শেখ
সামসুল হক
ঢেউ দেখে কেউ
সেহেলী তোর কারুকাজহীন ঠোঁটের লাল দীঘিতে
এখনো কি বেদনা অপার হাসির পদ্ম ফুটে কি-না?
জানিনা জানিনা জানবোনা আর কোনদিন
একদশক বাদে বাহাদুর শাহ লেকের ধারে
শুধু চোখের দেখা হলেও কথা হয়নি তোর সাথে
সে দুঃখ বোধটা আজকাল মনের ভাঙ্গা মঞ্চে
স্মৃতি সভার আয়োজন করে বসছে নোটিশ ছ্ড়াাই।
দুলালী তুই বলীর পাঠা আমার কাছে পূজোর ফুল
কল্পনা সেতো স্নান ঘাটের জলকন্যা, বেদানা তুই
ছুটে যাওয়া জাবর কাটা ঘাস বিচালি সারা জীবন
পারশীন চিরদিন দিল আফরোজ নাচে গানে
মুখর হয়ে থাক তুই নীল কাঁচ জলসা ঘরে।
বেলী গন্ধছন্দহীন স্বরাজে বিরাজিত থাক
বাবলি তোর হাসির ঢেউ দেখে কেউ হারিয়ে না যায়
নীলকণ্ঠ নীলাঞ্জ তোর নীল নদের দুই তীরে
দন্ডায়মান যুদ্ধ পাগল কামচতুর সমরজান্তা।
পরিপূর্ণ তুমি
ডুবে যাচ্ছি নাতো, ঠাঁই কোথায় ? দূরে না কাছে
ময়ূর পঙ্খী নাও, ভীষণ দুলছে
দুঘন্টি পালে দমকা হাওয়া খেলছে দারুণ খেলা
এরপর আরো আছে ঢেউয়ের মাতলামী
ঠাঁই কি নেই তাহলে আজকে আমার
আপৎকালীন আশ্রয়ের পারাপারে
আপন বলতে এক নাম জানি সে আর কেউ নয়
আশায় ভালোবাসায় সেতো তুমি
তুমি ছাড়া এ দুর্মর ক্ষণে কারো কথা কোন
স্মৃতি
মনোভূমি আলোকিত করার সাহস করেনি
ডুবে যাচ্ছি নাতো ঠাঁই কোথায় দূরে না সুদূরে
মনপবনের নাও ভীষণ দুলছে হালে পানি নেই নেই
তুফানী হাওয়া যা খুশী তাই বলছে
ঢেউয়ের দাপট বাড়ন্ত লাউয়ের ডগায় সুন্দরী ফণা
তুলে
আপন পর ভুলে হানছে আঘাত
তবে কি কোথাও যাবার নেই কিছুই পাবার নেই
অভীরু মনোপ্রাণ ছুঁই ছুঁই করছে ভয়ের আকাশ
চেনা জানা কেউ নেই ধারে কাছে
অবসাদ আর ক্লান্তির কাটাতারে জড়িয়ে যাচ্ছি
কেবল
দশদিক থেকে ঘিরে ফেলছে গোলাপ বাগান
কোথায় তুমি নিশিভোর স্বাগত সূর্যমুখী
উদ্ধার করো ডুবে যাচ্ছি হে বিপত্তরাণেষু
চাঁদ ডুবলে ওঠে আসে রোদে ভাজা কড় কড়ে সূর্য
আমি ডুবলে ওঠে এসো তরতাজা পরিপূর্ণ তুমি।
বিপরীত স্রোত
নিমফস যৌবন অবিনাশী যথেচ্ছ
কৃষ্ণরাগী বিবরে ছুঁটে আসি অধরা
নাতিদীর্ঘ শ্বাসের হাসাহাসি সমরে
নিরুত্তাপ শ্রাবনে ক্রীতদাসী জঙ্গমে
হাঁসফাস ক্লান্তির দরদাম কেবল
চোখে চোখে উচ্চারিত নাম অশনি
হেঁটে যায় সমুখে খেলারাম ধবল
গণতন্ত্রে সমিল ডানবাম কেবলি
পাশাপাশি এখন আর্শিবাদ জাগর
নীরবতা ভঙ্গের নিত্য ফাঁদে অচির
তীরান্দাজ প্রস্তুত নিতে দাদ অনীক
কথা কাজে সঠিক মেঘনাদ উজির
মোহনীয় সময়ে বাসনার আঁধার
মন বলে থাকুক বর্গাদার না হয়
বাদলের সন্তুষ্টি অবিস্ফার মাটির
ফসলের নবান্ন বন্দনার পায়েশ
নিতে হয় মনের আকুলিত উচ্ছাসে
দেবতার কাক্সিক্ষত বিপরীত বাজনা
নক্ষত্রের রাত্রিবাস
জেগে আছি ভালবাসা নক্ষত্রের রাত্রিবাস
তুফানের চিত্রদেশ সহজ সত্যের কাছে
নতজানু সংগ্রাম খুঁজে ফিরে পারাপার
চিরচেনা ভাবনার নদী তীর করতল
ছুঁয়ে যায় শতাব্দীর অবশেষ সরাসরি
মাধ্যমের তারকাটা পেরুবার কৌশলের
