঘুঙুরের শিল্পকলা
যে প্রেমিককে বুকে নিয়েছি টেনে, ঈশ্বর-নিঃশ্বাসের মতো চিনেছি
বৃষ্টির দিব্যি দিয়ে বলছি, তার ষোলো আনাই শাশ্বত, অনন্ত শিরস্ত্রাণ
৩
বৃষ্টিকল্পের মতোই একটি ছোটগল্প একটি পাহাড় ঘটিত উপন্যাসের
বর্ণনা
অনাঘ্রাত পুরুষফুলের মৌচাক আসলে এক দীর্ঘকবি, দীর্ঘাকার মহাকবিতা
মনোরম মনের গভীরতম ইচ্ছেবৃষ্টি অনন্তে বিলীন একটি লোকায়ত
সূর্যোদয়
ধানসিঁড়ির কুমারী চুনরি, তুমুল আমূল ওড়নায় সম্পূর্ণ ভিজে দাওয়া
বৃষ্টির সামনে এসেও দেখতে পাইনে বৃষ্টিরূপ। মনে হয় একটি
মৃতগাছের কবজিতে
থেমে আছে স্বজনের হাতঘড়ি, আয়ুর্বেদিক সময় গিয়েছে ঢলে তরুমূলের অস্তাচলে
৪
বৃষ্টির চোখের পাতায় মেঘফড়িঙের দল জানাচ্ছে আমন্ত্রণ, রঙ
এখন শুধু উপভোগে তোলপাড় জলের শরীরী, নিপাতন দোষে দুষ্ট
মরীচিকার চৌষট্টি কলা, গোপন ছুঁয়ে চাপচাপ চোরাশিকার
রোদের উপত্যকায় বুক বেঁধে শুধু আলো চাইবারই কথা
অথচ দ্যাখো, নাচতে নেমে
কেমন সরে যাচ্ছে ঘোমটা-আকার
আয়তনের শীতলতায় কেঁপে কেঁপে উঠছে বৃষ্টিনন্দিন লাবণ্য
জীয়নকাঠির লাবডুব শুধুই আচ্ছাদনের বাবুই, ফানুসের বাসা
৫
যব্রহ্ম কমলের নাভিমূলে জ্বলে ওঠে আগুন
অনাদরে মুছে যায় আলেয়ার প্রতিপদ
বেজে উঠেই স্তব্ধ মৃগশিরার স্পর্ধাহরিণ
এমন অন্ধকার আঁধারে যদি অশ্রুকণা মিলিত হয় চরাচরের সাথে আর
মাঠে ঘাটে সাঁতারুজমিতে প্রতিবাদ-মিছিলের শুরুয়াৎ হয়
বৃষ্টির বিরুদ্ধে
সেই মিছিল আদৌ ভালোমানুষ নয়
তাই বলছি সাবধানে থেকো বৃষ্টি, খুব সাবধানে