শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮

শীলা বিশ্বাস




কবিতাউৎসব সাক্ষাৎকার  ১৪২৫


কবিতাউৎসব: কবিতা উৎসবের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগত। কবিতা আর বাঙালি: বাঙালি আর উৎসবএ যেন এতটাই স্বত:সিদ্ধ যে, এই নিয়ে কোন সংশয়ের অবকাশই থাকে না। আমরা কবিতা লিখতে ভালোবাসি। কবিতা পড়তে ভালোবাসি। কবিতায় থাকতে ভালোবাসি। আর কবিতা নিয়ে উৎসব তো আমাদের বারোমাস্যা। তাই কবিতা নিয়ে বাঙালির এই উৎসবকেই আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ মাসিক কবিতা উৎসব,শুধুমাত্র কবিতার জন্যে কবিদের মাসিকপত্র। বাংলার জনজীবনে কবিতার এই যে একটা বিপুল প্রভাব এই বিষয়টি আপনাকে কি ভাবে প্রভাবিত করে। এবং আপনার লেখকসত্ত্বার গড়ে ওঠার পেছনে এই প্রভাব কতটা ক্রিয়াশীল ছিল বলে মনে করেন আপনি?

শীলা বিশ্বাস: প্রথমেই আপনাকে আমার অভিনন্দন ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই  কবিতা উৎসব মাসিক পত্রের তরফ থেকে আমাকে কিছু বলার সুযোগ করে দিলেন বলেকবিতা নিয়ে বাঙালিদের  মধ্যে যে উৎসাহ সে আর কোন জাতির মধ্যে আছে কিনা সন্দেহ আর উৎসবে মেতে ওঠা এ তো বাঙালির মজ্জায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই কবিতা আর উৎসব বাংলার জনজীবনে মিলে মিশে গেছে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে যখন হাতের মুঠোতে এসে গেল বিভিন্ন ওয়েবজিন-ব্লগ, তখন বাঙালি যে তার সদ্ব্যবহার করবে এ বলাই বাহুল্য আমরা যারা কবিতার পাঠক, কবিতা প্রয়াসী তাদের জন্য কবিতার এই মাসিকপত্র সত্যিই সেই সময় অনেকের মধ্যে সাহস জুগিয়েছে নিজের মত করে কিছু বলার 



কবিতাউৎসব: কবিতা লেখার শুরুর সময় থেকে আজ অব্দি সময় সীমায় কবিতা সম্পর্কে আপনার ধারণার বিশেষ কোন পরিবর্তন হয়েছে কি? এই প্রসঙ্গেই জানতে চাইব আমাদের বঙ্গসংস্কৃতিতে কবিতা লেখা কতটা হুজুগ সর্বস্ব আর কতটা সাধনা সাপেক্ষ বলে মনে হয় আপনার।

শীলা বিশ্বাস: কবিতা লেখার শুরুর সময় থেকে আজ অবধি সময় সীমায় কবিতা সম্পর্কে আমার ধারনার বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে আগে কবিতায় অনুভূতি আবেগ বা বক্তব্য এগুলো সরাসরি প্রকাশ করতাম এখন আবেগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি বলে আমার মনে হয় প্রথম দিকে কবিতার বিষয় ভাবনা আগেই চলে আসতো এখন হঠাৎ করে লেখা আসে লেখা কোথায় শেষ হবে আগের মুহূর্ত পর্যন্ত জানা থাকে না হুজুগের কথা যদি বলেন বাঙালিরা একটু হুজুগে একথা মানছি  শুধু হুজুগে হয়তো কবিতা লেখার চিন্তা বা শুরু হতে পারে। গভীর জীবনবোধ থেকে যে কবিতা লেখা ভাবাবেগের দ্বারা তা সম্ভব না সেখানে প্রয়োজন  মনন, মেধা, গভীর  উপলব্ধি, অনুরণণ, রুচিবোধ তাই কবিতা রচনা আমার  কাছে সাধনা স্বাপেক্ষ হুজুগ আমাদের সত্য উপলব্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে না


কবিতাউৎসব: কবিতা লেখার প্রেরণায় স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ না কি অভিজ্ঞতাজাত জীবনবোধ সঞ্জাত চেতনার নান্দনিক বিকাশ, কোনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় আপনার কাছে? যদি একটু বিস্তারিত আলোচনা করেন এই বিষয়ে।

