শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮

তৈমুর খান


তৈমুর খান


প্রেমিক

মৃত্যুরা যাওয়া-আসা করছে

হাসপাতালের বাগানে চুম্বন কুড়োতে এসেছি

আনন্দকে কী বলে সম্বোধন করব ?

শোককে আমার সব সুখ বেচে দিয়েছি


সামান্য খড়কুটোর বাড়ি

বৃষ্টি এসে দুষ্টুমি করে

ঝড়ের আবেগ ধর্ষণের ভয় দেখায়

সময় শুধু মিছিল বের করে

সময় শুধু সময়ের রাজনীতি


আমি উন্মাদ হতে হতে

আবার প্রেমিক হয়ে যাই






নাকছাবি

ভালোবাসার নাকছাবিটি বানিয়ে নিলাম

এবার তুমি হাত ধরো এসে রোদে

একটি শুধু তোমারই সর্বনাম

বেজে উঠছে একলা আমার মুখে



কতকাল ধরে একা

তোমার সঙ্গে হয়নি আমার দেখা

মনে মনে চিনতাম

মাথার উপর আকাশ, ক্ষেত ভরা গন্দম



একটি উঠোন, গাছের ছায়া, পাখির ডাক

বাড়িয়ে দিলাম এই দুটি হাত, কথা বলছে নাকছাবিটি






পিয়াস

হরিণীরা ছুটে যাচ্ছে

             এমন পিয়াসের জাদু

জানালা খুলে ডাকছি চাঁদ

                নিঝুম রাতের না-ঘুম বালক



মহুয়া ফুলের ঘ্রাণ আসছে

              ঘ্রাণের কোনও বয়স নেই

অনন্তকাল খোলা জানালায়

                চেয়ে আছে ঘুমহীন চোখ



ঢেউ ছুটছে ;  নৌকারা বিহ্বল হল

                বনান্তরের গহন পাখি

                      একটু একটু ডানা ঝাড়ল

কেঁপে উঠল বিশ্বাসের পালকগুলি



পিয়াস নিয়ে ধ্রুপদী রাত

          জ্যোৎস্না মাখছে

জ্যোৎস্না অঙ্গে ললিত সুর

            গান হবে তাই কণ্ঠ চাইছে






কথা বলছি নিজের সঙ্গে

গান আসছে।  আমার নীরব প্রস্তুতি

কথা বলছি নিজের সঙ্গে….

নিঝুম আকাশ, মেঘ ভাসছে

কার বিলাস শূন্যে উড়ছে ? অহংকারী



নিবেদন পুড়ছে নিভৃতে

ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে মিশে যাচ্ছে তরঙ্গে রঙ্গে

কান রাখছি নিজের কানে

কী শুনছ মনখারাপের বাঁশি!



দুয়ারে যারা দাঁড়িয়ে আছে

তাদের বিরহী আঁচল

কী বলছে হাওয়ার কাছে  ?

আলতাপায়ের নীরব নূপুর অন্তরিক্ষে আজও বাজে



ডাকতে এসে ডাকলে না কেউ  ; ফিরে যাচ্ছে

অভিমান কাঁদতে বসে, কাঁদেনিকো

হলুদচোরের গায়ে হলুদ

এপাড়ায় ওপাড়ায় ভ্রম ;  প্রেম যাচ্ছে তাদের বাড়ি







জীবনচরিত

জীবনচরিত শেয়াল হয়ে

শিকার খুঁজছে

      এই মাঠে, হরিণীর মাঠে

                কাদের এত স্বপ্ন চরছে  ?



দূর্বাঘাস, কথা বলো

নরম কথারা শিশির মাখা

          স্মৃতির ভারে নুয়ে পড়ছে

             সবুজ সকাল, আকাশ ভাঙা



দ্রৌপদীর ঘরের দাওয়ায়

কুরুক্ষেত্রের চিহ্নগুলি

      এখনও কেমন উদাস তাকায়

           ইতিহাসের তাঁবু থেকে সৈনিকেরা উঁকি মারছে



মহাভারতের পর্দা সরাও

মুখগুলি কাদা মাখা

         দুঃখগুলির কাঁথা সেলাই

              চিৎকার আর জন্মান্তর