সুপম
রায়
অজানা
শব্দহীন ঝরনার নিচে
তোমার স্বরলিপি।
ধ্রুপদীর চিহ্নসুরে গাঢ়
অস্থিরতার শান্ত পদক্ষেপে
চিল ভেবেছি তোমায়। অথচ এই উড়ানহীন আকাশের বৃষ্টি
কোনও কিছুরই তোয়াক্কা
করে না,
পরাস্ত করে যায় তোমার
সমস্ত অহংকারী অভিমান।
কেউ কেউ তীর ভেঙ্গে জল
টেনে নেয় নিজের শিকড়ে।
ভুলে যায় উদ্বাস্তু
শিশিরের কথা,
ছিঁড়ে দেয় মনের সমস্ত
টান আজন্মকালের।
তুমিতো চাওনা এইসব !
চাওনা বাড়ুক দূরত্ব
সময়ের সাথে মনের !
হয়ত বা সীমান্তে এসে
কোনও একজন ফিরে গেছে বারংবার !
দিনের পর দিন স্থির বসে
ছিল সে। একাকী।
তুমি জানলেও না ! তোমার
গেটম্যানটা বলেনি কোনওদিন সে-কথা।
জি-এস-টি
ব্ল্যাক কফিতে সকাল শুরু,
জুলাই থেকে জি-এস-টি।
ভালবাসার ট্যাক্স দেবো
না
শপথ নিলাম অনেস্ট্লি।
যা কিছুরই দাম বেড়ে যাক
তামাক থেকে সুগার ফ্রি।
প্রেম তবুও কম হবে না
তোমার প্রতি প্রিয়শ্রী।
অন্য কোথাও চলুক শাসন,
রোগটা প্রবল কেমিস্ট্রির।
মিথ্যেগুলো নাকচ করে
সত্য বলেন যুধিষ্ঠির।
পাল্টা হাওয়ার আক্রমণে
কার্ড তোলা হয় পেনাল্টির।
সম্পর্ক আর ভালবাসায়
ট্যাক্স দেবো না
জি-এস-টির।
রূপচিঠির বয়ান
রেখে আসার পরক্ষণেই
হারিয়ে গিয়েছে সব।
নেশাগ্রস্ত চোখ মিলিয়ে
নিতে পারেনি দ্বন্দ্বযুদ্ধের কারণ।
তাপমাত্রা মেপে নিয়ে রোদ
মরেছিল গোধূলির শেষে,
ডানা গুটিয়ে নিয়ে ঘরে
ফিরেছে পরাস্ত শকুন।
হোটেল ঘরের আলো প্রায়
নেই, কাছাকাছি ছিল না কেউ।
অভুক্ত দানবের নখের
আঁচড়ে শরীর ছিঁড়েছে দানবীর,
তছনছ হয়েছে সমুদ্র
শৈশবপ্রাণ।
এমনই এক সময়ে দক্ষিণ
ক্যারোলিনের এডিস্টো সৈকতে
ভালবাসার অবয়ব এঁকেছিল
এক অপরূপ সুন্দরী।
লবণাক্ত জলের ঢেউতে
মুছেও গিয়েছে সব।
রাত বাড়লেই তারা ছোঁয়ার
নাম করে ফানুস উড়াত সে,
ভাসিয়ে দিত বোতলবন্দী
চিঠি সমুদ্রান্তরে।
সময় কখনও থেমে থাকে না। সৃষ্টি আর ধ্বংস লিখে যায় ইতিহাস।
এক প্রজন্ম পেরিয়ে এসে
দাঁড়িয়ে আছি
আরেক প্রজন্মের অপেক্ষায়। দেখি, আমারই দিকে ধীর গতিতে
ভেসে আসছে এক বোতলবন্দী
চিঠি।
চিঠির বয়ানে শুধু লেখা
ছিল – “আমার নাম সিনড্রেলা”।
জর্জিয়ার স্যাপেলো দ্বীপ
শুধু সাক্ষী ছিল এই ঘটনার।
স্মৃতিরও অতীত কিছু আছে
যা কখনই ফিরে পাওয়ার নয় ...
প্রথম শব্দ
তুমি দেখেছিলে আলো,
দেখেছিলে অন্তরমহলের
গভীরে জন্মানো বীজ,
সাক্ষী ছিলে সমস্ত বেড়ে
ওঠা শিকড়-স্বরলিপির।
নরম পাঁজরের সোঁদা গন্ধে
সুখী কান্নার গান শুনেছিলে,
স্পর্শ করেছিলে প্রগাঢ়
শব্দের নৈঃশব্দ্যে হেঁটে চলা শান্তির রং।
আমিতো বুঝিনি এইসব ! – বুঝিনি অবুঝ কাকে বলে,
বুঝিনি তোমার গর্ভের
অন্ধকারও আলোর কথা বলে।
অসীম হোমাগ্নির সম্মুখে
বসে প্রথম মন্ত্রের উচ্চারণে
যে শব্দ উঠে এসেছিল, আমি তাঁরই উপাসক।
জানি, তোমার নিরাকার স্নেহ-মমতা
আমাকে জড়িয়ে থাকবে আজীবন।
আমিও অবুঝাবস্থায় জেনে
গেছি,
তোমার সাথে আমার কীসের
টান, আমার কে হও তুমি ?
ভগ্নাংশ
আবীরে মোড়ানো রয়েছে হৃদয়,
তার সঙ্গে এই অতলস্পর্শ
গান।
তুমি সরিয়ে নিতে বলো এই
মরচে রঙের জল।
আমি বিষাদী তিরের লক্ষ্য
রেখেছি স্থির,
তুমি পুষে নিতে পারো মনে
অভিমান।
বেমক্কা আঁচড় লাগে
স্বপ্নে,
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে
জ্যোৎস্না।
তুমি সুচ ফুটিয়ে ঘায়েল
করো হাওয়ার অবয়ব।
আমি আলতো হাতে গোলাপ করি
অর্জন,
তুমি ছিঁড়েই দিলে হয়ত
সেটা দোষ না।
আবহমানের স্পর্শ থেকে
জন্ম,
মৃত্যু কেবল কফিনবন্দি হয়।
তুমি থামাতে চাও প্রণয়ের
আনাগোনা সংকেত।
আমি চিলেকোঠা থেকে
কুড়িয়ে আনি স্মৃতি,
তুমি পোড়াতে পারো
সমস্তক্ষণের আশ্রয়।