রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

হাসিদা মুন



হাসিদা মুন

অপরিচিত আত্মার নিজসবী

মোমবাতির আলো সাঁতার কেটে রাতের কিছুটা পিছনে ফেলে যখন
তারাদের সাথে ধাবমান ছিলো দ্রুত তরঙ্গে ।
উন্মুক্ত উরুতে প্রতিমূর্তির এক নকশা বানাবে আজ রাত
অন্ধকারের ভাঁজে ভাঁজে । অশ্রুজল নীল সাহারায়
ছায়াপথ মাড়িয়ে নেমে এলো আত্মা ...
শুদ্ধতার লাল পাখার বাতাসে বিশ্বাসের কড়া নেড়ে জাগালো আমাকে ।
সমুদ্র থেকে হাওয়াজল এসে বসেছিলো চোখে এক ফাঁকে ...

বাঁক স্রোতে লবনের ক্ষীয়মান ধারা বয়ে যায় বুকের পাটাতনে
প্রমত্ত এক ভীড় অন্তরে হৃদয়ের কব্জির গোড়ায় কম্পন তোলে
আঁকড়ে ধরতে সামান্য অবকাশে সংক্ষিপ্ত দমভরা প্রাণ
তাতে দুরন্ত আনচান করে ওঠে প্রান্তিক চাহিদার পটভূমি ।
সন্তুষ্টি চায় দয়া বা করুণার অপদপিষ্টতায় ।

হৃদয়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে মনটা অহরহ মনের মানুষের
নিবিড় সান্নিধ্য পেতে চায় ।
নশ্বর জীবনে শুধু তিক্ততার পুনর্মিলন হয় পুনঃ পুনঃ ।
প্রতি মোড় বাঁকে যে  বোধের শুরু হয় সে জীবনবোধও বুঝিনা
কেন যেন এসব  বোঝাবুঝির  সংলাপ আসে এহেন মাঝপথে ?
অদুরে যখন মৃত্যুকে দাঁড়ানো দেখি তখনই বেশী নিঃস্ব মনে হয় ।
এতো সংক্ষিপ্ত   বেঁধে দেওয়া সময়ে  গোটা জীবন বোঝা   অসম্ভব ।
নিজের স্বকীয়তা বুঝতেই জীবনকালের বেশী অংশই খরচ হয়ে যায় ।
এ যেন  স্বল্প সময়ের যাত্রা বিরতির মতো -  
কিছুটা ক্ষণের  তাবু গাড়া এ জীবন ! 
অনতিকালের অসীমে অদৃশ্য যাত্রার ম্রিয়মান ভয় 
সাথে   বেঁচে থাকার সম্যক ভালো লাগাকেও ধরে রাখতে ইচ্ছে হয় ।
উঁহু , মোটেই তা যৌনতা নয় ।
এ যেন শুধু সূচীত সময়ে খানিকটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচা ।
কৃপন চাওয়া পাওয়ার যন্ত্রণা  আজীবন সম্ভ্রমের সাথে করে যায় সংগ্রাম ।
তাৎক্ষণিক সভ্যতার সংজ্ঞায় নিরাপদ কিছু হচ্ছে -সোচ্চারে দোষমুক্ততা জাহির করা ।
ইচ্ছের বিপরীতে অব্যবহার যোগ্য পদ্ধতিতে হলেও
প্রসিদ্ধ ঋষি সাজের চমক এনে উলটো পথে হেঁটে
দেখাতে হয়  তাবদ পারিপার্শ্বিকতাকে ।

আহকি পরিপক্ক  ভণ্ডামিতে  মেপে মেপে চলা
ভাষা ও ভাবের কি  সাযুজ্য ছলা কলা ......!

তাক লাগানোর দাড় টেনে স্বত্বার নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা !
কেই বা কি বিশেষণ দিচ্ছে সে দিকেও নিরঙ্কুশ চেয়ে দেখা ।
হা মনুষ্য আকৃতি !
হা ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রাপ্তির আশা !!
হা রক্ত মাংসের ভাষা ... !!!