শীলা বিশ্বাস:  আমাদের চারিপাশে যা দেখি, যা উপলব্ধি করি তাই আমরা আমাদের কাব্যভাষায় অনুবাদ করি অনেক কথাই আমরা কাউকে বলে উঠতে পারি না সেগুলোই কবিতা হয়ে ধরা দেয় প্রথমে একজন কবি তার নিজের মুক্তির জন্য কবিতা লেখে তারপর সেই রচনা সার্বজনীন করতে চায় মানুষের কাছে পৌঁছতে চায় একটা অনুভবী মন  প্রেমের আকাঙক্ষা সৌন্দর্যের আকাঙ্ক্ষা থেকেই কবিতার জন্ম দেয়। অন্তহীন গন্তব্যহীন একলা পথে হেঁটে চলা বা নিজের সঙ্গে কথা বলাই তো কবিতা ক্রমাগত  বুকে দহন, রক্তক্ষরন,  নিজেকে খননের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায় কবি অপরিপূর্ণ উপসংহারহীন ভাবনাই কবিতা যার সৃষ্টি কবিকে অনাবিল মুক্তির আনন্দ এনে দিতে পারে। স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে গভীরতা কম থাকে বলে মনে হয় কবিতায় আবেগ থেকেই অতিকথন দোষটিও আসে তাই কবিতা লেখার প্রেরণায় জীবনবোধ সঞ্জাত চেতনার নান্দনিক বিকাশ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ


কবিতাউৎসব: কাব্য সাহিত্যে শ্লীলতা অশ্লীলতার বিতর্ক চিরন্তন। একবিংশ শতকের প্রথম পর্যায়ে দাঁড়িয়ে এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে আগ্রহী আমরা।

শীলা বিশ্বাস:  সাহিত্যে শ্লীল অশ্লীল বলে কিছু হয় না এটা আপেক্ষিক ব্যাপার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধারণা বদলায় কিছু গালি গালাজ  বা  যৌনতা সাহিত্যে স্থান কাল পাত্র বিচার করে আসতেই পারে  যৌনতা যেন শিল্প হয়ে ওঠে আবার শিল্প হয়ে উঠল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় আর তা ঠিক কে করে দেবে? সে ও আরেক প্রশ্ন সূক্ষ্ম সীমারেখা সেটা প্রথমের লেখকের নিজের কাছে তারপর তা সময়ের উপর ছেড়ে দেওয়া প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে কালিদাস জয়দেব ওঁদের লেখাও এ প্রশ্নের সম্মুখীন এই বিতর্ক আজীবন কাল থাকবে


কবিতাউৎসব: বাংলা সাহিত্যের আদিগন্ত জুড়ে যে তিনজন কবির ভুমিকা বা প্রভাব সবচেয়ে বেশি, সেই রবীন্দ্রনাথ নজরুল ও জীবনানন্দের কাব্য ভুবন ছাড়িয়েও বাংলা কাব্যসাহিত্য আজ অনেকদূর বিস্তৃতি লাভ করেছে। সেইখানে দাঁড়িয়ে আজকের বাংলা কাব্যসাহিত্য সম্বন্ধে আপনার সামগ্রিক মূল্যায়ণ সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন বিস্তারিত ভাবে।

শীলা বিশ্বাস:  রবীন্দ্রনাথ  নজরুল এবং জীবনানন্দ বাংলা সাহিত্যের এই তিন স্তম্ভ এদের প্রভাব আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারব না রবীন্দ্রনাথের নিসঙ্গতার কথা বা তিনি জীবনে কিরকম কষ্ট পেয়েছেন সে কথা আমরা জানি  তাঁকেও কিন্ত সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে   যদিও তিনি নিজেকে বিশ্বের দরবারে  তুলে ধরতে পেরেছিলেন আবার অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দকে চিনতে পারেনি জীবনানন্দকে আমরা তার মৃত্যুর অনেক পড়ে স্বীকৃতি দিয়েছি নজরুল এক সময়ে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন কিন্তু তার শেষ জীবন কিভাবে কেটেছিল আমরা জানি সে সময়গুলোতে পাঠকের কাছে পৌঁছানোর এত মাধ্যম ছিল না তবুও তাঁরা তাদের লেখনীর দ্বারা মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে রইলেন এখন এত মাধ্যম এসে গেছে সকলেই লিখছে পাঠকের তুলনায় লেখক বেশী হয়ে গেছে যেন কাব্যসাহিত্যে একটা জোয়ার চলছে কেউ কেউ বলেন তরুন প্রজন্ম বাংলা পড়ে না  আমি মানতে পারি না এত ভাল ভাল লেখা পড়ি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় যেহেতু আমি এই সময় লিখছি আমি বোধ হয় এর মূল্যায়ন করতে পারব না সে যোগ্যতা আমার নেই


কবিতাউৎসব: কবি আর কবিতার পাঠক এর মধ্যে যোগসূত্র হিসাবে সাহিত্য সমালোচকদের ভুমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে?

