শান্তনু
ঘোষ
কুয়াশাচ্ছন্ন
আজ আকাশে চাঁদ উঠেনি ।
নিঃশব্দে তুমি এসো ,
আমিও আসবো চুপিসারে ।
আলো জ্বেলে জ্বেলে তুমি
জ্বলছো ।
আমিও জ্বলছি আঁচে ।
কান্নায় ধুয়ে গেছে রাত ,
অভিমানী পথ চাওয়া ।
সারা শরীরে কুয়াশা জড়িয়ে
,
শুধু একবার এসো ,
আমিও আসবো নিসাড়ে ,
শিশির মুঠো করে ।
কত পথ মিশেছে আঁধারে ,
জোনাকিরা দেয় আলো ।
আমি দেখি ঝলোমলো ।
আজ আকাশে চাঁদ উঠেনি ।
সব আলো নিভিয়ে তুমি এসো
।
বহুকাল ,
ভালোবাসার কথা হয়নি
আমাদের ।
গন্ধ
গরমের দুপুরে তোর আসার সময় হলে,
ধূপ জ্বালিয়ে রাখতাম ঘরে
।
তোর খুব পছন্দের ছিল সেই
সুগন্ধ।
ঘরে এসে প্রাণ ভরে শ্বাস
নিতিস ।
তোর মনে আছে ?
আমাকে বলেছিলি, নীলগিরীর তেল দিয়ে
ঘর পরিস্কার করতে ।
নীলগিরীর গন্ধ তোর খুব
প্রিয়।
আলমারিতে কাপড়ের ভাঁজে
নেপথলিন,
স্নানঘরের তাকে রাখা
সিন্থল, তোর পছন্দসই।
তোর শরীরের মহুয়া সুবাস,
তোর চুলের সুরভি ঢেউ,
তোর বুকের সবুজ সুঘ্রাণ,
সারা ঘরময় শুধু তোর
পরিমল ।
এখন ক্লান্ত দুপুরে
গোধূলি নামে,
মন খারাপের সন্ধ্যা হয়।
ভালোবাসার গন্ধ গুলো,
একাকী আসে।
আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যায়,
নিঃসঙ্গ ভালোলাগা।
অকিঞ্চন
তোমার ব্যাপ্তি জুড়ে আমি
নেই কেন ?
সকাল বেলার চায়ের কাপের প্রথম
চুমুক !
তোমার ফুলঝুরি স্নানের
উষ্ণ তরঙ্গ ।
তোমার শীতের রোদ্দুর হতে
পারি না কেন ?
তোমার সকালের ব্যস্ততা, বিকেলের অবসর !
হতে পারি না ?
হতে পারি না, তোমার শরীর জড়ানো সুগন্ধি আতর ?
রাত্রির গভীরতায় তোমার
মৃদু শয্যাবাস ।
তোমার দুচোখের স্বপ্নীল
ঘুম ?
তোমায় ছুঁয়ে যাওয়া হিমেল
হাওয়া ,
তুমি যে কাজল পরো, যে লিপস্টিক লাগাও ।
তোমার তুঁতে রঙের শাড়ির
সুক্ষ্ম সূতো ,
তোমার কপালের টিপ, গালের লালি ,
তোমার আঙুলের আদর পাওয়া
বাগানের রক্তগাঁধা ,
তোমার ছোট বেলার হারিয়ে
যাওয়া দস্যি বিকেল ,
কেন হতে পারি না ?
তোমার যন্ত্রণার উপশম
হতে পারি না ?
সব মুস্কিলের আসান কাঠি ?
জমে থাকা কান্নার বাষ্প
হতে পারি না ?
তোমার সমস্ত কষ্টের
একচ্ছত্র অধিপতি হতে পারি না কেন ?
কিছুই কি হতে পারি না ?
তোমার ভালোবাসা হতে পারি না ?
ব্যথা
বয়স সাদা হচ্ছে ধীরে
ধীরে,
রক্তে চিনির স্বাদ, রক্ত শিরায় চাপ।
বুকের চিনচিনে ব্যথাটা
অবাধ্য হয় মাঝেমাঝে।,
তোমার অদেখায় বেয়াড়া হয়
বেশি।
হঠাৎ, দুম করে কিছু একটা হয়ে গেলে,
তুমি নিজেকে দোষ দিও না।
তোমার চোখের আর্দ্রতায়,
সমাজে সন্দেহের সন্ধ্যে
নেমে আসবে।
ওদের ভালোলাগার নাক
উঁচু।
তোমার ভিজে খোলা চুলের
রোদ্দুর
হওয়ার স্বাদ ছিলও আমার।
শীতের রোদ্দুরে, পাতা ঝরে।
তুমি বরং, ভুলে যেও।
আর খুব আনন্দে থেকো।
যেমন আছো আজকাল।
স্বপ্ন ভাঙ্গা সন্ধ্যে
সন্ধ্যে ছ'টার বাসটা চলে গেলো
ধুলো উড়িয়ে।
রুক্ষ শিমূলের নীচে বসে
রইলাম
ভাঙা স্বপ্ন হাতে নিয়ে।
এইভাবে, আসবে বলেও
তুমি ভুলে গেছো বহুবার।
আমি এনেছিলাম বিনিদ্র
রাত,
তোমার মুঠোয় অকাট্য
অজুহাত।
প্রতিবার শিমূল শুকিয়ে
গেছে,
শিখর থেকে তলিয়ে গেছে।
অভিমানের মান ভেঙেছে,
ভালোবাসা হার মেনেছে।
এক ঘণ্টা পরে আবার একটা
বাস আছে।
আসবে তুমি ?
এসে দেখো, স্বপ্ন গুলো আবার কেমন
সাজিয়ে নিয়ে বসে আছি।