যাক সব নিস্পত্তিতে পুড়ে হোক - খাক ।
যথারীতি অহরহ প্রতিক্ষার বিলাপ মানিনা কিংবা মানবোনা
মোক্ষম চিন্তায় আত্মাকেই বানাবো জীবনকালের সেনাধ্যক্ষ !
চেষ্টার মরুভূমিতে হেঁটে হেটে হাতের আস্তিনে তাঁর ধুলো ভরাট জমে ওঠে ।
তাও ঝেড়ে ফেলা যায়, কারণ সেতো লতা গুল্ম নয় ।
ঝেড়ে ফেলার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেও বুঝি এক একটা স্বত্বার আত্মা ।
ঘুম থেকে সেই ই - টেনে তোলে আমাকে বিশ্রাম অন্তে ।

কখনো স্বপ্ন ফুটফুটে জ্যোৎস্নার গ্রামে আমাকে হাতে ধরে নিয়ে যেতে থাকে
সময় অসময়ে খরা বা বাদলে এসব তাঁর জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেনা ।
কারণ সেতো কারো নিয়োগপ্রাপ্ত নয় !
নিজেই বয়ে নিয়ে যেতে পারে আমাকে একাকী যে কোথাও  ।
ঘন্টা বছর যুগ বয়সী যুদ্ধবন্ধি ধুসর বিষণ্ণ সময়
বাজপাখীর পুরোনো নিয়মে থাবা ফেলে ধরে নিয়ে যায় ...
আকাঙ্ক্ষার বাস্তবতা সৌভাগ্যকে দোলায় পাশের অচিনবৃক্ষ শাখায় ।
সেখানে বসে নখরে চেপে খুবলে খাবে মানব রক্তের নোনা স্বাদ ।
মিটাবে মনের বিবাদ - নিরাবতার উচ্ছল জোয়ার ভাটায় ।
পানিতে মার্জিন দিয়ে যেমন আটকানো যায়না সংযুক্ততা
তেমন আস্টেপিস্টে ধরে রাখতে চাই সেই আমাকেই ।

যার তারিখের এক অংশ যাচাই করেনা নিয়মের মানকযন্ত্র
অনুপম অধিকারের শিল্পপ্রাচুর্যে নিজস্ব ভাবে গড়া এ  নিজস্বী ।
পাওয়ার আশাতে বুকের নিজের অলিন্দ নিলয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ে যে  নড়াচড়া করে ।
সন্তোষপূর্ণ  ঠোঁটের ফুলের পেলবতা ছড়ানো আভায় প্রাপ্তি নাহলে
আমি বঞ্চিত হবো  বণ্টিত সৌভাগ্যে ।

মেঘের ভেজা খামখেয়ালি ভাব যেমন চিল হয়ে উড়ে  আসে
তারার ঝলকানি গুলো মুছে দিতে পারে অবশেষে
এমন ধারার মেঘকে মোক্ষম তাড়িয়ে না দিলে
ভাললাগার  মুহূর্ত এসেও অক্ষম স্থবির হবে ।
নিরেট মুষড়ে পড়া মুখ - বহুযুগ আগে যেমন অপরিচিত ছিলো
আমার না দেখা স্বপ্নগুলো মোড় ঘুরে হয়ত সেখানে হারাবে ।

পৃথিবীর কাছে আবারো সেই নিজস্বীতে -
অপরিচিত এক আত্মা হয়েই রয়ে যাবে ......





অতিরিক্ত অদেখা

সব কিছুই একই রকম রয়ে গেছে
এই যেমন আমি রয়েছি
সেই তুমি রয়েছো
সমগ্র দৈনন্দিন
গৃহপালিত নিরাপত্তা
সুযোগ্য অভিবাদন
অধিকারে পাওয়া নিজেদের জন্মস্থান
ধুলোমাখা শাল সেগুনের সারি
নদীর সমতলে ধোয়া প্রকাশ্য কিছু পুণ্য

চারিপাশে যে সব কিছুর থাকার আবশ্যকতা আছে
কফি কাপের ধুঁয়া
শাখাচ্যুত পাতার মিছিল
চারপাশে চলন্ত পায়ের ছাপ
ডিঙি পেড়ে দেখার কৌতুহল
তবুও মনে হয়
কোন এক জমাট বাঁধা অন্ধকারের ওপাশে
অতিরিক্ত কিছু রয়ে গেছে অদেখায়
এখোনো যে সমস্তটুকুই চোখের সম্মুখে এসে দাঁড়ায়নি
যা দেখার প্রচেষ্টায় সামনে এগিয়ে যাওয়ারা সদর্পে এগিয়ে যায় ......