শীলা বিশ্বাস:  সাহিত্য সমালোচকদের লেখা পড়েই কি আমরা বই কিনি! তা যদি হয় তাহলে তাদের ভূমিকা আছে কিন্তু আমরা যদি পিছনের দিকে একটু তাকাই জীবনানন্দের এর লেখা তার সময় বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়েছিল সজনীকান্তের  মত লেখক তার লেখাকে প্রলাপ বলেছেন সুতরাং প্রভাব খাটিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু হতে পারে অথবা সময়ের আগে কিছু লেখা হলে সেটা বুঝতে পারেন না বা স্বীকৃতি পায় না সুতরাং নিজের লেখা লিখে যেতে হবে  বিরুপ সমালোচনা সহ্য করেও সময় সব থেকে বড় সমালোচক তার হাতেই ছেড়ে দিয়ে নিজের লেখা লিখতে হবে পাঠক হিসাবেও একই কথা নিজেকেই নির্বাচন করে নিতে হবে মহৎ সাহিত্য রচনায় সাহিত্য সমালোচকদের ভূমিকা নেই সমালোচক কোন বই ভাল বললে কিছু বই বেশী বিক্রি হতে পারে মাত্র।


কবিতাউৎসব: কবি হিসাবে একজন কবির সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্বন্ধে আপনার অভিমত কি? আপনি কি কবিতার সামাজিক দায়বদ্ধতায় আদৌ বিশ্বাসী?

শীলা বিশ্বাস: কবি সমাজ বদল করতে পারে না কবি তার লেখায় প্রতিবাদ জানাতে পারেন কবিতা লেখার সময় কিছু বার্তা দেবেন ভেবেও লেখেন না কিন্তু তার অনুভবটুকু লিখে যান আসলে কবিরা আগে থেকে বুঝতে পারেন সত্যদ্রষ্টা সমাজ ও সমাজের বিভিন্ন আচরণ নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে গভীরভাবে একজন কবি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার কাব্যভাষায় তুলে ধরেন প্রথমে কবি তার লেখার কাছে ও নিজের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন যেহেতু যে কোন শিল্পই তো সময় স্থান পরিবেশ নিয়েই রচিত হয় একটা কবিতা খুব ব্যক্তিগত তখনও তার কিছু পারিপার্শ্বিক চরিত্র বা বিষয় ঢুকে পড়ছেই যখন এটা পাঠকের কাছে গেল পাঠক তার মত করে বিশ্লেষণ করছেন আর সেটা ব্যক্তিগত থাকছে না সামাজিক সম্পর্ক বা অভিজ্ঞতা দিয়ে সে বুঝে নিতে চাইছে। পাঠকের নিজস্ব বিচার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে কবি সরাসরি হয়তো অনেক কিছু বলেন না শিল্প ও সমাজ দুটোই কিন্তু হাত ধরাধরি করে থাকে কবি সমাজকে নিজের মুখ দেখতে শেখান তার লেখনীর মাধ্যমে এটাই সামাজিক দায়বদ্ধতা


কবিতাউৎসব: নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ কবিতার সাহিত্যমূল্যের পক্ষে কতটা প্রতিবন্ধক বলে মনে করেন আপনি। না কি রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তি থেকেও মহত্তর কবিতার সৃষ্টি সম্ভব?

শীলা বিশ্বাস: নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ কবিতার সাহিত্যমূল্যের পক্ষে প্রতিবন্ধক তখনই হয় যখন কবিতা  স্লোগান হয়ে যায় তিনি যদি দলীয় ম্যানিফেস্টেশন  লিখে ফেলেন তখন তিনি সকলের কবি হয়ে উঠতে পারেন না পাবলো নেরুদা, সুভাষ মুখোপাধ্যায় কিন্ত নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তি থেকেও মহত্তর কবিতা রচনা করেছেন বিষ্ণু দে ও কিন্তু প্রছন্ন ভাবে রাজনৈতিক মতাদর্শ কবিতায় এনেছেন আসলে কবির উচ্চারণের শৈলীর উপর নির্ভর করে


কবিতাউৎসব: কবি শঙ্খ ঘোষের মতে, ‘সাহিত্যের, সমাজের, আমাদের মূল্যবোধের, আমাদের জীবনযাপনের সামূহিক ক্ষতি করাই এস্টাবলিশমেন্টের কাজআপনিও কি সেই মতে বিশ্বাসী? আবার আমরাই দেখতে পাই এই এস্টাবলিশমেন্টেই অনেক কবি সাহিত্যিককে খ্যাতির শিখরে পৌঁছিয়ে দেয়। একজন সত্যিকারের কবির পক্ষে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কতটা দুরূহ বলে আপনার মনে হয়

