শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮

শাহানারা ঝরনা



শাহানারা ঝরনা

চিঠি

প্রিয় প্রিয়তি , পাখিরা উড়ে যায় অনেক দূরে ----!

ওদের কোন নিবেদ্য
সুচিক্রম নেই ,নেই টাচস্ক্রিন মোবাইল ফোন ।

বাতাসকে নিয়ন্ত্রণে রেখেইওরা আকাশের সাথে সখ্য পাতে ,

মেঘেদের বুক থেকে খুঁজে নেয় প্রিয় কোন অনুসঙ্গ ।

পাখিরা নাগপঞ্চমীর খবর রাখেনা ।

মনের গহিনে ঢেকে ঘৃতকুমারীর আবেশ ---
ডানার ভাঁজে সাজায় প্রীতি পদাবলির মাচান ।

কখনো বা ওরা লোকাচারের যন্ত্রণা সয়েই

খড়কুটোয় বাসা বানায় গাছের ডালে

কিংবা গেরস্থিদের রান্না ঘরের কোণে ।

লৌকিকতার আচরণ ভেঙে বৈরিতার মোকাবিলা করে ,

আবার সম্পর্কের দাবি নিয়েই সকালে ভাঙায় মানুষের ঘুম ।
প্রিয়তি ---
এখনো সময় আছে , এসো শিখে নিই প্রকৃতির পাঠ ।

কিছুটা সময় কাটাইসবুজের মাঝে ।

বিশ্বায়নের তাপদহে পুড়ছে আমাদের ইচ্ছের ঘর বাড়ি ।
যদি চাই বিশুদ্ধ মননের বিস্তৃতি , সবুজ ছাড়া কোন উপায় নেই ।

প্রিয়তি , চলো এই নতুন বছরে আমরা প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ স্বজন হয়ে

পাখিদের সাথেই করি শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা ।

প্রকৃতির পরমায়ু নিয়ে ফুল পাখি আর প্রজাপতির
সাথেই টকশোতে বসি ।

প্রকৃতি আবার হোক গায়ক ও শিল্পী পাখিদের অভয়ারন্য !






বৈশাখী তুই

বৈশাখী তুই কেমন আছিস কাটছে বুঝি কষ্টে দিন
চলছে তো সব এক নিয়মে তোর কেনরে মুখ মলিন ?
বছর ঘুরে বোশেখ আসে, সবাই করে হুলুস্থুল
তোর বাগানে কেন তবু ফোটে না হায় সুখের ফুল!
গেরস্থালি সাজিয়ে রেখেও সবকিছু তোর বৃথাই যায়
কোন সে দানব তোর আঙিনায় অসংগতির সুর বাজায় ?
বঞ্চিত এই সত্তা নিয়ে থাকিসনা আর এমনি চুপ
প্রতিবাদের আগুন জ্বেলে দে পুড়িয়ে বিষাদ রূপ !
বস্তি ঘরে ওই যে কাঁদে দুঃখী মায়ের অবুঝ মন
ফুটপাতে ওই ক্ষুধায় কাতর কাঙাল শিশু সারাক্ষণ ,
আর কতকাল চলবে এমন, বৈষম্যের এই দহন
আর কতদিন কাঁদবে এমন নির্য্যাতিত নিঃস্ব জন !
পাশ্চাত্যের আগ্রাসনে বিশ্ব-বিবেক পুড়ছে আজ
আমরা মেতে সেই আবহে নতুন মেধার করছি সাজ
অবক্ষয়ের মাদল বাজে মানবতার নেইকো জয়
লোকান্তরের ভাবনা ভেবে আর কতকাল করবি ভয় ?