অগ্রাহায়নের  প্রথম প্রহর

এক্কেবারে যুবতী এক টলটলে শিশির
সবুজ যুবক ঘাসের গায়ে গড়িয়ে পড়ছে
তাকেই আঁকড়ে ধরে
অগ্রাহায়ণের এমন হিমহিম সকাল
পুস্প পত্রপৃষ্ঠ বোনা সবুজ ঘাসেদের সাথে বসে আছি
প্রহর গুনছে ডুমুর পাতার আলকুশি ধার ফুটে বেরোবে বলে
পাশে পাইন গাছের সড়সড়ে শ্বাস টানার শব্দ
একটা লৌহকঠিন দিন নির্দেশ করবে ক্যালেন্ডারের তারিখ আজ
চুউউপ, এ মুহূর্তে কথা কোয়োনা ...

দেয়ালের কোণে চেরিব্লসম গাছের পাশের নীচটিতে
পল্লবিত জঠর থেকে উঁকি দিচ্ছে শিশু টোম্যাটো
খানিকটা নড়ে নড়ে পোস্তদানা কুঁড়ি মুখ খুলছে তার সাথে
লাল টুকটুক গরজিয়াস ঝলকানি ওর পাপড়ি জুড়ে

ডালিম গাছের ডালের ভিতরে টুনটুনি পাখীটা
আবার উসখুসানি করে বেরিয়ে এলো 
আরেক ডালের দাঁড়ে বসলো রোদে  আয়েশ করে
ফিরে এসেছে  তার জোড়াটাও তারই কাছে
সাই করে ঊড়ে এলো কালো ফিঙ্গেপাখীটা অকস্মাৎ
বরবটি মাচার কঞ্চির উপরে উচ্চ আসন নিলো সসন্মানে
আমি ওকে কদাচ মাটিতে নামতে দেখিনি ...

জামরুলের হলুদ পাতার নিচে থেকে বেরিয়ে এলো
কালো হলুদে ডোরাকাটা দেয়ালের শ্যাওলা খাওয়া শামুকটা
আমাকে দেখেই দুই এন্টেনা নেড়ে সুপ্রভাত বললো আনমনে
খোল থেকে একটু বের হয়ে ভোরের বাতাসে শ্বাস টেনে নিলো
হঠাত বীজত্বক মাথায় নিয়ে বারোমেসে মরিচের চারাটা
বড়শীর মতো বাঁকা হয়ে পিঠ বাকিয়ে দাঁড়ালো
সীমের শিকড়ের একদম মাঝখান ঘেঁষে ...

আমি শিশিরে ভিজে থাকা পাতা আর ঘাসেদের উপর আধশোয়া
আজ  বন্দর থেকে যুদ্ধ জাহাজ যাক ভেসে দুউউর কোন দেশে
দরকার নেই আমার জানার ,সে মিত্র বা শত্রুর বেশে ...

নির্ধারণ করা দৈনিকের শিরোনামে কি কি ছাপা হবে ?
কোন চার রাস্তার বাঁকে কেই বা কার
কিংবা কিসের অপেক্ষায়
হায় !
তার কিসসু জানবোনা ...

পাইনের নিচে আধশোয়া থেকে নিবিড় হয়ে আজ দেখবোই
এই লাল টুকটুকে ফুলটা কখোন কি করে
কতোটা আহ্লাদে
কতোটা সুমসৃণ পেলবতায়
কতটাই বা বিকশিত হয়ে ফুটে উঠবে
কতটাই মন ভরাবে  মনের দ্রাঘিমাংশ ......




গুঁতো  দিন

পশু চর্মের জুতো পরে
শুদ্ধিলাভ করে
পশু বৃত্তি না বাড়িয়ে
অন্যায় কিছু দেখলে দাঁড়িয়ে
তাদের মতো শিং দিয়ে গুতো দিন
আর  তা' না পারলে
পুরোটা শরীর 'গো' চর্মে ঢেকে নিন ...





সুযোগ্য হবো

অতঃপর মৃত্যুরমুখে বিজয়ের  মুকুট ছুঁড়ে দেবো

জয় করেছি যে  মানব সাম্রাজ্য তাঁর সুযোগ্য হবো ...