রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

রত্নদীপা দে ঘোষ



রত্নদীপা দে ঘোষ

এসো মনখারাপ, বসো মনখারাপ
মন খারাপ হলে ব্যক্তিগত আকাশে যাই, ছুটোছুটি করি
মন খারাপ হলে ধারাপাতের বৃষ্টিঅঞ্চলে ঘোরাফেরা শুরু
মন খারাপ হলে কুহকের ম্যারাপ-বাঁধা কুহেলী
মন খারাপ হলে মারুবেহাগের বৃন্ত
অহরহ ভিজে যাওয়া আর কাকে বলে

মন খারাপ শুধু একটা বয়েস
মাত্রা ছাড়াই তার কাছে যাই,
ফুটি-ফুটি করি,
পাতা আর সবুজে

রোমকূপে রেখে আসি অমৃত-দাগ





মনখারাপ ঘরে প্রবেশ করেন
হাওয়ার কুচি পান করতে করতে
আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ
তারপর
বাতাসের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যান
তাঁর কথা ভাবতে ভাবতে সময় কেটে যায় হীরকের আঁচে
বসতের দুয়ারে ভারি হয় পাল্লার কাচ
মন খারাপ ফের প্রবেশ করেন আমার ঘরে





যে কোন সৃষ্টির সাথে মনখারাপ জড়িত।
যেমন বৃষ্টি মেঘলা সূর্য অস্ত। সবার সাথেই পৃথিবীর মন খারাপটি মিশে।  
যে কোনো ছবিআঁকা খুলে দেখুন। তুলির মনখারাপ আপনার মুখে এসে ঝাপটা দেবে। গানের কথা বলি... গানের চাবাগানগুলিও আপ্নাকে সুরের চারাগাছ জড়িয়ে। মনখারাপের দুটি পাতা একটি কুঁড়ি... আপনাকে শোনাবে উন্মোচনের অভিমান ... আপনি খারাপভুলতে চাইবেন। মন আপনাকে তা করতে দেবে না
এমনকি কবিসম্মেলনগুলিতেও। মনখারাপই একমাত্র পাঠক। কবিতার ধোঁয়ায় সিগারেটের ডাঙায়। মানুষ আর গাছপালার স্বরে। কান্নার ভেতরে মিলিয়ে যাওয়া এক প্রাকৃত মনখারাপ।
পাঠ করে অপ্রাকৃত কবি।





মনখারাপের দিনগুলিতে তোমাকে পাইনে কাছে
বুড়ি-ছোঁয়ার খেলায় কখন হারিয়ে গিয়েছি
গতজন্মের কৃষ্ণচূড়া, বাঁশীতে কাঁপতে কাঁপতে
ফুটে উঠেছে। দিনভর্তি গা।

ধুলো মেখে যে মনখারাপটি তাকিয়ে আছে
সেই তাকানোর দিকে আমি তাকিয়ে আছি
কথা কইতে পারছি না
মনখারাপের সাথে কথা কওয়া মুখের কথা নাকি ...






এবারের মনখারাপ সম্পর্কে কয়েকটি কথা ...
১। মনখারাপটি দীর্ঘায়ু। অল্পবসনা। মারকাটারি সৌন্দর্য।
২। দোয়েলের অশ্রুসিক্ততা আর মনখারাপটির মেদ বৃদ্ধি হয় সমান হারে।
৩। মনখারাপটির বয়েস আইনত আঠারো নয় তবু কেমন যৌবনের বাড়-বাড়ন্ত।
৪। এটি সাহিত্যচর্চার বৃহত্তম পরিকল্পনা। বর্শাফলকে উদ্ভাসিত হোক।   
৫। অসম্পূর্ণ। তবু আত্মপ্রকাশের সহযাত্রী আমার। আমাদের।
৭। মনখারাপটির অভ্যেস এক স্মৃতি-সম্পাদককে অনবরত পাঠককুল যুগিয়ে যাওয়া।

৮। এই মনখারাপিজ্যোৎস্নায় মনে পড়ে খুনখারাবিচাঁদ।