রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

সব্যসাচী মণ্ডল



    সব্যসাচী মণ্ডল

জন্মদাগ

তাকে হারিয়েছিলাম অনেক জন্ম আগে
সেই জন্ম দাগ এখনও ভুলতে পারিনি
খোলস থেকে বেরিয়ে আসা শামুকের মত-
নিঃশব্দ বিচরণ-স্মৃতির সরণি বেয়ে।
মোমের গলে যাওয়া দেখতে দেখতে
বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম, অন্ধকারের মোহময়ি রূপ
জোনাকির আলোর সঙ্গে তার অহরহ চুম্বন
দেখতে দেখতে হারিয়েছিলাম অনেক জন্ম আগে ।

মেঘ রঙা এলো চুলের মুগ্ধতা
গ্রাস করেছিল তৃষ্ণার্ত চাহনিকে,
সেই উন্মত্ততা আজও বন্দী ডায়েরীর পাতায় পাতায়
সবকটা চড়ুই ঘর বেঁধেছিল ঘুণ ধরা কার্নিশে,
ভিজে জানলার কাঁচে সেই চোখ দুটি-
আজও চেয়ে থাকে আর অতীত জানায় নালিশ,
নীরবে বিছানা-বালিশে,
শুনতে শুনতে হারিয়েছিলাম অনেক জন্ম আগে

আজও তো আছি, শব্দসাঁকোর এপার থেকে ওপারে
যাতায়াত, অথচ গভীর নির্জনতারা ছবি আঁকে
সাদা কালোর বর্ণময় ক্যানভাসে- রঙিন বিনিসুতো
ঠিক যেন মৃত্যুহীন ফল্গুধারার মত,
রাগ গলে জল হয় জানি, অভিমান মেশে কান্নায়,
একদিন চেয়ে দেখি- সে ক্যানভাসে দগদগে হয়ে আছে
অমলিন সেই জন্মদাগ।
মুছতে মুছতে হারিয়ে গেলাম অনেক জন্ম আগে............
পারিনি, হয়তো পারবও না কোনোদিন।।





আধেক নুড়ি

শ্যাওলা ঢেকেছে আধেক নুড়ি,
বাকি আধখানা লুকানো কেন?
শেষ সূর্যও হদিশ পায়নি,
হয়তো সময় হয়নি এখনও।

নীলচে আলোয় ভরছে শহর,
সময়ের বয়স যাচ্ছে বেড়ে,
আবার বছর ফুরাতে চলে,
মন উড়ানের ঘণ্টি নেড়ে।

অনলাইনে প্রেম ছুটেছে
খাম বন্দি মোড়ক ফেলে,
মন খুঁজেছে মনের মানুষ,
আমার আঙ্গুল তোর আঙ্গুলে।

কুয়াশা নামে দু চোখ ঘিরে,
শীতসকালের গরম চা এ,
নিয়ন আলো স্বপ্ন দেখায়,
আধপেটা ঐ আধেক ঘুমে।

ফুটপাথে ওই ছড়িয়ে থাকা
আধপরা সব ফুলের কুঁড়ি,
ওরাই তো আজ শ্যাওলা ঢাকা,
আধ- লুকানো আধেক নুড়ি......





ভাব

আর একটু কাছে হয়ত আসা যেত,
হয়ত হত আর একটু পাশে পাওয়া
রয়েই গেল দূরে দূরে কেবল,
মুহূর্তের সেই প্রবল দাবিদাওয়া।

পারতে না কি আর একটু করে ভাবতে?
হয়ত তাতে জমত না সে পাহাড়
পারতে না কি অন্য ভাবে বুঝতে?
হয়ত তাতে মন জড়াত তাহার

আসতে যদি শরীর পেরিয়ে মনে
দেখা হত সে জটিল সন্ধিক্ষণে
জুঝিয়ে নিতে পথের সকল দাবি
তোমায় দিতাম আমার মনের চাবি।

তা না করে ভুল পথে যে গেলে
না চাইতেই মন গেল অবহেলে
শরীর তাতে খারাপ করে জানি
মন যে আমার ভীষণ অভিমানী

দুদিকে দ্দুই পথ গিয়েছে বেঁকে
অভিমানের আঁধার ঢেকে ঢেকে
হাওয়ায় ওড়ে ভুলের বোঝাবুঝি
সে পথ কি আর মিলবে সোজাসুজি।

ভুল ভাবনায় দোষ পেয়েছি যত
আরও গভীর হল হৃদয়-ক্ষত
রক্ত গড়ায় শরীর থেকে মনে
হাসি মেশে চোখের জলের কোণে

নতুন করে নেই কোনো আর দাবি
এ পথ কোথায় মিশবে সেটাই ভাবি
ভাবতে ভাবতে দেখি যে স্বপনে
হিন্দু আবার মেশে মুসলমানে .........






উড়ান - মন

মেঘের পরে মেঘ জমেছে -মন উড়েছে উড়ুক
প্রেমের তানে ঢেউ লেগেছে- সুরগুলি তার চড়ুক
কাশের বনে মাতাল নাচন্, হার মানা নেই, নেই তো বাঁধন
চুকিয়ে সকল বেদন কাঁদন, আনন্দ আজ জুড়ুক,
শারদীয়ার ঢাকের বোলে মন উড়েছে উড়ুক

নীল আকাশের গন্ধ মেখে আয় চলে আয় ছুটে,
তোর বুকেতে প্রেমের ফাগুন- নেব যে আজ লুটে
চল না মাখি সবুজ ঘাস, চল না কুড়াই দীর্ঘশ্বাস
চল না লুকাই কাশের বনে, এখনও তুই আমায় চাস ।

চল না কুড়াই শিউলি ফুল, চল না করি মস্ত ভুল
আদর মাখা নীলচে কোণে- বাধার নিয়ম পুড়ুক,
পুজো-প্রেমের উৎসবে আজ আলিঙ্গনে ভরুক
উষ্ণতাতে তুফান তুলে মন উড়েছে উড়ুক ।।






শীতের চিঠি

এলেম আমি অনেক দিনের পরে
যা কিছু মোর উজাড় ক'রে দিতে,
জানালা কেন বন্ধ ক'রে দিলে
উত্তরের ওই বসার ব্যালকনিতে ।

চাই তো শুধু পেয়ালা ভরা কফি
হাতে বোনা মায়ের উলের জামা,
পিকনিকে তে দেদার মজা লুটি
আলসেমিতে নেইকো দাঁড়ি, কমা।

দুপুর হ'লে ভরা গরম জলে
উহু! আহা! নানান রকম সু্রে,
দু চারটি মগ ছটফটিয়ে ঢেলে
বেরিয়ে আসা যেন খানিক উড়ে।

এই কদিনই এইটুকু তো মোটে
এর ই মধ্যে এড়াতে চাও মোরে?
পিঠে-পুলি কতই কিনা জোটে
আমার আশায় এই কদিনের তরে।

যাকগে বাবা, যাবই আমি চ'লে
হিমেল হাওয়াই থাকুক আমার মিতে ,
তখন না হয় জমিয়ে গিয়ে বোসো
উত্তরের ওই সাধের ব্যালকনিতে.........


...... ইতি তোমাদের -শীত