শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮

মলয় রায়চৌধুরী



মলয় রায়চৌধুরী

ব্লাড লিরিক

অবন্তিকা, তোর খোঁজে মাঝরাতে বাড়ি সার্চ হল

এর মতো ওর মতো তার মতো কারো মতো নয়

যেন এমন যেন অমন যেন তেমন নয়


কী করেছি কবিতার জন্য আগ্নেয়গিরিতে নেমে ?

একি একি ! কী বেরোচ্ছে বাড়ি সার্চ করে

কবিতায় ? বাবার আলমারি ভেঙে ব্রোমাইড সেপিয়া খুকিরা

কবিতায় । হাতুড়ির বাড়ি মেরে মায়ের তোরঙ্গে ছেঁড়ে বিয়ের সুগন্ধি বেনারসি

কবিতায় । সিজার লিস্টে শ্বাস নথি করা আছে

কবিতায় । কী বেরোলো ? কী বেরোলো ? দেখান দেখান

কবিতায় । ছি ছি ছি ছি, যুবতীর আধচাটা যুবা ! মরো তুমি মরো

কবিতায় । সমুদ্রের নীলগোছা ঢেউ চিরে হাড়মাস চেবাচ্ছে হাঙর

কবিতায় । পাকানো ক্ষুদ্রান্ত্র খুলে এবি নেগেটিভ সূর্য

কবিতায় । অস্হিরতা ধরে রাখা পদচিহ্ণে দমবন্ধ গতি

কবিতায় । লকআপে পেচ্ছাপে ভাসছে কচি বেশ্যাদেখা আলো

কবিতায় । বোলতার কাঁটা পায়ে সরিষা ফুলের বীর্যরেণু

কবিতায় । নুনে সাদা ফাটা মাঠে মেটেল ল্যাঙোটে ভুখা চাষি

কবিতায় । লাশভূক শকুনের পচারক্ত কিংখাবি গলার পালকে

কবিতায় । কুঁদুলে গুমোট ভিড়ে চটা-ওঠা ভ্যাপসা শতক

কবিতায় । হাড়িকাঠে ধী-সত্তার কালো কালো মড়া চিৎকার

কবিতায় । মরো তুমি মরো তুমি মরো তুমি মরলে না কেন

কবিতায় । মুখে আগুন মুখে আগুন মুখে আগুন হোক

কবিতায় । মরো তুমি মরো তুমি মরো তুমি মরো তুমি মরো

কবিতায় । এর মতো ওর মতো তার মতো কারো মতো নয়

কবিতায় । যেন এমন যেন অমন যেন তেমন নয়

কবিতায় । অবন্তিকা, তোর খোঁজে সার্চ হল, তোকে কই নিয়ে গেল না তো !







মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো

মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো

মুখ দেখে ভালোবেসে বলেছিলে, ‘চলুন পালাই

ভিতু বলে সাহস যোগাতে পারিনি সেই দিন, তাই

নিজের মাথা কেটে পাঠালুম, আজকে ভ্যালেনটাইনের দিন

ভালো করে গিফ্টপ্যাক করা আছে, ‘ভালোবাসিলেখা কার্ডসহ

সব পাবে যা-যা চেয়েছিলে, ঘাম-লালা-অশ্রুজল, ফাটাফুটো ঠোঁট

তুমি ঝড় তুলেছিলে, বিদ্যুৎ খেলিয়েছিলে, জাহাজ ডুবিয়েছিলে

তার সব চিহ্ণ পাবে কাটা মাথাটায়, চুলে শ্যাম্পু করে পাঠিয়েছি

উলঙ্গ দেখার আতঙ্কে মিছে ভুগতে হবে না

গৌড়ীয় লবণাক্ত লিঙ্গ দেখবার কোনও স্কোপ নেই

চোখ খোলা আছে, তোমাকে দেখার জন্য সব সময়, আই ড্রপ দিও

গিফ্টপ্যাক আলতো করে খুলো, মুখ হাঁ করাই আছে

আমার পছন্দের ননভেজ, সন্ধ্যায় সিঙ্গল মল্ট, খাওয়াতে ভুলো না

মাথাকে কোলেতে রেখে কথা বোলো, গিটার বাজিয়ে গান গেও

মাস অন্তর ফেশিয়াল করিয়ে দিও, চন্দনের পাউডার মাখিও

ভোরবেলা উঠে আর ঘুমোতে যাবার আগে চুমু খেও ঠোঁটে

রাত হলে দুচোখের পাতা বন্ধ করে দিও, জানো তো আলোতে ঘুমোতে পারি না

কানে কানে বোলো, “আজও উন্মাদের মতো ভালোবাসি

মাথা কেটে পাঠালুম, প্রাপ্তি জানিও, ফোন নং কার্ডে লেখা আছে








মহেঞ্জোদারোর মেটেল
কিশোরীর জন্য প্রেমের কবিতা

কী গণিত কী গণিত মাথা ঝাঁঝা করে তোকে দেখে

ঝুঁকে আছিস টেবিলের ওপরে আলফা গামা পাই ফাই

কস থিটা জেড মাইনাস এক্স ইনটু আর কিছু নাই

অনন্তে রয়েছে বটে ধুমকেতুর জলে তোর আলোময় মুখ

প্রতিবিম্ব ঠিকরে এসে ঝরে যাচ্ছে রকেটের ফুলঝুরি জ্বলে

কী জ্যামিতি কী জ্যামিতি ওরে ওরে ইউক্লিডিনী কবি

নিঃশ্বাসের ভাপ দিয়ে লিখছিস মঙ্গল থেকে অমঙ্গল

মোটেই আলাদা নয়, কী রে বাবা, ত্রিকোণমিতির জটিলতা

মারো গুলি প্রেম-ফেম, নাঃ, ফেমকে গুলি নয়, ওটার জন্যেই

ঘামের ফসফরাস ওড়াচ্ছিস ব্রহ্মাণ্ড নিখিলে গুণ ভাগ যোগ

আর নিশ্ছিদ্র বিয়োগে প্রবলেম বলে কিছু নেই সবই সমাধান

জাস্ট তুমি পিক আপ করে নাও কোন প্রবলেমটাকে

সবচেয়ে কঠিন আর সমস্যাতীত বলে মনে হয়, ব্যাস

ঝুঁকে পড়ো খোলা চুলে লিপ্সটিকহীন হাসি কপালেতে ভাঁজ

গ্যাজেটের গর্ভ চিরে তুলে নিবি হরপ্পা-সিলের সেই বার্তাখানা

হাজার বছর আগে তোর সে-পুরুষ প্রেমপত্র লিখে রেখে গেছে

মহেঞ্জোদারোর লিপি দিয়ে ; এখন উদ্ধার তোকে করতে হবেই

বহতা অংশুমালী, পড় পড়, পড়ে বল, ঠিক কী লিখেছিলুম তোকে---

অমরত্ব অমরত্ব ! বহতা অংশুমালী, বাদবাকি সবকিছু ভুলে গিয়ে

আমার চিঠির বার্তা তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে তুই আমাকে জানাস








সোনাগাছিতে বৃষ্টি

পাকানো সিঁড়ির শেষে, তিনতলার বাঁকে, বলল পিসতুতো দাদা

এই হল সোনাগাছি, শহরের রাণি, ফি-রাত্তিরে পাঁচ লিটার

খোকাখুকু জমা হয় এ-পাড়ায়, ভেবে দ্যাখ, মৌজমস্তিতে নষ্ট

কতশত মহান পুরুষ-নারী, জন্মাবার আগেই খাল্লাস ;

ওই যে গুটকাঠোঁট মাসি, ওকে বললেই, যাকে চাস, নিস---

এখন তো চুলখোলা মেয়েদের নধর দুপুর, সকলেই ফাঁকা,

হাফ রেটে সুন্দরীতমাকে পেয়ে যাবি ; কাজ আছে, আমি চললুম ।


ঘরে নয়, বিছানায় নয়, চলো না, কালবৈশাখিতে ভিজে

প্রেমিকার অভাব মেটাই’, বলি কালো মেয়েটিকে ।

চুড়িদার শ্যামলিমা আর আমি কোমর জড়িয়ে

আহিরিটোলার ঘাটে ঝোড়োজল গঙ্গায় নামি--

ও হয় ফোলানো পালের নৌকো, চিৎসাঁতার দোল খায়

আমি হই লগিঠেলা ভাটিয়াল মাঝি ।


আবার এসো কিন্তু, অ্যাঁ, প্রেমিকা ভেবেই চলে এসো

যেদিন পড়বে বৃষ্টি ; ভিতরে তো ভিজছি না

বাইরের ভেজবার দামটুকু দিয়ে চলে যেও।







কালো বিধবা

কালো বিধবার ডাক ফিরাতে পারি না

সঙ্গম করার কালে মনোরম মৃত্যু চাহিয়াছি

যেমতো পুংমাকড়ের হয় ; স্ত্রীংমাকড়ানি

থুতুর ঝুলন্ত রেশমে বাঁধি আহ্বান করিবে

আষ্টেপৃষ্টে সবুজ পাতার উপরে লয়া গিয়া

মোর পালপাসখানি যোনিদ্বারে লইবে টানিয়া

দশবাহুর আলিঙ্গনে শুষিবে লক্ষ শুক্রাণু

দিবাদ্বিপ্রহরে নিশিডাকে আক্রান্ত থরহরি

ব্যকরণ বিন্যাস গণিত শিখাবে দশ নখে

আমি ক্লান্ত হলে পর ক্রমশ খাইতে থাকিবে

সঙ্গম চলাকালে চাখিবে সুস্বাদু ঝুরিভাজা

উইপোকাসম লিঙ্গখানি কুরিবে প্রথমে

প্রেমিকার উদরে প্রবেশ করিয়া কী আনন্দ

বুঝাইব কেমনে, সমগ্র দেহ যে গান গায়--

আহ্লাদের কর্কটরোগ তোমরা বুঝিবে না