শীলা বিশ্বাস: অ্যান্টি এসট্যাবলিশমেন্টও একধরনের এস্টাবলিশমেন্ট হয়ে যায় নেগেটিভ পাব্লিসিটিও পরিচিতি পাওয়ার একটা খেলা হয়ে উঠেছে  আমি বানিজ্যিক ও অবানিজ্যিক দু ধরনের পত্রিকাতেই লেখালিখি করি অনেক লেখককেই খ্যাতির শিখরে পৌঁছিয়ে দেয় এসট্যাবলিশমেন্ট কিন্তু তারা যদি লেখককে বলে দেন তারা কি ধরনের লেখা চান। সেক্ষেত্রে প্রকৃত সাহিত্য রচনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় বলে মনে করি একজন কবিকে স্বাধীনভাবে লিখতে হবে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া দুরূহ নয় কবিকে সজাগ থাকতে হবে  এইরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে সরে আসতে হবে


কবিতাউৎসব: বাংলা কাব্যসাহিত্যের উপর বিশ্বসাহিত্যের প্রভাব সর্বজনবিদিত। আপনার কাব্যচর্চায় এই প্রভাব কতটা সচেতন ভাবে এসেছে? এই প্রসঙ্গেই জানতে চাইব, আপনার খুব প্রিয় বিদেশী কবি কারা?

শীলা বিশ্বাস: আমারা মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জীবনানন্দ এঁদের কবিতায় বিস্ব সাহিত্যের প্রভাব দেখেছি কিন্তু তারা আমাদের দেশের ঐতিহ্য বজায় রেখে তাদের ভালোটা নিয়েছেন, অন্ধ অনুকরণ করেননি আমার কাব্য চর্চায়  বিদেশী কবিতার প্রভাব সচেতনভাবে পড়ার কথা নয় আমি নিজের মত লেখার চেষ্টা করি আমি সিমন দ্য বোভেয়ার, সিলভিয়া প্লাথ, ও ক্যামু, কাফকা, পাবলো নেরুদার লেখা পড়েছি অবশ্যই  অনুবাদ  সাহিত্য হিসাবে পড়েছি পাবলো নেরুদা আর সিলভিয়া প্লাথ এর কবিতা ভালো লাগে


কবিতাউৎসব: কিন্তু বাংলা কাব্যসাহিত্যের প্রভাব কি বিশ্বসাহিত্যের কোন অংশের উপর দেখা যায় আদৌ? না গেলে কেন?

শীলা বিশ্বাস: রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বিশ্ব সাহিত্যে কোন বাঙালি কবি সে ভাবে জায়গা করতে পারেন নি তাই  প্রভাব কিভাবে পড়বে ? বাংলা কবিতার অনুবাদ হওয়া প্রয়োজন বাংলা ভাষা বা কবিতা পিছিয়ে নেই কিন্তু বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার মত কাজের মানুষের অভাব বোধ করছি


কবিতাউৎসব: একজন প্রকৃত কবির কাছে প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার কতটা মূল্যবান? পুরষ্কারের খ্যাতি কবির প্রতিভাকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয় না কি এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে আরও?

শীলা বিশ্বাস: প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার কবি কে আরও ভাল লেখার প্রতি দায়বদ্ধ করে  প্রকৃত কবি   পুরস্কারের আশায় লেখেন না কিন্তু অহংকার একমাত্র তার প্রতিভা কে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয়


কবিতাউৎসব: আজকের বাংলা কবিতায় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মধ্যে সমন্বয় সাধন কতটা জরুরী বলে মনে হয় আপনার? এই বিষয়ে তরুণ প্রজন্মের কবিদের ঠিক কি পরামর্শ দিতে আগ্রহী আপনি?

শীলা বিশ্বাস: উত্তরাধিকার সুত্রে আমরা যা পাই তাই আমাদের ঐতিহ্য  আধুনিক বলে কিছু হয় না আজ যা আধুনিক কাল তা পুরানো আমরা যে ভাষায় কথা বলি কবিতা সেই ভাষার কাছাকাছি হয়  কবিতার গঠনগত পরিবর্তন সময়ের সাথে সাথে লক্ষ্য করি চর্যাপদের যুগ থেকে  আরম্ভ করে সাহিত্যকে সময়ের নিরিখে প্রাচীন মধ্যযুগ ও আধুনিক এই তিন ভাগে ভাগ করা হয় আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের চিরকাল একটা দ্বন্দ থাকে কবিতা চিরকাল নতুন পথে হাঁটতে চায় অর্থাৎ কবিতার বাঁক বদল হয় আধুনিকতা একটা সীমা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চায় ঐতিহ্য হল আমাদের শিকড় সেটা ছেড়ে যদি বেরিয়ে আসি তাহলে কবিতাকেই আমরা আর খুঁজে পাব না সুতরাং দুটোর সমন্বয় সাধন জরুরী নতুন প্রজন্ম তাদের নিজস্ব কন্ঠস্বর তৈরি করুক


