প্রত্যূষা
সরকার
অ- প রা জি ত
গত বসন্তের
ইতিহাস পরাজিত
মাঝে মাঝে
আবছা হয়ে আসে মুখ
ভুরুর
মাঝখানে কতগুলো বলিরেখা ধরল?
এখন আবার যদি
রঙ-তুলি নিয়ে খেলি
পারবো কী
আঁকতে, যা এঁকেছি দাবদহে?
মধ্যিখানে
বিরক্তবোধ আসে
ভাবতেও ভুল
করি---
সংসার আছে, আছে আরও এক বৃহৎ সংসার।
সেখানেও ঢেউ
আসে রোজ
খানিক
ব্যক্তিগত শরীরী সন্ধান।
অবাধে স্বর্ণ
ফলে সর্পের আঙিনায়,
এ' পাশে সুখ, ও' পাশে বৈধব্য
মাঝামাঝি
অস্থায়ী আবেগী পরকীয়া।
এতেই তো সুখ
আছে, ঢেউ জোরা কামনায়,
আমি ভাবি, ভাবতে হয়
আরও দূরে সরে
যাই, যত দূর দেখি নি।
খুঁজে পেলে
বুঝবে সে, বৈরাগী জীবিত
ছায়া হয়ে
নিরামিষে স্বত্বার্থী হতে চাই।
ঠোঁটে কালো
দাগ এখনও স্পষ্ট?
ভাবতেও ভুল
করি, ভাগ্যিস!
ছেঁড়া
কাঁথাগুলো যদি বিক্রি হত মূল্যবোধে
আমিও বিক্রি
হতাম পুরোনোর কারুকাজে।
নির্বোধ আজ
প্রেম, দেহবাদ আপেক্ষিক
অফুরন্ত
আনন্দ প্রৌঢ় চিবুকে, হাতে ওঠা আঁচিলে;
আমি বুঝি।
আমায় বুঝতে হয়
এই বসন্তে
আমি 'অ'পরাজিত!
প্রবাসী
আমার এক রকম
নেশা ওই গলার স্বর
কাঁপতে
কাঁপতে পেরিয়ে আসি ধুসর শহরটা।
মাঠ আছে, মাঠে রোদ আছে,
আছে মুখস্থ
প্রস্তর আখ্যান।
আমি ছুটে
চলি...
ছুটতে হয়
নিয়মাবলিতে রদ্দুর মেখে কুয়াশায়।
হাত জুড়ে রক্তাভ
আস্তরণ
কোথাও কোথাও
মেঘের টুকরো দৃশ্যপটের ব্যখ্যা।
প্রেমালাপের
ঘাগুলো চিনতে বসি প্রহর মাফিক।
তবু সঙ্কোচ, দ্বিধা, যুক্তিবাদ আছাড়ে পড়ে
গোধূলির
আসক্ত বালুচরে।
আমি ধোঁয়া
মাখা রেললাইন ধরে পৌঁছাই
নিরবে মিশতে, তোমার অন্তরীপের
অন্তরীক্ষে।
সমুদ্র আমায়
ঠাকায় নি ইতিহাসে
বালি সরিয়ে
লিখেছি নিজস্ব নাম।
তোমার স্বরে
নেশা জপেছি আগুনে,
বারুদ
তৃষ্ণায় আমি হয়েছি আস্ত কঙ্কাল।
নিয়ে চল
আড়ালে, প্রথম গণ্ডি পেরোই
তবে
আরব্য-রজনী
যাপন বিক্ষিপ্ত ক্ষেত্রফলে কবিত্ব পাক
ঢেউয়ের
গর্জিত উল্লাসে।
ত্যাগ
আগুনের ফাঁক
দেখেছি কাঠিণ্যে,
ভালবেসেছি
সেটুকুই...।
সাময়িক
যোগাযোগে ক্ষণস্থায়ী উপেক্ষা
ধ্বংস করেছে
তোমায় ভালবাসার প্রবৃত্তি।
নাভিদেশ থেকে
উৎপাটিত বিকর্ষণের ক্ষেত্রফলে
মাত্র এক যুগ
ধরে গোছানো আভিজাত্য
ভাঙনের
সম্মুখীন।
দূর থেকে
আন্দাজ করেছি মধুভোজীদের লোভ
খানিক তাণ্ডব, ব্যক্তিগত প্রত্যাশা, ঠুনকো সহচর্য
অনেকটা বেশীই
দামী সেই তাসের সাম্রাজ্যে।
ভাবানুভূতির
চেয়ে সহানুভূতি কার্যকরী
আমার শরীরের
দগদগে আঁচড়ে...
তোমার বিলাসী
মসনদে।
বদলাবে আরও
একবার রঙ
তুমি বদলাবে
না জানি।
চিনবে সেদিন
রঙিন মুখোশগুলোর হাস্যকর রূপ
দর্শন বা
সাহিত্য বই ঘাটলে গোলমেলে লাগবে না
ওঠা-নামার
ইতিহাস।
নাহ্! আমি
দ্রৌপদী নই
ইতিহাসে লেখা
নেই আমার অস্তিত্ব;
আমি সেই
পদ্মিনী নই
প্রাণ ত্যাগে
আমি বীভৎস অপারগ।
যদি ভেবে থাক
বিনোদিনী
তবে বুঝে নিও
রঙ্গমঞ্চ আমার চাকরি নয়,
আমার ভালবাসা, প্রেম, সৃষ্টি...
তাঁর মত আমিও
গুটিয়ে নি ছন্দ, অপ্রকাশিত।
তোমাদের
দৈহিক, মানসিক নীতিবোধে
ধরা দেবে না
যার প্রকৃত বিহ্বলতা।
ঘৃণা বোঝো? বোঝো অসহ্য উন্মাদনা?
