শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮

দীপ্তনীল ব্যানারজী


দীপ্তনীল ব্যানারজী

অসমাপ্ত প্রেম

রোজকার শুতে যাওয়া, তোমার সাথে যে তঞ্চকতার জন্ম দেয় 
সারা দিনের অজস্র নীল স্বপ্ন  তা করে তোলে আরও মজবুত,
শেষ রাতের অভ্যস্ত হাত নিশ্চিন্ত হয় আধা পরিচিত ছোঁয়াতে।
তুলনামূলকের পরিতৃপ্তিতে শান্তির নিঃশ্বাস, সার্থক হয় বাঁচা।
তারপর; এক অঘোষিত অন্তরকালের পৌনঃপুনিকতা পালটে দেয়, 
ঘামের গন্ধ, ঠোঁটের পেলবতা আর দূরভাষের যোগাযোগ তালিকা।
তুল্যমূল্যের জয়ের আনন্দে শিহরিত হয় মন, না কি শরীর?
তবু তোমাকে রেখে দি একই, শান্ত, স্থিতধী, প্রশ্নবোধকতার অতীত।
আর প্রত্যেকদিন যৌনতাকে সাক্ষী করে নিজের হাতে খোঁড়া 
অন্তহীন গহ্বরে স্খলিত হই আরও গভীরে। ক্লান্ত মন, অন্তহীন
প্রতারিত হতে হতে নিঃশেষ, মৃত্যুর ভিক্ষা বারবার। অসফল।
সময়ের আগে ছেড়ে আসা সম্পর্ক তার নিজের পরিমাপ হয়ে                               
ফিরে আসে বারবার, ভালবাসা থেকে যায় আপন মর্যাদায়।







প্রিয়তমা

শব্দসন্ধানী মনের উন্মুখ যাতায়াত অভিধানের পাতা জুরে
ভয়ানক অবোধগম্য কিছু অক্ষর বিন্যাস পাওয়ার দাবী নিয়ে 
যার একক ভাবে হয়তো মানে আছে ভিন্ন ভিন্ন,
তবু সেই বিন্যাসের অতি ক্রূর ষড়যন্ত্রও বাক্য রাখে অর্থহীন।
পড়লে পড়া যেতেই পারে, ছবিও আঁকা যায় সামর্থ্য অনুযায়ী,
তবু তা রেখে যায় কলমের থেকে লক্ষ আলোকবর্ষ দূরত্ব।
অথচ মনে হয়েছিল তোমাকে প্রকাশ করা নিতান্তই সহজ 
ভাবিনি কিছু শব্দ দিয়ে তোমাকে বেধে ফেলার প্রয়াস
এত জান্তব করবে লেখনীর দৈন্যতা। কি অসহ্য প্রকট তুমি, সংজ্ঞায়িত।
তার চেয়ে অনেক আকাঙ্ক্ষিত অর্থশূন্য শব্দগুচ্ছ,
যা তোমাকে না দেবে আকার না দেবে তোমার অস্তিত্বের সম্যক ধারনা
সামান্য দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর উচচতার ত্রিমাত্রিকতার
অনেক দূর দিয়ে যাওয়া অবয়ববহীন এক উপস্থিতি  
যা শুধু আছে; এটুকুই, বাস্তবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী কল্পনা।
সেই মাত্রাহীন গহনতাই তোমার অধিকার, তোমার রূপ।
আমার মনের প্রতিটি অনুভূতি আর শরীরের প্রতি কণা উষ্ণতায়
ভীষণ জীবন্ত আমার ভালবাসা, বিমূর্ত হোক সবার কাছে
একটা আধার, লক্ষকোটি চোখে নিজের মত রূপ নিক আমার প্রিয়তমা।






            
ফেসবুক এ আলাপ

অবয়ব পুস্তিকার অগণিত ভাগকরা ভাললাগার মাঝে
ভেসে আসা একটি মুখ, ভয়ঙ্কর জাগতিক।
দেখে বলেছিলাম নিজেকে ডাক পেলে জানতে চাইব না 
-যেতে পারলেও কেন যাবো?” সেই থেকে শুরু
আহ্নিক গতি। খুব লোভ দুদণ্ড শান্তি পাওয়ার।
প্রতি রাত এ অসমাপ্ত সম্ভোগের মত ইচ্ছেরা ফিরে আসে বারবার।
পূর্ণিমা চাঁদ আর ঝলসান রুটি এক হয়ে ওঠে
এক মুখ শান্ত পেলবতায়।
প্রকাশের শীৎকার হাতে তুলে নেয় শতজন্মের
ফেলে আসা অক্ষরমালা। কবিতা জন্মায়.







ঘনিষ্ঠতা

সারাদিন বন্দরে বেচাকেনা সেরে, রাতে যতটা দূরত্ব রাখে
চোখ থেকে ঘুম আর ঘুম থেকে চোখ;
আধবোজা স্বপ্ন আর অতৃপ্ত মৈথুন ক্রিয়া
চেয়েছিল আর একটু কাছাকাছি হোক।
দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, কি মাঝরাত; নির্লজ্জ সন্তাপ কুরে কুরে খায়
প্রতিরোধে প্রতিশোধ উষ্ণতা বেড়েছিল কোনও ভেজা বর্ষায়।
ঘেঁষাঘেঁষি এতটাই পাশাপাশি এসেছিলো সব যেন ধোয়াটে,
স্বপ্নের নগ্নতা সাবধানী ভালবাসিমলাটে।
সেই থেকে কাছে থাকা, বেহিসাবি ভালোলেগে হিসেবের শাস্তি,
শরীর শরীর খায়, শুধু সঙ্গতে বিস্ময়-তুই ভালবাসতিস?”  








দহন

প্রতিপদ চাঁদ এ আকাশ ভেজা আর অপর্যাপ্ত অন্ধকার,
ইঙ্গিত রাতের কালোর মতই গভীর
আগুন জ্বালানো নেহাৎ ই পাথরের ঠোকাঠুকির অপেক্ষা।
তবে সে আগুন আলো বর্জিত, উত্তাপেই প্রখর।
পথ দেখায়না স্পষ্ট বরং ইতস্তত ভেসে থাকা ছাই চোখ ঝাপসা করে। 
তবু পুড়তে ভালো লাগে কারও কারও, জেনেও
পোড়া শরীর ছাই হয়ে যায় চিহ্ন না রেখে।
 ভীষণ ছোঁয়াচে সে তাপ গলিয়ে দেয় উত্তর আর দক্ষিনের বরফ
ভেসে যায় আরও কত শত অচেনা বা খুব প্রিয়। 
আর প্রতিদিনে প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়ার আকাশ উজ্জ্বলতর হয়,
লাল হয় পলাশ বন, পাকা মহুয়ার ফল নেশা ধরায়।
যেতে যেতে বলে যায় ইয়াসিন, হানিফ, মকবুল,
গগন, বিপিন, শশী; শ্যাম বাজার, গালিফ স্ট্রিট এর, 
কিউবা, ইউক্রেন বা ভিয়েতনাম এর- সফলতা
তবু হায়! রাত থেমে থাকেনা এক পূর্ণিমায়।
পাতাঝরা হেমন্তের রিক্ত অমানিশায়
বারুদের ব্যাস্ত জমায়েত আবার স্ফুলিঙ্গের টানে।