শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য





সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য

অবগাহন

আমার বুকের মধ্যে একটা আস্ত জলাশয় আছে। যেখানে ডুব দিয়ে আমি কল্পনা মাখি রোজ। তুমি দ্রাঘিমার মতো ছুঁয়ে চলে যাও মাঝ বরাবরতিরতিরে শিহরণে কেঁপে উঠি আমি। নিদারুণ শোকের পর এ যেন প্রথম প্রেমের অবগাহন। আমি আবারও একটা ডুব দিয়ে নিই। তুমি নেশাতুর চোখে মৃদু হেসে যাও। সহসা কানের লতিতে মৃদু শ্বাস পড়ে। চমকে উঠি। তুমি এক চুমুকে সমস্ত জল শুষে নিতে থাকো। আমি হারিয়ে ফেলি ঘাট পেরোনোর রাস্তা। শেষ চুমুকের পর আমি আবার ডুবে যাব। এবার তোমার পালা...




বসন্ত না এলে

একটা শীতঘুমের পর আমি সতেজ হয়ে উঠি। মিঠে রোদের পাশে নিজেকে মেলে রাখি পরম মমতায়। ঝরা পাতাদের মরসুম শেষে সোহাগ করি নিজেকেই। ঠোঁটেরও থাকে নিজস্ব আত্মকথন।প্রতিটি চুমুর গভীরে বাঁচিয়ে রাখি সুর, তাল, লয়। নির্ঘুম রাত নেমে আসে জানলার কার্নিশে। দু'হাত বাড়িয়ে জ্যোৎস্না মাখি আশ্লেষে। অবাধ্য সময়ের বেড়াজাল টপকে দেখি বসন্ত দরজায়। স্বপ্ন শেষের পর আমার আবার ঘুম আসে...






স্বীকৃতি

জীবনদর্শনের অসংখ্য পাঠ শেষ করার পরও তুমি নিজের এথিক্যাল ভিউ বদলাতে পারোনি। শরীর ছুঁতে গেলে এখনও অন্ধকার খোঁজো। নগ্নতাকে ঢেকে রাখো বিছানার সস্তা চাদরে। অথচ আমার শরীর থেকে সূতো খুলে নাও পরম আশ্লেষে। নিত্য নগ্ন হই হাই ভোল্টের আলোর নীচে। আততায়ীর মতো ঠোঁট চেটে নাও নিজের। আর তারপর ফরওয়ার্ড হয় মুহূর্তটা। এভাবেই সম্ভোগ এনেছ প্রতিবার।বৃক্ষরোপণের পর একবিন্দু জলও দাও নি। সুপ্ত বীজেও তো প্রাণ ছিল, টের পেয়েছিলে কি? মহীরুহ নয় পারলে একটিমাত্র চারাগাছের জন্মবোধ স্বীকার কোরো।






কবিতার জন্য

তোমার মাথার ভিতর যে গ্রে ম্যাটার আছে তার কোনও অংশে কি আমার নাম আদপেই ছিল? টেবিল ল্যাম্পের আলোর নীচে তোমার ভাস্কর্যে পরিপূর্ণ মুখের দিকে চেয়ে থাকি। তুমি একটি একটি করে উন্মোচন করো সাহিত্যের আবরণ। নগ্ন, তন্বী শরীরের বাঁকে খেলা করে তোমার সুচারু আঙুল। আবিষ্কারের অনাবিল সুখে মত্ত থাকো তুমি। নির্ঘুম চোখে আমি কল্পনার গুঁড়ো চেটে খাই। নিজেকে কবিতা ভেবে তোমাতে উপগত হই। প্রতিটি কবিতার শেষে তুমি সাক্ষর রেখে যাও। সেখানে আমার নাম থাকে না কখনও।






প্রতিচ্ছবি

সুনিপুণ হাতের পরিপাটি ভাঁজ খুলতে খুলতে সকাল চিনেছি। চিনেছি বিকেল গড়িয়ে মধ্যযামের উষ্ণতার যোজনগন্ধ। রাতচরা পাখির ডাক সূচীবিদ্ধ করে দেহজ পরিতৃপ্তিকে। ঘুমন্ত শরীর বেয়ে ঝরে যায় বিগত প্রাপ্তির স্বাদ, রক্ত... শত ক্ষত জন্ম নেবে এভাবেই রোজ নিভৃতে। আলোবিহীন পিচ্ছিল পথে শ্বাপদের আর্তনাদ মৃত্যুশোক ভুলতে দেয় না। তবুও শ্রাবণ নামে একই নিয়মেনোনা জলের প্লাবন এখনও উৎস পেরিয়ে মোহনায় লীন হয়।
ঈশ্বর দর্শন অধরা থাক...