অর্পিতা
সরকার
আপেক্ষিক
আজকে যাকে
ভুল মনে হয় ধ্রুব ছিল কাল,
বেপরোয়া
পাড়ভাঙা ঢেউ সময় বেসামাল।
আঁকড়ে ধরে
বালির পাঁজর জমিয়ে রাখা রাত,
কাঙালজলের
ঝর্ণা ধোয়া আনন্দ বিষাদ ।
আদরক্ষত
শুকিয়ে গেছে,
মিলিয়ে গেছে দাগ
শুঁয়োপোকার
ডানায় মেখে বেপাত্তা পরাগ।
যেভাবে ঝড়
উঠেছিল,
থেমেও গেছে শেষটা
বারিষকণা
উধাও এখন বাড়িয়ে দিয়ে তেষ্টা।
ঘরপোড়া মেঘ
এখনো তাও জলের প্রেমে মত্ত
ক্ষণিক তবু
মনভেজা দিন ভীষণ রকম সত্য।
ঝোড়ো বাতাস
মুঠোয় পুরে প্রেমিক বেওয়াফা
উদ্ধত বাঁধ
ভাঙতে চেয়ে ফের বাড়িয়ো পা।
একলাটি মন
গুঁড়িয়ে দিয়ে সিক্ত করে প্রেমে
তুফান বেয়ে
মাঝ দরিয়ায় হঠাৎ যাবে থেমে।
হালভাঙা মন
পালছেঁড়া সুর আঘাতে উসকিয়ে
শক্ত করে
বাঁধবে দেয়াল ভাঙনরেখা দিয়ে।
একটা সময়
ভরবে ফাটল,
আঁধার যাবে ভুলে
হুড়মুড়িয়ে
পড়বে ভেঙে তেমন মানুষ ছুঁলে।
ভালোবাসা
এমনই হয় কাঁদে,
হাসে, হাসায়__
বিষাদ মেখে
বসে থাকে সর্বনাশের আশায়।
১৮/০৫/১৮
অশ্ব_ক্ষুর
ধরো এখানে
একটা নদী ছিল__
নাম
কৌশিকি...
লাজুক
নম্রনদী।
সকালে আঙুলে
ফুল জড়িয়ে মানুষ পাপ ধুয়ে যেত
আসন্ন
সন্ধ্যায় তার মিঠে জলে মিশত নুনচে স্বপ্ন, বিষণ্ণ নিকোটিন।
সাগর অনেক
দূর।
একটু একটু
করে জীবন সরিয়ে
টেনে নিত
বিসর্জন,
বাসি হওয়া ভক্তির নেশা,
রাঙা বৌ দিয়ে
গেছে ব্যর্থ জঠর__
নদীটা গভীর
ছিল।
হর পাগলা রোজ
তল মেপে যেত।
তাকে নিয়ে
তলে তলে ওপার ভেঙেছে নদী।
এপার রয়েছে
পড়ে খোলসের মতো।
রয়ে গেছে পরম্পরা সৃষ্টির স্তূপ।
নিষ্ফলা
বালিবুকে জল ভরে দিতে কতো সময় লাগে জানো ?
তুমি শুধু ভরন্ত
ফসল দেখলে
ঘামমাটির
ইতিহাস জানলে না।
০২/০৬/১৮
পরবাসে
শেষবার
প্রেমিককে বলে এসেছিলাম,
এইবার নষ্ট
হওয়ার পালা।
আদিগঙ্গা ধরে
বয়ে যাবো শহরের আনাচে কানাচে।
অস্ফুটে কানে
এসেছিল,
"তোকে এইসব মানায় না।"
শালুক ফোঁটা
ঠোঁটে পানকৌড়ির ডুব...
ইচ্ছে করে ভুলে
যাই।
সেদিন কোথাও
আগুন জ্বলেনি।
বেশ মনে আছে,
বৃষ্টি
পড়েছিল শিশিরগন্ধী__
তখন থেকে
মনখারাপ রঙের একটুকরো মেঘ
পিছু ছাড়ে না
কিছুতেই।
রূপশালী ধানে
পাক ধরেছে কবে__
অপবিত্র দেহ
নিয়ে শস্য ক্ষেত্রে যাওয়া বারণ।
দূর্বা ঘাসের
সীমানা থেকে পা সরিয়ে
গলন্ত পিচে
গেঁথে দিয়েছি পলাতকা চিহ্নসারি।
এখানে মানুষ
ঝড় দেখলেও হাসে!
আমি
শান্তিপিঁড়ি পেতে দিই তুলসী তলায়।
এখানে চোখের
জলের নাব্যতা খুব কম,
কেউ পিছন
ঘুরে চাইতে শেখেনি।
চাইলে দেখতে
পেত
শহর তাকিয়ে
নির্নিমেষ ...
আমি শুধু তার
বুকের বাঁ দিকটা খুঁজছি।
এঁদো ডোবা, পোড়ামাটি প্রাণ দুহাতে সরিয়ে
এখনো বেঁচে
আছি।
অন্ধকারের
স্বপ্ন নিয়ে__
শরীরে লেগে
আছে ঝুরো মাটিগন্ধ,
আর বুকের
মধ্যে অশ্রুমতী নদী...
০৬/০৬/১৮
বাবুই
হাতের মুঠোয়
জোনাক পুরে দুঃস্বপ্নে ভোর জাগে যে,
সে প্রতি
সন্ধ্যায় চাঁদের চিবুকে নক্ষত্র-তিল দেখে
প্রেমিকার
আদল মেলায়।
ওষুধের দাগে
চোখ রেখে চেয়ে নেয় সঞ্জীবনী রুগ্ন ডানা।
চুঁইয়ে পড়া
বঞ্চনায় চিরকাল মাটির পাতিল বিছিয়ে দেবে সে
কষ্টজলে
পাত্র ভরে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দেবে আকাশের দিকে।
তৈলাক্ত
জীবনের কণা দুহাতের তালুতে মাখিয়ে
সবটুকু
মিশিয়ে দেয় মায়ের শিথিল আঘাতে
মা ভালো হয়ে
ওঠে।
বোষ্টমী রোদে
তুলে রাখে আচারের তেল, বড়ির ঘরকন্না।
একটু করে
স্বপ্ন ভেঙে ভেঙে ছেলে জুড়ে দেয় খসে পড়া পলেস্তরা,
বুকপকেটের
সিঁড়ি।
অভাব
জ্বালিয়ে দেয় কপাললিখন।
০৮/০৬/১৮
গৃহস্থ
আমার ঘরে
ফেরার কোনো তাড়া নেই।
ঘর বলতে আমি
চিরকাল পাখির বাসা জানতাম।
মায়ের ডানার
নিচে মুখ গুঁজে আকাশে উড়েছি রোজ,
সস্তা ঘুমের
কপালে ঝরে পড়েছে টুপটাপ পারিজাত দেশ__
অথচ এই ঘরের
একটাই জানলা।
খুললে পাশের
বাড়ির কমলা প্রাচীর__
ফাটলবিহীন।
অনেকদিন পর
ঘরটার দিকনির্দেশ করে,
নৈঋত কোণে
খানিকটা অন্ধকার সাজিয়ে নিয়েছি।
একা মানুষের
সংসারে আর কীই বা লাগে!
প্রতি মাসে
ওপরওলার হাতে তুলে দি আমার নিরুত্তেজ রক্তঘাম।
বিনিময়ে আরো
তিরিশ দিনের যাযাবর বাস্তুতে,
লিখে দেব
ঘরপালানো মেঘেদের ভ্রমণ কাহিনি।
১৩/০৬/১৮