মধুমিতা
মুখোপাধ্যায়
অতীতের সোনার পাতায়
আমি মধু
মনের সে এক
ছোট্ট চিঠি
ভরা ছিল
নীলরঙা খামে।
অনুভূতির
সুরভী মাখিয়ে
পাঠাই নি
ডাকে তার নামে।।
পৌঁছাতে পারি
নি কখনো
সে উদাস মনের
পৃথিবীতে।
বাঁধিয়েছি সে
নির্মল ছবি
হৃদয় কোঠরে
অতি নিভৃতে।।
আমার অলীক
ভাবনাতে
পলাশের রঙে
রেঙেছে সিঁথি।
সহবাসে
ভেসেছি ভালবেসে
স্বপ্নেতে
সেজেছে বনবিথি।।
বহুযুগে থরে
থরে সাজানো
প্রেমের সে
একাকী জগতে।
প্রকাশিত হয়ে
পড়ে শেষে
নিঃস্বতা
এসেছে অতর্কিতে।।
আকন্ঠ সে
চুম্বনে আজো
শিহরণ জাগে
অবুঝ মনে।
সমর্পনে
দিয়েছি এ প্রাণ
বুকভরা
অমৃতসুধা দানে।।
যা ছিল-না
পাওয়ার খাতা
ভরতে চাই নি
কোনো দাগে।
নিয়তির
নির্মম পরিহাসে
স্মৃতি আজ
বলিদান মাগে।।
যেও নাগো
পুরোনো এ বছর
আমি যে
পেয়েছি আপনাকে।
অতীতের
সাদাতে কালোতে
আমার বাসর
সাজানো থাকে।।
সময়ের অমোঘ
দুটো কাঁটায়
টিক টিক করে
চলে জীবনঘড়ি।
আমি আর ফিরব
না সময়ে
অতীতেই থাক
আমার পারের কড়ি।।
মেলামেশা
'কতটা মিশেছ'-এ কি প্রশ্ন
চরম!
'কতটা মিশেছ'-দর্পণে
লাজ!কি শরম!
'কতটা মিশেছ'-এরই অপর নাম
সখ্যতা?
'কতটা মিশেছ'- কি গভীর আজ অজ্ঞতা!
'কতটা মিশেছ'-এরই
প্রতিশব্দ আশা ভরসা!
'কতটা মিশেছ'-ছন্দিত জীবন
জোড়া হতাশা!
'কতটা মিশেছ'-মিশেও জানে
না মন!
'কতটা মিশেছ'-অলীক যত,আশার ছলন!
কতটা মিশলে-
নাম জুড়ে নেয় সম্পর্ক?
কতটা মিশলে-
জনে জনে ছড়ায় বিতর্ক!
কতটা মিশলে-
প্রাণ শেখে কেবা সুজন!
কতটা মিশলে-
বোধ খোঁজে ঘর বিজন!
কতটা মিশলে-
ব্যবহৃত চতুর কূট স্বার্থ ?
কতটা মিশলে-
কাজ শেষ 'তুমি ব্যর্থ'!
কতটা মিশলে-
জীবন প্রাণ মন ছারখার!
কতটা মিশলে-
ঈশ্বর নও তুমি দুরাচার!
কতটা মিশেছি-
তাই বাণভাসি কালো কলঙ্ক!
কতটা মিশেছি-
মুখোশে ঢাকে নিঁখুত নাট্যাঙ্ক!
কতটা মিশেছি-
তাই ভাল থাকা প্রতিক্ষণ!
কতটা মিশেছি-
পরিণামে নগ্ন নষ্ট জীবন!
কতটা মিশেছি-
ভুল শুধু ভুলের পাহাড়!
কতটা মিশেছি-
না পাওয়া জীবনের সম্ভার!
কতটা মিশেছি-
বয়ে চলি নদীর বর্জন!
কতটা মিশেছি-
প্রতারকী নির্ঘোষ,অ-মানুষী তর্জন!
স্বীকারোক্তি
ঠিক ততটা
কাছে এসেছি
যতটা স্বপ্নে
ভেসেছে পঞ্চদশী কিশোরী!
ঠিক ততটা
নিষ্ঠায় ভালবেসেছি
যতটা সমর্পিত
জীবন উৎসর্গে সহচরী!
ঠিক ততটা
মন-ই চিনেছি
যতটা অভিমানী
শিশির শীতল তুহিন!
ঠিক ততটা
দুহাত এগিয়েছি
যতটা অন্তরে
রেখেছি চিরন্তন গহীন!
ঠিক ততটা
দুজনে মিশেছি
যতটা
অর্ধনারীশ্বর যুগল সত্ত্বায় বিলীন!
ঠিক ততটা
উজাড় করেছি
যতটা বন্ধনে
বিবেক ন্যায়ত শালীন!
ঠিক ততটা
আপনার হয়েছি
যতটা একাকীত্ব
ঝরায় নিঃসঙ্গ যামিনী!
ঠিক ততটা
একান্তে ছুঁয়েছি
যতটা ছুঁয়ে
যায় মেঘ নীলআশমানী!
ঠিক ততটা
আঘাত সয়েছি
যতটা হৃদয়
উপড়ে পদপিষ্ট রুদ্ধচেতনা!
ঠিক ততটা
কালিমা মেখেছি
যতটা
বিশ্বাসে ঘৃণিত জীবন যাতনা!
ঠিক ততটা দোষ
দিয়েছি
যতটা ভরসার
উপহার নির্লজ্জ প্রবঞ্চন!
ঠিক ততটা
দূরে গেছি
যতটা অতলে
হারায় স্মৃতির অভিষবণ
4) ঈমান্
বর্তমান আর্ত
হাহাকারে
অণুরণন তোলে,
ঘৃণ্য অতীতের
তানপুরায়!
অতলে তলায়
দৃঢ়বিশ্বাস
দুর্নিবার
প্লাবনে,
মহাসমুদ্র
শুকায় মরুসাহারায়!
ভরসারা কেঁদে
ফেরে
দুয়ারে
দুয়ারে,
নিস্কৃতি
যাচে বৈতরণীধারায়!
ভুল ভালবাসা মাথাঠোকে
ক্ষুধিত
পাষাণে,
ঈমানের
আত্মাহুতি অগ্নিপরীক্ষায়!
আমার
আমার আকাশ আর
সাজে না
সোনালী
রক্তিম আভায়
দিনশেষে
গোধুলীর আলোতে কালোতে!
আমার বাতাস
আর মেশে না
ফুলেল সৌরভের
স্নিগ্ধতায়
চিরন্তনী
অনুভবের ছায়াতে মায়াতে !
আমার
কৃষ্ণমেঘ আর ঝরে না
প্রকৃতিতে
সবুজের সমারোহে
অঝোর বরষার
ধারাতে ঝাপটাতে!
আমার মাটি আর
ভেজে না
মরশুমী
সৃজনের আবাহনে
হৃদয়ের
বনছায়ে ফুলেতে ফলেতে!
আমার পৃথিবী
আর ভাসে না
দুঃখের
বিধ্বংসী প্লাবনে
অতল
সমুদ্রবারির স্রোতে চোরাস্রোতে !