তন্ময় ধর
শপিং মল থেকে লেখা কবিতা
শব্দগুলো এস্ক্যালেটরে চেপে উঠতে শুরু করল। উজ্জ্বল পোশাকের
সামনে থামল কয়েক মুহুর্তের জন্য। ঠিক সেখানেই আমাদের মিসক্যারেজ হয়েছে। পাশের
স্টোরে রক্তমুখী জুয়েলারিতে কুড়ি শতাংশ ক্যাশব্যাক। হালকা কান্নার পাশ দিয়ে
ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে আসছে মাংস।
শব্দগুলো দুলছে। অন্ধ মানুষের স্রোত এসে ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে
তোমার সন্তানের প্রথম আঙুল। হাসপাতালের ডাক্তার সামান্য নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বদলে
দিচ্ছেন তোমার ওষুধ। সাধারণ পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশও রেড ওয়াইনের আড়াল থেকে দেখছে
তোমায়।
এসবের মধ্যেই ধামাকা শুরু হয়ে গিয়েছে। রক্তাক্ত ক্যুইজে
আমরা প্রায় জিতেই নিয়েছি দুধ-শাদা
ফক্সওয়াগেন। চাবি ঘোরাতেই সন্তানের আঙুল ভাঙার শব্দ। শব্দের হৃদস্পন্দন আমরা থার্ড
ফ্লোরে ফেলে এসেছি।
আবার আমরা এস্ক্যালেটরে। দ্যাখো, এই রক্তাক্ত ফ্লোরটা দেখাই হয় নি আগে। ডিসকাউন্টের চারপাশে
ছড়িয়ে থাকা মানুষের ঘনজ্যামিতির ওপর লুকোচুরি খেলছে তোমার মৃত সন্তান। কারো
রিংটোনে হঠাৎ চমকে উঠল রাগ দরবারী কানাড়া... বলবাম রসীদা জনম... তু বিয়া কে জিন্দা মানম...
সে শব্দে অর্ধেক ভায়োলিন। শিশুর অনন্ত ঘুমের দেয়ালার পাশে কেঁপে
উঠছে তোমার আই-লাইনার। বিউটিশিয়ান তোমাকে স্থির থাকতে বলছেন। আমাকে শেয়ার
ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে বাধ্য করছে একটি রহস্যময় মানুষ
ম্যাজিক থিয়েটার থেকে লেখা কবিতা
পোশাকের রঙে প্রথম ম্যাজিক শুরু হল। শিশুর মুখ এখন
পরিবর্তিত। সে এখন শরীর নয়, সে এখন মন।
তুমি ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দিতে দিতে দেখছো, যাদুকর আস্তে আস্তে বুদবুদ হয়ে যাচ্ছেন। থিয়েটারের ছাদ চুঁইয়ে কান্নার জল
পড়ছে।
অদৃশ্য ম্যাজিক এসে খেয়ে যাচ্ছে আমাদের সম্মোহন ও জন্ম-মৃত্যুর ইচ্ছে। পরিত্যক্ত টিকিটে, খিদেয়, উত্তেজনায়
নতুন যাদু তৈরি হচ্ছে। বুদবুদ থেকে ফিরে আসছেন অভুক্ত যাদুকর। আমাদের ছায়া অহেতুক
চিৎকার করে উঠছে।
দেহরূপী জল ছিটিয়ে গল্প শেষ হচ্ছে। কৃত্রিম ঈশ্বররূপী জল
থেকে বদলে যাচ্ছে শিশুর মুখের আলো। আমাদের বুকের পর্দা উঠছে আর নামছে। আমাদের
ভেতরে ঢুকে পড়েছে যাদুকরের আয়না, হাতঘড়ি ও
হারানো পয়সা।
কসাইখানা থেকে লেখা কবিতা
ছুরি বদলায়। শাদা মাছির ধারণা উড়তে থাকে আমাদের খামখেয়ালি
রেসিপিতে। শিশুর পায়ের কল্পনা, নখ ও
কাদামাটি ধুতে গিয়ে চমকে উঠছো তুমি। সন্ধ্যারাতেই লুব্ধকের ছায়া টানটান। ভুলে
যাওয়া মশলা কিনতে গিয়ে আমার রাস্তা রহস্য হয়ে উঠছে।
রক্তের পর রক্ত। কোন একটা প্রতিবিম্ব উঠে দাঁড়াচ্ছে। বোবা একটা
শব্দ চিৎকার করে বের করে আনছে মাংস। শব্দের ভিতরে তখন গভীর রাত। গ্লাসে সামান্য জল, কৌটোর তলদেশে সামান্য মুড়ি পড়ে আছে।
ছুরির ধার বদলে যাচ্ছে। শিশুর দাঁতে তৈরি হওয়া একটা
দূরত্বের ভেতর,
চলো, মশলা পালটাই।
আমাদের কথার মাংসে রহস্যময় হয়ে উঠছে ভবিষ্যৎ। এর কাছাকাছি কোথাও তোমার মিসক্যারেজ
হয়েছিল।
ফটোশপের ভেতর লেখা কবিতা
পুরনো একটুকরো কাগজ ছিঁড়তে গিয়ে মৃতশিশুর রঙ চোখে পড়ল
তোমার। শব্দগুলো সাজানো হয় নি। স্তরের পর স্তর ঈশ্বর খুঁড়ে চলেছে সফটওয়্যার। দুধের
গন্ধে বমি আসছে। পৃথিবীর হিমমন্ডল তোমাকে ঠকিয়ে দিচ্ছে।
ঠকে যাওয়া ঘনজ্যামিতির ভেতর পৃথিবীর নিঃশব্দতম মায়ের দুধ
তোমাকে শুকিয়ে ফেলছে। ফটোশপে আমার ব্যাকগ্রাউন্ড শুধুই বদলে যাচ্ছে অলৌকিক আলো।
দেবশিশুর নির্জনতায় আর কোন প্রশ্ন নেই।
স্পর্শ ছাড়াই রঙ বদলে যাচ্ছে এক অচেনা সীমান্তের দিকে। ভ্রুণহত্যার
আলোকবিজ্ঞানে আমরা গল্প বলে চলেছি রাতের পর রাত, নিদ্রাবিহীন।
বহুতলের ছাদে লেখা কবিতা
রেনেশাঁ শিল্পীর রঙ গড়িয়ে পড়ছে অন্য জ্যামিতির নিয়মে। বোবা
কান্নার ভারসাম্য সরিয়ে আমরা দেখছি নীল-হয়ে-যাওয়া একটি শিশু মিশে যাচ্ছে ভীড়ে। নাভিতে সেঁক দিচ্ছেন
পূর্বমাতৃকা। রূপকথার জন্মদিনেই মিসক্যারেজ হয়েছে।
না-থাকা একটা
শিশুর অস্তিত্বকে হাতেখড়ি দিতে গিয়ে আমরা রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছি। শিল্পী আমাদের
স্থির থাকতে বলছেন। প্যালিওলিথিক একটা যন্ত্রণার ভেতরে ভোরের স্বপ্নে চিড় ধরাচ্ছে
আমাদের দেহবোধ।
এত উচ্চতায় আমাদের শব্দ বড্ড বেশী কথা বলে নক্ষত্রের সাথে।
আর একেবারে কিনারার কাছে গিয়ে আমি বারবার ভুলে যাই, কেন ও কিভাবে মিসক্যারেজ হয়েছিল?