রবীন
বসু
বৈশাখী দিনের দিকে
১
পুরনো জীর্ণ
স্মৃতি উড়ছে হাওয়ায়
চৈত্র
বেলাশেষে মন খারাপের গান
হলুদ পাতায়
বন্ধুত্বের অভিমান
ওই দেখ, আকাদেমি চত্বরে কবি
সম্মেলন সেরে
এবারের মত
কবিরা বিদায় নিচ্ছে l
ওদের
অক্ষর-সংলাপ, হারানো বর্ণমালা
ওদের
অন্ত্যমিল-ক্রন্দন
কোন স্থায়ী
ক্ষত কী রেখে গেল?
ফেলে যাওয়া
পদচিহ্ন পাতাহীন দীর্ঘ ছায়ায়
আগামীর
সম্ভাবনা খুঁজে নেয় l
২
উন্মুখ
প্রত্যাশায় চৈত্র শেষের ঝড় জানান দেয়
কে যেন আসছে
আজ
জটাভরা মাথা
ত্রিশূল হাতে ভৈরব কে তুমি?
ঝড় তখন বলে
যাচ্ছে, সে আ-স-ছে, আ-স-ছে—
কে এল ওই নতুন
প্রাণেশ?
সমস্ত ধুলো
উড়িয়ে, সমস্ত জীর্ণ-ঝরা
তাড়িয়ে
নববৃষ্টি
ধারায়
স্বপ্নের
উষ্ণীষ হাতে তুমি এলে বৈশাখ !
সব বেদনার
নীল, ব্যর্থতার ঢেউ
পেরিয়ে
আগামীর
সৃষ্টির প্রকাশ l
৩
হে বৈশাখ, তুমি তো কৃষক-বন্ধু, শ্রমিকের কষ্ট
ঘামে ভেজা
পরিশ্রম l
তবুও অন্নের
স্ফূর্তি, বেলমল্লিকার শ্বাস
সৃষ্টির
একবুক আশা, ঋতুর প্রথম পথিক l
পৃথিবীর সব
প্রেম তোমাতেই জড়ো হয়
তোমাতেই
বিবাগী পুরুষ খোঁজে বাউল আশ্রয় l
সব আশ্রয়
ঠিকানা খুঁজে নিক
সব ঠিকানা
নির্দিষ্ট আশ্রয়ে ফিরে যাক
ফিরে যাক
মানব-মানবী সম্পর্কের গভীরে
বন্ধুত্ব
হাতে নিক যত্নে ধরা ভালোবাসার রুমাল l
৪
প্রতিটা
রুমালে আজ নতুন দিনের গন্ধ
প্রতিটা
গন্ধে লেগে আছে নতুন বছর
বছর তো
বৈশাখ-ই নিয়ে আসে,
সব বৈশাখের
গা-বেয়ে হালখাতা
নববর্ষের
উৎসব উঠে আসে l
উঠে আসে
আকুতি আকাঙ্ক্ষা নির্মিতির
ধারালো
প্রচ্ছদ নিয়ে পরিভ্রমণ
সব ওড়াউড়ি
হাঁটাহাঁটি পরিক্রমায় ফিরে যায় l
আমরা শুধু
তাকিয়ে থাকি উদাসীন বৈশাখের দিকে
মর্মরে
মর্মরে শুনি প্রথম ঋতুর গান l
৫
গান তো অনন্ত
ধরে, সব মূর্ছনা
পরিব্যাপ্ত হয় চরাচরে
তবুও মানুষ
আজ বড়ই আতুর
ভিতরে ভিতরে
এক কান্নার পাহাড় গড়ে
অনন্ত অভিমান
নিয়ে সর্বনাশের দিকে যায়
যায় এক
আত্মভুক বিনাশময় বিকেলের দিকে l
তবুও মানবতা
পাড় খোঁজে, দেশে দেশে দিকে দিকে
হাজারও
আশ্রয়ের হাত উত্থিত হয়
বিপন্ন মানুষ
চায় পুনর্বাসন
চায় অন্যতর
জীবনের মানে
তুমি তার হাত
ধরে যাত্রা কর বৈশাখি দিনের দিকে l