শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮

মোকসেদুল ইসলাম



মোকসেদুল ইসলাম


যন্ত্রণার শঙ্খচিল

তোমার মর্মান্তিক হাসিতে পুষ্পসহ বৃক্ষ উজাড়
মৃত্যুও খুব কাছে এসেছিল সেদিন
আপন ঘরে কে বাজায় বিষাক্ত ভায়োলিন?
পৃথিবীর ফুসফুস ফুটো করে দেখেছি সেখানে কোন সবুজ নেই
শুধু লকলকে জিহ্বার আগুনে উৎপন্ন হচ্ছে দুষিত বাতাস।

চিত্রনাট্য তৈরি করা আছে আমাদের
প্রকৃতির ললাটে যারা আঁকছে রাক্ষুসে ছবি তারা মানুষ
তারপরেও কেউ কেউ প্রত্যাশার গভীরে হাত ঢুকিয়ে বসে থাকে
বিপরীত রেখাচিত্রে তুলে ধরে বহমান নদী।

তারপর সবকিছুই শূন্য
শূন্য দৃষ্টি, শূন্য ঘর
শুধু দূর আকাশে উড়ে যায় যন্ত্রণার শঙ্খচিল







নদীর সাথে আমার সংসার

জলের সত্যতা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই আর
মুখচেনা সারেং এর হাসি দেখেই বলে দিতে পারি
কতোটুকু মাছ আজ ধরবে মাঝি।
কিছুটা দূরত্ব থাকা ভালো তাতে চেনা যায় আলেয়ার আলো
ভুলতে বসেছিলাম শ্যাওলার শরীর, আঁশটে গন্ধ
নদীর নিজস্ব ঢেউগুলোকে মনে হয়েছিল জলকন্যা
আমার স্কুল জীবনের প্রেমিকার মতো বেণী করা চুল।
ভাঙ্গা ছইয়ের ওপর গড়েছি নতুন সংসার
অপেক্ষায় আছি
আবার যদি দেখা পাই সমুদ্র দেবতার
তবে তার অনুমতি নেবো নদীর সাথে ঘর করবার।







শহরের ডাকে হারানো শৈশব

একটা জীবন ঝরে যাওয়ার আগে জোর দাবী তোমার কাছে
বসার মতো একটু জায়গা দিও
অনুক্ষণ ভিজে ভিজে এই আমি আজ বড্ড ক্লান্ত
পোড়া শহরটাকে মাথায় নিয়ে হাঁটছি অবিরত
বস্তি ঘরগুলো পুড়ে গেলে আমরা হয়ে উঠি ব্রাহ্মণ
আমি মানুষকে বৃথা প্রশ্ন করি না
তারা কেমন আছে, ক্যামনে কাটে দিন?

ভালো আছি কিংবা নেই এর পার্থক্য খুব বিশাল মনে হয় না
অথচ সবকিছু অবাক করে দিয়ে দেখি শহর আমাকে ডাকছে
কিন্তু শৈশবে আমি সাগর হতে চেয়ে ছিলাম
আমৃত্যু ধরে রাখতে নিজের যৌবন।





সবুজ ঘাসের ডাক

বহুদিন হলো ঘাসের  জমিনে পা রাখিনি। জলের জল্লাদের হাতে খুন হতে আর আপত্তি নেই। এ আমাদের নাগরিক শহর, সান্ধ্য আইন জারির মতো মানুষগুলোও ভীষণ একা। বীভৎস সুন্দরের ন্যায় রাতের ল্যাম্পপোস্টগুলো যখন প্রাপ্তির হিসেব কষতে ব্যস্ত তখন রূপকথার বুননে আমার কাটে ব্যস্ত সময়। উচ্চারণে কাঁটাছেঁড়া হতে পারে, আমি গ্রামের মানুষ ভাই।সবুজ গ্রামের বুক ছিঁড়ে যে নদীটি বহমান আমি সেই নদীটির দাস ছিলাম। প্রকাশ্য উৎসবে শৈশবকালীন সঙ্গমে মেতেছিলাম যার সাথে সে আজ তুমুল পিপাসার্ত, সঙ্গিবিহীন কাটছে সময়। আমি মানুষ আমার কোন সাইনবোর্ডের প্রয়োজন নেই। ঘর অন্ধকার হলেই বলে দিতে পারি তার ভেতরেও আছে একটা সবুজ পর্দা। বিশ্বাস করো, হলুদ ঘাসের সাথে কখনো সখ্যতা ছিল না আমার। নাগরিক কোলাহলের ভেতর ডুবে থাকতে খাকতে হয়ে গেছি একলা বৃক্ষ। পরিত্যাক্ত ঘোষনা করার আগেই আমায় ডেকে নিও সবুজ ঘাস। কবিতার সমস্ত পাণ্ডুলিপি বিছিয়ে দেবো তোমার ওপর। চৈত্রের কড়কড়ে রোদ্দুর যেন মুখ লুকিয়ে ফেলে লজ্জায়। পোড়া বোধের ওপর পা রেখে হেঁটে আসবো, তুমি অপেক্ষায় থেকো।







আমাদের পূর্বপুরুষ সাঁতার জানতেন না

আমাদের পূর্বপুরুষ ঘাতক ছিলেন কিনা সেই আলোচনায় আজ যাচ্ছি না। কিন্তু নিজেই বন্দি হয়ে আছি বয়স্ক ঘোড়ার মতো। বিকারগ্রস্তের ন্যায় বসে থাকা ছাড়া আর কোন নৈর্ব্যক্তিকতা নেই জীবনে। অথচ সূর্যস্পর্শ না করেই আমরা শুদ্ধ হতে চেয়েছিলাম। পূর্বপুরুষের আদর্শকে গুলি করে দূর করতে চেয়েছিলাম অন্ধকার। কোনো শৈল্পিক পদ্ধতিতে নয়, প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে যারা করছে আন্দোলন বৃক্ষের অঙ্কুরিত হওয়া থেকে ফলবান হওয়া পর্যন্ত একদিন তারাই উপেক্ষা করেছিল সব। পূর্বপুরুষ আগুন নিয়ে খেলতে ভালোবাসতেন অথচ ভুলে গিয়েছিলেন প্রজন্মের অস্থিরতা। জানতেন বীজ বুনে কীভাবে ছড়িয়ে দিতে হয় সংক্রামক ব্যাধি। দাঁড়িয়ে দেখছিলেন নর্তকীর দেহজ মুদ্রার নাচ, যে বংশ পরস্পরায় ছড়িয়ে পরা ব্যাধি নিয়ে নেচে চলেছে অপূর্ব ভঙ্গিতে। কোন কিছুই নাগালের বাইরে নয়। যা বের হয়ে আসছে সময়ের জরায়ু ছিঁড়ে সেটা শুধু নয় আগুনের লীলা। সমুদ্রের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা পূর্বপুরুষের মুখটা ঘুরিয়ে নেয়া এখন অতীব জরুরী। কেননা জলে সাঁতার কাটার পদ্ধতিটা তাঁর জানা নেই।