বিভাবসু
দে
অহল্যা
ছদ্মগোলাপের সিংহাসনতলে
সোনার গোধূলি কালো মেঘে
ছায়, অজানা চুম্বনে ;
প্রেমের দেবতা তার ঘৃণার
রং ভরে অন্ধ আদর্শে |
পাথুরে ফলকে জীবন কাঁদে, ছিন্ন পাণ্ডুলিপি তার ,
রক্ত-কুয়াশা ভিজিয়ে যায়
তপ্ত শিলালিপি,
দারুণ বসন্তদিনে নীরব
হাহাকার ;
পাষাণী যৌবন ধূসর শ্বাসে
ভরে ক্লান্ত ফুসফুস,
অজানা প্রতীক্ষা চলে
দিগন্তের মরীচিকায় ,
বহু বসন্ত কাটে মৃত্যু
শীতল নীরবতায় |
অপেক্ষা তার, পক্ষাঘাতে ভুলেছে সময়,
বরফঢাকা পাথরে তবু তপ্ত
ব্যথা ,
নীলাভ শীতলতায় গুমরে মরে
ব্যর্থ প্রেম তার ;
দিগন্তপারে তবু স্বপ্ন , আবার বাঁচার |
সময়ের চক্রপথে ভিজেছে
পাষাণ,
কালো মেঘ ভেঙে বৃষ্টি , আকাশে সোনালী সকাল ;
প্রেমের দেবতা এসেছে
আবার ,
গতিহীন শ্মশানপথে আজ
স্বপ্নকলির ষোড়শী যৌবন ,
পাষাণী হৃদয় তার সেজেছে
শিউলিহারে,
দেবতা পাষাণবুকে মৌন
অভিসারে |
চেতনা
অসীমের পথে লাস্যময়ী
আগ্রাসন ;
কাঁটাতার চেপে ধরে ধমনীর
রক্তস্রোত ,
সসীম পিঞ্জরে চলে
স্বার্থের নিশিযজ্ঞ ;
স্বপ্নদেখা চোখ, হলদে বাস্তব খুঁজে
সবুজের দগ্ধ ভাগাড়ে ;
ক্ষুধিত যৌবন ভাতের
ফ্যানে চোখ ধুয়ে
তবু দেখে পুবের আকাশ |
ঘাম
ধানের শিষে তোমার
রক্তবীজ ,
আমি আকাশ ছুঁয়ে স্বপ্ন
দেখি দিনে,
কানে গোঁজা হেডফোনে থেমে
যায় তোমার হাহাকার ;
তোমার কাদা-ঘামে ভেজা
সন্ধ্যায়
আমি পার্কে বসে রাতের
স্বপ্ন বুনি ;
তুমি যেদিন রোদে পুড়ে ইট
ভাঙো ,
আমি ইটের প্রাসাদ গড়ি
এ.সি-র আমেজে ;
মাইক হাতে মঞ্চে উঠি, সমাজের শির হয়ে,
আমার শিরদাঁড়া বেয়ে
শুধুই তোমার ,
রক্তশোষা ঘাম |
মরীচিকা
বসন্ত সন্ধ্যা ,
দুয়ারে কড়া নাড়ে,
পাঁজরের শুকনো খাঁজে
আবার কিশলয়
হাসে উল্লাসে ওই দখিনা
মলয় |
ছুটে যাই দ্বারে ,
প্রণয়ের হারে,
বসন্ত আস্বাদন |
সবুজ স্বপ্ন ভাঙে
নীরব অভিমানে ;
বাসন্তী-যামিনী মোর, তুষার মরীচিকা |
রাধা
কে যেন একা দাঁড়িয়েছে
কদমের তলে,
বাঁশির বিষে নীল শাড়ি
তার,
কাজলের কালিতে আজ কালোর
কালিমা ;
যে ঠোঁটে বেজেছিল বাঁশি,
ছিন্নমস্তা উল্লাসে আজ
শুধুই নীরবতা |
পাতাঝরা বসন্তদিনে একাকী
ষোড়শী ,
স্বপ্নে তার রাতের আঁধার
,
তারার জোনাকি জ্বলে
চোখের তারায় |
যে কালো অঙ্গারে এলিয়ে
পড়েছিল কিশোরী-ললাট,
আজ একাকী চিতায় তার দগ্ধ
প্রেমের ব্যথা ;
সোনালী যৌবনে শুধু
কালিমার হার,
ভিতরে বাইরে তার কৃষ্ণ
অভিসার |