কবিতাউৎসব: আজকের বাংলা সাহিত্যের দিগন্তে কবি খ্যাতির যে একটি বাজার মূল্য দাঁড়িয়ে গিয়েছে সেটিকে আপনি কিভাবে দেখেন। অর্থাৎ এর ভালো মন্দ দুই দিকের বিষয়ে যদি বলেন।

শীলা বিশ্বাস: কবিতা স্থায়ী হয় মগ্ন পাঠকের হৃদয়ে কবি খ্যাতি কিন্তু স্থায়ী হয় না কবি খ্যাতি লাভ করতে গিয়ে আমরা আমাদের ফোকাস বা  কবিতা রচনার মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাই অন্যান্য কাজে জড়িয়ে পড়ি একে অপেরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি কিংবা তৈল মর্দন ইত্যাদি কাজে অথবা সস্তায় প্রচার পেতে গিয়ে উচ্চমার্গের সাধনা থেকে সরে আসি সেটা ক্ষতি করে আমাদের কবি খ্যাতির বাজার মূল্য খুব সাময়িকপাঠকের ভালোবাসার চেয়ে বড় পুরস্কার আর কি হতে পারে


কবিতাউৎসব: কবিতাউৎসবের পক্ষ থেকে আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। পরিশেষে জানতে চাইব বাংলা কাব্যসাহিত্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

শীলা বিশ্বাস: কাব্যসাহিত্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুব আশাবাদী কারণ তরুন প্রজন্মের মধ্যে কবিতা নিয়ে একটা উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে আমি বিশ্বাস করি কেউ একজন খুব নির্জনে বসে কবিতা লিখে চলেছেন যিনি এই সময়ের কবি হিসাবে চিহ্নিত হবেন যাকে আমরা এখন চিনতে পারিনি তিনি কবিতার দিক নির্দেশ করবেন তাকে যেন মৃত্যুর পর কোন কালো ট্রাঙ্ক থেকে আবিষ্কার করতে না হয় পরিশেষে কবিতা উৎসব পরিবারের সকলকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভ কামনা জানাই


শীলা বিশ্বাস: জন্ম ১৯৭২ সালে, সাঁতরাগাছি, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। কলকাতা  বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। লেখালেখির প্রথম প্রকাশ স্কুল ম্যাগাজিন মালঞ্চপত্রিকায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হয় শূন্য দশকে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি দায়িত্বশীল পদে কর্মরত (আয়কর বিভাগ, কলকাতা)। লেখার বিষয়  মূলত কবিতা অন্যান্য প্রচেষ্টা গল্প , প্রবন্ধ, শ্রুতি নাটক ।     নিয়মিত লেখালেখি  বানিজ্যিক ও অবানিজ্যিক সাময়িক পত্র পত্রিকা  দেশ, কবিসম্মেলন, কবিতা আশ্রম, শুধু বিঘে দুই, কবিতা সীমান্তনবকল্লোল, অদ্বিতীয়া, তথ্যকেন্দ্র, লং জার্নি রবি বারোয়ারি  (দৈনিক যুগশঙ্খ)দুর্বাসা , শব্দ হরিণ , একুশ শতাব্দী , অর্কেস্ট্রা ইত্যাদি এছাড়াও বিভিন্ন ই-ম্যাগাজিনে।  সম্পাদিত পত্রিকা এবং সইকথাই ম্যাগাজিন, (ত্রৈমাসিক)। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ হেমিংটনের জন্য, অন্তর্গত  স্বর, নেবুলা মেঘের মান্দাসে।- সম্মাননা ও পুরস্কার: কালী কিঙ্কর মিত্র স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯, –’নেবুলা মেঘের মান্দাসে’  কাব্যগ্রন্থের জন্য (ঋতুযান  সাহিত্য পত্রিকা)। সুকুমার রায় শিশু সাহিত্য সম্মাননা ২০১৬ (বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জ ছড়া উৎসব পরিচালন পর্ষদ) এবং পাঠকের বিচারে সেরা ১৫  সম্মান  (নবাঙ্কুর সাহিত্য পত্রিকা) ২০১৫