রবীন
বসু
কবিতা কি অন্নের
প্রসাদ
ছন্দ কী প্রচণ্ড ক্ষুধার
মুখে ভাত বেড়ে দিতে পারে?
শব্দ পারে এনে দিতে
গ্লাসভর্তি জল তৃষ্ণার্ত-ঠোঁটে?
ধ্বনি উপমা অলংকার
অন্ত্যমিলের পঞ্চব্যঞ্জন ভারে
তবুও কবিতা কেন হাঘরে
শিল্পের মত ঘোরে গোঠে?
এত ক্ষুধা, অনন্ত জঠরজ্বালা কবিতাকে ছুঁয়ে থাকে
ছুঁয়ে থাকে ঘাম ক্লান্তি
শ্রম রাত্রিজাগা নির্মোহ বিষাদ
অথচ পড়ে থাকে খুদকুঁড়ো
অবশিষ্ট এ-কবির ভাগে,
স্বপ্নে শুধু ভেসে যায়
ঈশ্বরী পাটনীর অন্নের প্রসাদ l
কানাকড়ি
আমার বুকে বেঁচে আছে সেই
ঘরবাড়ি
আমার কবিতায় জেগে ওঠে
জলঘড়ি,
ঘড়ির শব্দে বেজে ওঠে
শুধু উন্মুখ ঢং
কিশোর বয়স মুখে মাখে তাই
ছাই রং l
সে রং কখন জাফরানি হল, এল প্রেম
প্রেমও তো পালটে গেল, নিখুঁত গেম,
মনপুরা দ্বীপে আজও
মাছরাঙা ভাসে
রাতের গভীরে স্বপ্নে
কারা উঠে আসে?
কারা হাতপাতে খোঁজে সে
রাতের বাড়ি
তুমি আমি কতদূর আজ ভাব
না আড়ি,
দূরত্ব মেপেই চলে
না-হারানো সময়-ঘড়ি
জানি না কবে ফিরে পাব
সেই কানাকড়ি l
সেই সব দূরত্ব
সেই সব দূরত্ব আজ মাঠঘাট
পার হয়
শান্ত লোকালয় পেছনে ফেলে
দূরপাল্লার বাস ধরে
হাইওয়ে দিয়ে যখন সে
গড়িয়ে গড়িয়ে যায়
দূরত্ব মাপে স্পিডোমিটার
কম্পনে জাগে ফেলে আসা
দিনাঙ্ক
সব চরিতার্থতা হিমঘুমের
কাঁথা জড়িয়ে নেয় l
অসফল হাওয়া তাকে ঠেলতে
ঠেলতে
এবড়োখেবড়ো মাঠে দাঁড়
করিয়ে দেয় l
দিনান্ত আর সেই দূরত্ব
মুখোমুখি বসে
সমকামিতার গল্প শোনে l
পরিভ্রমণ
কোথাও কী যাওয়ার কথা ছিল?
এই অবর বেলায়, এই মাটি ধুলো প্রান্তর ছুঁয়ে
এই চেনা গেরস্থালির গন্ধ
গায়ে মেখে
অন্য কোন ভৌগোলিক
সীমানায়?
নিজের ভিতরে দেখি অহরহ
প্রত্যাশা-উন্মুখ
এক পরিভ্রমণ দাঁড়িয়ে
থাকে;
এক নক্ষত্রশূন্য রাত l
কে যেন টুকি দিয়ে ডাকে
অনন্ত ইশারা নিয়ে জীবন
বেরিয়েছে পথে l
মানুষের পদযাত্রা সব
পরিভ্রমণ অতিক্রম করে
সব মায়া কার্যক্রম
দূরত্বেরই গভীরে ঢুকে যায় l
“এতদিন
কোথায় ছিলেন”
তিনটে জানালা পেরিয়ে
চতুর্থ জানালায়
যে চাতুর্য খেলা করে
আপডেট কবিতা তাকে পাশ
কাটায় l
অসম্ভব স্মার্টনেস নিয়ে
জিনস পরা মেয়েটা
খোলাচুলে তার গতিবেগ
বাড়িয়ে দিল
কেননা, বনলতা সুরঞ্জনা সুচেতনা আর
আকাশলীনারা বসে আছে
নন্দন চত্বরে,
একটু পরে কবিসম্মেলন
শুরু হবে l
মাইক্রোফোন হাতে
ঘোষিকা-কবি
যে কোন সময় তাদের
যে-কাউকে ডেকে নিতে পারে l
আর এই ডাকার ফাঁকে যে
অবকাশ
যে চলমান অস্থিরতা তাকে
পাশে নিয়ে
এক অন্তর্জাল রহস্য মাখে
মেয়েটি l
সরপুঁটির মত চিকন আর
চন্দনফোঁটা নিয়ে
সে মঞ্চের কাছাকাছি
যেতেই
এক বয়স্ক কবি অভ্যর্থনার
হাত বাড়িয়ে দিল l
হাতের পাঁচ আঙুলে দীর্ঘ
নখ
নখের ভিতরে জমে থাকা
প্রাচীন ময়লা—
আর ময়লার ভিতরে উঁকি
দিতেই
কে যেন বলে উঠল, “এতদিন কোথায় ছিলেন”?