বৈশাখী তুই ওঠরে জেগে প্রতিবাদের জাল-মশাল
গর্জে উঠুক বঞ্চিত জন, যাক ছিঁড়ে সব বাধার জাল
শেকল ভাঙার শ্লোগান শুনে বিশ্ব আবার থমকে যাক
অসংগতির বলয় ঘেরা সংস্কৃতি মুক্তি পাক !
বৈশাখী তোর মনের মাঠে দে বুনে দে বোধের বীজ
বারোমাসই ফলবে ফসল , দিসনা তা আর কাউকে লীজ
প্রযুক্তির এই পার্বণীতে মাতে কালের অধীশ্বর
সেও দেখেনা অভাব পোড়ায় তোর ভাঙা ওই ছনের ঘর ,
পাল্টে নে তোর সুক-সারি দিন , সুখ ভরে নে অন্তরে
বৈরি ঝড়ে বিশ্ব কাঁপুক , মন ভরে নে মন্তরে ,!
লোকাচারের মিথ্যে নিয়ম ভেঙে বাজা নতুন সুর
অত্যাচারী বর্গিরা সব, যাক পালিয়ে অনেক দূর !
কেঁপে উঠুক ইতিহাসের শৃঙ্খলিত শক্ত ভিত
যাক ভেসে যাক নির্যাতন ও মিথ্যাচারের নষ্ট-গীত !

বৈশাখী আয়, হাত দুটি ধর, আমরা আছি সঙ্গে তোর
কালান্তরের পথটি ধরেই হাঁটব সবাই, কাটবে ঘোর ,
মন্ত্রপূতের মহৌষধি এবার সবাই করব পান ,
মিলেমিশে গাইব সবাই, সাম্যতা ও সুখের গান
তোর মনেতেও নতুন বছর , অন্যধারায় দেবে দোল
সঞ্জীবনী বার্তা নিয়েই বৈশাখী তুই , ঘোমটা খোল !!!







মন ছুঁয়ে দিস

তুইতো থাকিস ভাবজগতে আমায় ভাবিস কই
আমি আমার ইচ্ছে নিয়ে তাই সুদূরে রই
সেলুলয়েড মন ক্যামেরায় স্বপ্ন আশাতীত
যোগী সেজেও হায় বুঝিনা বিনিবর্তন রীত
সেলিব্রেশন নিয়ম কানুন আমার জানা নাই
অনুদবেগেই তাই নিয়েছি ধূলোর মাঝে ঠাঁই
ভাবছে কে কী- তা জানাতো দোষের কিছু নয়
তোর হৃদয়ের ভাবনা নিয়েই আমার যতো ভয়
দূর্দিনে বা সুদিনে হোক দুই জীবনের বাস
তাই বলে কী শুনতে হবে ঝড়ের পূর্বাভাস!
ইচ্ছে খাতায় আঁকিবুকি দোলনা দোদুলদুল
স্মৃতির ঘরে আসন পাতে কিশোরি বেতফুল
আকাশ দেখে বাতাস শোনে কান পাতে রোদ্দুর
বিস্মরণের পথ ধরে তুই যাসনে উদাসপুর
হোমওয়ার্কের চাপে ঢাকা পড়ছে কতো রেশ
মন রুটিন ও প্রত্যহিকীর আবেশ তবু বেশ
অনুপূরক আশা নিয়েই কতোই তো দিন যায়
কেউ কি বাজায় বিষ-বাঁশি তোর মৌন আঙিনায়?
মায়ামুখীর ছোঁয়ায় যদি মন ভরাতে চাস
সময় করে একটু না হয় পড়িস ইদিপাস
মনোবিদ্যার কারিকুলাম বৈধ যদি হয়
ভিনজগতের সাধক হয়েেই পোড়াস অবক্ষয়
সুযোগ পেলেই মন ছুঁয়ে দিস অতীন্দ্রিয় ক্ষণ
আস্থা রাখিস, হবেই হবে, নিগূঢ় আলাপন!!







স্বপ্নের ঠিকানা

আকাশ ছুঁয়ে দেয় হৃদয়ের সীমানা
কিছু কথা সিগ্ধতার সিঁথি কাটে মনে
আমিতো চাইনা কখনো- করুণার পাঠ্যধারায়
কেউ আমাকে মুখস্থ করুক !
আমি চাই মুক্ত বাতাসের ঠিকানা -
বৈষম্যের তাপদহমুক্ত বাসযোগ্য ঘর ,
কে আর করবে আজ সানুগ্রহের সরলীকরণ !

মরুচারি মনের ভেতরে পুরনো ইচ্ছেরা বনেদি হয়
শ্লোকের লাবন্য প্রভায় কেউ বা বুঝে নেয় ব্যঞ্জনার তাৎপর্য
কেউ কেউ আমার সাথে কবিতার পথে হাঁটে
কবিতা আমাকে বেঁধে রাখে মায়ামন্ত্রের তাবিজে
আমার অন্তরিত ভালবাসার গুচ্ছ ফুলকলিরাও
কবিতার আকাশে খোঁজে সৌহার্দের নিলিমা ।

অন্তরে গেঁথে নিয়ে সহজিয়া বার্তা
বোধ কর্মসূচির আওতাভুক্ত হই
অনুভুতির সুচিক্রমে যোগ হয় নতুন ধারা
কখনো
নাবিক মেঘের ডানায় উড়ে চলে যাই বহুদূর --
মধ্যরাতের জোছনা শোনায় ভালবাসার গান ।

মুগ্ধ নিসর্গতা নিয়ে অপেক্ষায় থাকি
স্বপ্নদ্রষ্টা কোন পূজারির আশায়
হয়তো একদিন - সেই দেবে বাসযোগ্য স্বপ্নের ঠিকানা !







স্বপ্নমালা

সুর-কোলাহল থেমে গেলেই বোধের ঘরে জ্বলবে আগুন
এখন আমি স্বপ্ন পোড়াই মন বনে গায় বিষাদ ফাগুন

পাতার ঘরে শূন্য বসত,পাতারা কী কাঁদতে জানে!
স্বচ্ছ হৃদয় দত্তক চাই নামবো জলে প্রেমের টানে

ও কারিগর! নতুন করে প্রাত্যহিকীর মঞ্চ সাজা
ভয়ভাঙা দিন ডাকছে কাছে একদিন ঠিক হবোই রাজা

সাগর বেলায় আপন মনে গাইছে কে ঐ অচীন পাখি
অশোক পলাশ শিমুল পোড়ে,এই আমিযে আশায় থাকি

নিত্য কতো ভ্রমণ প্রহর বাজেয়াপ্ত হচ্ছে দুখে
বাক্যদানের আবেশ তবু বাজছেরে কার দগ্ধ বুকে!

চাইছি তো হায় সাগর প্রেম সূর্যটা হোক জ্ঞান-উপাসক
আরাধনার মুক্তো-ঝিনুক জ্বেলেই দেবে মঙ্গলালোক

সভ্যতা নয় পুরুত ঠাকুর,অনাস্থাতেই ঘুরবে পথে
বৈশাখী রোদ গায়ে মেখে উড়বো এবার মায়ার রথে

কাল মহাকাল নাইবা গাঁথুক আস্থা সুতোয় স্বপ্নমালা
বিশ্বাসেতেই অমৃত হয়, স্বপ্ন-বিষের পূর্ণ থালা!!





চিঠি ছাড়া

কোন তিথিতে আসবে তুমি কোন আসনে বসতে চাও
সব জানিয়ে বার্তাগুলো একটু না হয় আগেই দাও!
বেতফুলেতে সখ্য পাতাই, তোমার কাছেই চাই যেসুখ
তোমায় ভেবেই ফুল-আরতি যত্নে সাজাই হৃদয় বুক
মন জগতের খবর নিতে হোক না অধীর জাতিস্মর
আমার আমি তোমার মাঝেই, একলা বসত একটা ঘর
নীল হলুদে আকাশ হাসে মন বলাকা উড়তে চায়
তোমার প্রেমের সোনার নূপুর বাজে আমার আলতা পায়
দিগন্তের ওই কল্পরেখায় হারায় যখন ক্লান্ত দিন
আমার আমি স্মৃতির দেউল আগলে হাসি বিরোধহীন
দাও না যতোই মেসেজ ই-মেইল, কিন্তু আমি চিঠিই চাই
চিঠি ছাড়া প্রেম-বার্তা!! আমার কাছে মূল্য নাই,,,!!!!