ঝাড়বাতি জ্বলে ওঠা সময়ের জোড়াতালি
নিয়ে চলা জীবনের খটমল তাড়াবার
লড়াইয়ের আওয়াজ কানে বাজে ছটপট
দৃশ্যপট পড়ে থাকে নিকটের ছায়াতলে
অবিরাম বিশ্বাসের পোড়ামাটি নাই পাই
ধা ধা কলে হচকিত বুঝতে পারে না কিছু
জেগে থাকা মোমরসে শনির আখড়া বসে
ধূপখোলা রথখোলা ভাব তাপ নিয়ে চলে
গদাধর ঘুম চোখে কাটায় প্রহর একা
উচাটন উর্বশীর নরক নৃত্যের তালে গোলে
জীবনের একদাবী ফিরে যেতে পারি নাও পারি।
দেখা হয়ে যায়
মেঘ রোদ খেলা ঘরে
বেলা শেষে কি যে হয় পরিণাম
এমন করেই চলছে সাগর
নগরবাসী উত্তাপহীন
দোটানা জীবন নিয়ে আছে
মুক্তির নিশানা স্বপ্নের ঘোরে দেখেনা
কিছুই বলার নেই ভোরের পাখি
ডাকার আগেই রাতের বাঁশরী
খামছে ধরে সুরের টান
অসীম পথে ছোটার ভয়
ভাবনা জাগায় অলস প্রহরে
ভেতর গহীন নদীর ঢেউয়ের
সমান তালে এগিয়ে চলে
এখান থেকে অনেক দূরে
না পারার গাল গল্প অবশেষে
মিলন মেলায় দেখা হয়ে যায়
বিষের সুর যন্ত্রণা খুঁজে নেয়
মারণাস্ত্র খুঁজে ফিরে চোখে নামে ক্লান্তি
ডানবাম ঠিক নেই চলতে ফিরতে
হাঁটু কাঁপে লাঠি হাতে ঘরের বাইরে
যেতে হয় ফিরে আসা হবে কি হবে না
জানা নেই কারো এই অবস্থার ভিড়ে
কাটছে সময় মন্দ বলা ঠিক নয়
জীবন একটা মৃত্যুগামী ট্রেনযাত্রী
ছাড়া অন্য কিছু ভেবে লাভ নেই।
কবি ও সাংবাদিক শেখ সামসুল হক ষাটের দশকের কবি, সাংবাদিক ও
মুক্তিযোদ্ধা। মাতা-মৃত কুলসুম বিবি, পিতা-মৃত শেখ জয়নাল আবেদীন। জন্ম ২২ নভেম্বর, ১৯৪৯ সালে ফরিদপুরের
পশ্চিম চর টেপাখোলা। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন।
কাব্যগ্রন্থ-৪টি : চমৎকার সাহস-১৯৮৫, যাই ফিরে যাই-১৯৮৯, রমণীয় স্বাধীনতা-২০১৪, রূপালী জলের করাত-২০১৬।
গবেষণা গ্রন্থ-১টি (ফরিদুপরের লোকসাহিত্য-১৯৮৪), যৌথ কাব্যগ্রন্থ-১টি (শব্দের আকাঙ্খায়
সূর্য-১৯৭২), বিষয়ভিত্তিক
কাব্য সংকলন সম্পাদনা ২০টি। একক কবির সমালোচনা গ্রন্থ সংকলন ও সম্পাদনা ৫টি।
সম্মাননা- ৫টি, পুরস্কার-৩টি ও
স্বর্ণপদক-১টি। সভাপতি-ছাত্র ইউনিয়ন (ফরিদপুর শহর কমিটি- মেনন গ্রুপ-১৯৬৮-৬৯), ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে আলবদর বাহিনী
কর্তৃক ধৃত হয়ে কারাবরণ,
২০
এপ্রিল, ১৯৭৪ সালে কবি
রফিক আজাদের কবিতার ফিচার লিখে গ্রেপতারি পরোয়ানা। আহবায়ক- ঘাতক দালাল নির্মূল
কমিটি (অনুপ্রাস ইউনিট-১৯৯২),
২০০১
সালে নির্বাচনের পূর্বে গণগ্রেফতার। ফরিদপুর জাদুঘর প্রতিষ্ঠাতা ও আলাওল সাহিত্য
পুরস্কার প্রবর্তকদের অন্যতম। সম্পাদক মাসিক নীলাঞ্জ ও মাসিক অনুপ্রাস। খলিলউল্যাহ
মৃধা স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ বনবাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান কবিতা
পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ও অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি।