শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮

কাকলি ভট্টাচার্য



কাকলি ভট্টাচার্য

পাগলামি এবং
___________

অনেক পাগলামি হল--
এবার নোঙর তোলো,
পাগলামি নিয়ে আস্ত জীবন
বহু বর্ণ সমাবেশে - জগাখিচুড়ি।

অনেক পাগলামি হল--
ডিঙ্গা ভাসিয়েছ কি?
অস্ত্রাগার লুণ্ঠন থেকে কৃষক আন্দোলন,
বৃথাই জলাঞ্জলি ।

অনেক পাগলামি হল
নিস্তব্ধ- গভীর জ্যোৎস্না রাতে--
মহুয়ার দেশে --
গভীর ক্ষতে মহুয়ার ফুলের ঝরে পড়া।

অনেক পাগলামি হল,
কবিতা নিয়ে--
কত সব কারুশিল্পে - কথায় কথায়
জীবনপ্রান্তে-  আমি নির্বাক, শান্ত
অনেকটা বুদ্ধের মতই।








পাগল হাওয়া
_________

শীতের পরেই যখন সেই পাগল হওয়া,
আমাকে উদাস করে--
কুহু ডাকে বিশেষ স্মৃতিভারে জর্জরিত
আমি--
ওই পাগল হাওয়া এলে,-
মনে হয় এক্ষুনি  বৃষ্টি নামবে ।
প্রবল বর্ষণসিক্ত হয়ে --
নতুন পাতা গজানোর অপেক্ষায়।
পাগল হাওয়া এমনভাবে
আমার শরীরে - রক্তে- স্বেদে -
মিশে যায় - আমি কাঁপতে থাকি
অন্ধ চোখে দৃষ্টি পেয়ে --
দেখি আজ আবার  বসন্ত।।
______________________________________________________








এক পাগলের গল্প
_____________

এক বৈশাখের বিকেলে
সবে শীতলপাটি বিছিয়ে
ছাদে বসবে ভাবছে বউটি--
 মাথায় বেল ফুলের মালা ,
এমন সময়ে টিং টং --
দরজা খুলে দিশেহারা
পাশের বাড়ির ছেলেটা,
অল্পবয়সে মাথা খারাপ,
-- সবাই করে দূরছাই।
চার্ট পেপার মোড়ানো কি যেন একটা--
এগিয়ে দিলো বউটির দিকে--
ভয় পেয়ে চিৎকার --
বাড়ির ছেলেরা বীরবিক্রমে,
 মাথা নিচু করে সিঁড়ি দিয়ে,
নেমে পাগল ছেলে
বিড়বিড় শব্দ –
উনি রোজ জানলার পাশে –
ঠাকুর কে ধূপ দ্যান।
অনেক রাতে সবাই ঘুমলে বউটি
চার্ট পেপার খুলে দেখল
পেন্সিল স্কেচ - রামকৃষ্ণদেব
-- সারদাদেবী আর
দক্ষিণেশ্বরের মন্দির ।







দূরভাষে পাগলামি
_____________

এবার শীতে কুয়াশা ছুঁয়ে যায়নি কাচের জানলা,
শুধু বারান্দা থেকে
বছর আঠারোর মেয়েটি শোনে
তিনটি  কথোপকথন।
এক তরুণী দূরভাষে -- ভেঙ্গে দিচ্ছে সম্পর্ক-
তার প্রিয়তম'র সঙ্গে- কান্না, যন্ত্রণা
ছিঁড়ে খুঁড়ে একাকার।
অন্য দোতলায় ব্যালকনি ফিসফিস শোনে
মধ্যবয়সী মহিলার।
ঘুমন্ত স্বামীর ঘরের দিকে তাকিয়ে আবার
ব্যাস্ততা দূরভাষে --
মাঝবয়সের প্রেম--বলে কথা।
পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায় সবু দিদা রাতজাগা পাখি
অনেক কষ্টে ছেলের লাইন পেয়েছেন।
বিদেশে থাকে-- বড়ো চাকুরে-
সর্বস্ব দিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠানো
তারপর অপেক্ষা -- কবে আসবে
সোনা মানিক।
কিছু আসে না--- টাকা নয়, খবর নয়, ছেলেও নয়।
আজ সবু দিদা একটু জোরে বললেন--
আর আসিস না।
আর না।
তিনটি সম্পর্কে কুয়াশার আস্তরণ --- ঢেকে ফেলল
বারান্দায় দাঁড়ানো অষ্টাদশী কে ।







পাগলের প্রলাপ
_______________

আজ আবার ভীষণ আলোর  ঝলকানি
নতুন শো তে ব্যাস্ততা ঘিরে সাজো সাজো সব
সতেজ তরুণ গড়ছে নতুন কাহিনী
মঞ্চে আবার প্রলাপের কলরব।

বাইরে টিকিট হাউস ফুলের উচ্ছাসে,
আমরা কজন জড়িয়ে কাঁদি পরস্পরে -
আঁতিপাঁতি করে কাকে খুঁজি আশেপাশে
একটা টিকেট  রাখা থাকে রোজ কাউনটারে

মঞ্চ থেকে কালো কালো মাথা চোখ দেখে
তোমার জন্য প্রলাপ বলি নিরন্তর।
যদি উঠে আসো দর্শক-আসন থেকে-
যদি বলে ওঠো "ভুল ডায়ালগ আবার বল”

সব অভিমান সব স্তব্ধতা ভেঙে চুরমার।
গভীর রাত্রে হটাৎ খবর আমি নেই
অনেক বছর তোমায় খুঁজেছি বারবার--

এবার এলে হারিয়ে তোমার কথার খেই।