শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮

শীলা বিশ্বাস


শীলা বিশ্বাস

আঁচল বাঁধি

এই তো সেই ভুমি ; এই তো সেই মাটি

যেখানে রোপন করেছিলে ভালোবাসার বীজ

আকাশে ঊড়েছিল শান্ত চিল

ভিজেছিল মাটি সামান্য বৃষ্টিপাতে

হলুদাভ কচি সবুজ পাতাদের সে কি

আনন্দ হাসি সহজ স্বভাবে

এই তীর্থ ভূমি মনে রেখেছে সে সব স্মৃতি

যারা জলসিঞ্চন ভুলে গেছে প্রখর দহনে

বোঝে না তারা খননের গভীরতা

আহরনের থেকে সামান্য প্রাপ্তির অসামান্যতা

তুমি বুঝেছিলে তাই সৃষ্টি সুখে ছড়িয়ে গেলে

ভালোবাসার অনন্ত বীজধারা জলের প্রবাহে

আমি আঁচল বাঁধি ।






প্রতিচ্ছবি

মেঘ এসে অভিমান ভিজিয়ে দিল

ভোরের আকাশে তার ইঙ্গিত ছিল না

হাওয়া কোনো ট্র্যাফিক জ্যাম বোঝে না

কত দূরে বলো পাহাড় !

পথের রুক্ষতা সয়ে এত দূরগামী সে

কুয়াশা ঢেকে রাখে আমন্ত্রনলিপি

স্বপ্নের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখা গ্রাফিটি

চোখের জল নিঃশ্বেষিত ; রক্ত রেখায় আঁকে ছবি

বোধে কি শূন্যতা ছিল ?

শূন্য দৃষ্টিতে বোধ থাকে না

পাইন ফারের জঙ্গলে রোদের ঝিলিক

পর্যটন শেষে  সে কি ভুলে যায় দুদিনের খেলা ভেবে ?

আকাশে দেয়ালা করে যে সদ্যোজাত মেঘ

তাকে আশ্রয় দেয় নদী

প্রতিচ্ছবি বেঁকে গেলেও সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যায় না

তরঙ্গ কাঁপিয়ে দিলে বেশ তো ভেসে যায়...।







বসন্তবরিখা

ঠোঁট দিয়ে তার প্রতিটি পালকের গভীরে

জমে থাকা জল ঝেড়ে নিচ্ছে সদ্যস্নাতা



ঈষৎ লাল পাতার ঝরোখা থেকে চুইয়ে পড়া

প্রতিটি জলবিন্দু শুষে নিচ্ছে নদীর বুক



প্রবাহমান বালুকনা আর নুড়ি প্রত্যক্ষদর্শী



বসন্তবরিখায় গাছের কোটর ভোরে গেলে

নদী বয়ে নিয়ে যায় সুখানুভূতি



নির্জনতা লেখে ভালোবাসার উপাখ্যান ।।







অন্যপূর্বা মেঘ

অন্যপূর্বা মেঘ ভেসে আসে ছেনালি হাওয়ায়

ক্ষনিক থামা জেনেও আলগোছে রাখি বেদনার অন্তরীপে

অনুব্রজেও হাসিমাখা থাকে অনিপুণ অভিনয়ে

প্রস্থান শেষে বৃষ্টি ধোয়া মনে শুধু  চিহ্ন রেখে যায় ।।







তিস্তার কোলে

দুঃখ পেলেই তুমি চলে যাও তিস্তার কোলে



সামান্য ফাঁক হয়ে থাকা ঠোঁটের কথা সে বুঝে নেয়

চোখ থেকে ঝরা মুক্তালিপি অনুবাদ করে তিস্তা

শান্ত করে সে তোমাকে শীতলপাটি আদরে



অবগাহন শেষে তুমিই তার সম্পূর্ণ গ্রন্থ

মেঘশিকারায় পর্যটন শেষে নেমে আসো

বৃষ্টি হয়ে ঝরো শরীরীঝুলায় তিস্তারই বুকে



দক্ষিনের জানলা খুলে দাও



ধুয়ে যাক ঘর-বিছানা প্রবল হীরক জলোচ্ছ্বাসে



ডুবে যাক জন্মান্তরের নীল পরিযায়ী স্বপ্ন



দুঃখ পেলেই ডুবুরি হয়ে যাও তিস্তার গহীনে ।।







অন্ধ হই

মেঘেদের স্পেকট্রাম ভেঙে বিরহপাখীদের ডাকাডাকি

প্লুতগতি ঘোড়া নেমে যায় পাহাড়ের খাদ বেয়ে

ঘুমঘোর থেকে জাগে পাথর

ধূসর সবুজ নীল মেশে প্রকৃতিচর্যায়

বুকে পুষে রাখা একফালি সবুজ শিস দেয়

সূর্যাস্তের দিকচক্রবালে পুড়ে যায় চোখ

আশ্রয় হয় ঘিরে থাকা শীতলছায়া অরণ্য

হতাশার জীবন থেকে চলে যাওয়া নীল তিমি

সমুদ্র থেকে খুঁজে দেয় জ্যোৎস্নামাখা মুক্তসুখ