ত্যাগ।
ত্যাগ। ত্যাগ।
আমার নিশ্চুপ
আর্তনাদে, অনৈচ্ছিক নিরবতায়
মেপে নিও
আমার মাধুর্য।
আমার
সংবেদনশীলতাকে মূর্খ কলম ভেব না আর!
রাত্রির
প্রসন্নতায় আমি জপ করি শয়তানের তাণ্ডব।
ছিঁড়ে ফেলি, যা লিখেছিলাম মহা
ধুমধামে
আসক্ত হতে
থাকি বিরূপতায়।
ছোট হই জানি, তবে ছোট নেই আর
আজ নিজে এটা
মানি।
গল্পটা নষ্ট|
নদীতট
সমালোচিত হয় অবিবাহিত গল্পে।
রোজের
কাহিনীতে আসে নোংরামি, আসে নষ্টামি
আসে চরিত্র
খচিত নতুন কিছু শব্দগুচ্ছ।
লেখা হয়ে যায়
সমালোচকদের আরও বেশ কিছু পাতা।
সন্ধ্যা নামে
এ-ভাবেই ক্লান্ত নদীতটে।
তোমার
নিঃশ্বাসের উষ্ণতায় জড়াই নিজেকে।
স্থির জলে
চোখ যায়
বুনতে থাকি
অন্যমনস্কতায় আমাদের ঘর।
বটের
ঝুরিগুলো কুয়াশা মেখে আমাদের গল্পের
বালুচর স্নিগ্ধ
করে
আমরা জড়িয়ে
ধরি অলীক সুখ
জড়িয়ে ধরি
অবাধ্যকর স্বপ্ন
জড়িয়ে ধরি
বাস্তবতার চাদরে বোনা অবাস্তবিক প্রেমকে।
আমি ঘন ঘন
শ্বাস ফেলি তোমার খাঁজ কাটা ঠোঁটে।
অথচ কী
আশ্চর্য!
প্রেম আছে, ভালোবাসা আছে, আদর আছে,
যোনিপথে
হতাশা আছে, অশারীরিক সুখ আছে
আত্মায় আশক্তি
আছে...
কিন্তু, নেই কোনো
স্বপ্ন-বিলাসিতা
এ গল্পের নেই
কোনো বিধিসম্মত বাঁধন।
শুধু আছে
নতুন শব্দে মোড়া নষ্ট শরীর দুটোর ঐতিহ্য।
সাদা কুয়াশা
জমে অন্ধকারের ছিদ্রে,
বুক ছটফট
করতে থাকে।
নদীর দু'তট প্রেমে মগ্ন
সেতুবন্ধনে
পূর্ণিমার
গোল চাঁদ লজ্জা লোকায় অন্তর্বাসে
শাঁখ বেজে
ওঠে পার্শবর্তী কালী মন্দিরে...
হঠাৎ জাগ্রত
হয় ক্ষোভ। নষ্ট হয় সন্ধ্যা
বিলাপে কাঁদে
বেহিসাবি রাস্তার ধার।
নদীতট আবারও
গাঁথে আড়বাঁশিতে রাধা-কৃষ্ণ-লীলা।
আমি
বাস্তবতায় ডুবতে থাকি আবার
ফিরতে থাকি
অচেনা পথ ধরে চেনা জীবনে।
তোমার সুখের
শাঁখ, তোমার নেওয়া
দায়িত্বের ভার,
তোমার
ভাগ্যবতীর সিঁদুরে
আবারও
অস্তিত্ব পায় আমার পড়া ইতিহাসে।
বিমুখ
ধুপ প্রদীপে
ভিড় সেজেছে, ফুলের ঝলক প্রবল
নিন্মবিত্ত
প্রাণীর ঘরে শীত সেরেছে এখন।
গঙ্গা জলে
ব্যবসা ওঠে, পরান্নভোজী নেয়
শ্বাস
গ্রীষ্ম
দিনের খুব দুপুরে শ্বাস কষ্টের অবকাশ।
বাতাস তো বয়
ভীষণ তেজে, কবির ঘরে কবিতা
জানলা খুলে
প্রণাম ঠোকে পাশের পাড়ার গনিকা।
আচার শুকায়
ভাঙা ছাদে, চিলেকোঠাও ক্লান্ত
দেখতে দেখতে
পাথর আদর, চারপাশটা শান্ত।
গয়ণাগুলো
দারুণ ভারি, পুতুল খেলে বিধাতা
কোনটা তবে
সত্যি পুতুল? প্রশ্ন তুলুক জনতা।
গলির মোরে
ভাষণ চলে নতুন নতুন শব্দে
সাহিত্যিকও
হার মানবে প্রচার করার রঙ্গে।
আনো তেজী
দাপট হাওয়া--- আয়লা বা অশ্লেষা
এই ভাবেই
অশিক্ষিতের বুদ্ধির হোক শুশ্রুষা।
কাকে সমাজ
কাপড় পড়ায়? কার নিশানে দুধ ঢালে?
কার পেটে রোজ
খাবার দিতে চড় কষাল দুই গালে?
বুদ্ধিজীবি, 'আপনি' স্বাধীন! ভুল বললাম, 'আপনারা'...
"দেশদ্রোহী" আখ্যা দিতে জিহ্বা জানি বাধবে না।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, বলুন 'নাস্তিক', বা 'ধর্মবিমুখ পাষণ্ড'
কী ভেবেছেন
উন্নয়নে অস্বচ্ছ দেশ অখণ্ড?