রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

গৌরাঙ্গ মণ্ডল



গৌরাঙ্গ মণ্ডল

সিন্ডিকেট

মগজে মগজে প্রভেদাঙ্কুর বীজ
তোমায় আমায় প্রবল হচ্ছে শ্রেণী,
'দূরত্ব"-এ নেই সমাসবদ্ধ রূপ
হাইফেন-ডট প্রস্থ দু'চার সেমি।

সর্বজনীন তখন সংখ্যালঘু,
সংখ্যা যখন বীজগাণিতিক ধাঁচে
অঙ্ক কেবল মণ্ডপে মণ্ডপ
একতন্ত্রের বেহিসাব আন্দাজে।

উৎসবে মূল সারাংশে এক হওয়া,
একাকীত্বের নাম ডাকে কেউ 'পুজো'
বৈষম্যও ভোগের থালায় চড়া,
কোন পাতে আম চিঁড়ের ভেতর খোঁজো...

দেখছি, শুনছি--জগঝম্পের ধ্বনি
বিসর্জনেও এমন করুণ হাসি!
অভ্যাসে আজ শ্বাপদ দাঁত ও জিহ্বা
পেট ভরলেই আড়ম্বর বিলাসী।

আসল কিন্তু, অল্পই পরিমিত
সিন্ডিকেটের বিষণ্ণ সংহিত
                    সিন্ডিকেটের বিষণ্ণ সংহিত।






সর্বগ্লানি

সপাটে বলে দি চোয়ালের নীচে আঙুল তুলে---
(জোয়ার ও ঢেউ আছড়ে যেমন শুকনো তটে)
'কাঁহিকা বেকুফ! রিফিউজ হও দেশান্তর'

হাততালি কই? তোর 'ভগমানএবার আমি।

'অবিশ্বাস'-এর শব্দ দ্বৈত রূপ হয় না,
মর্গ বদল খাদক, তাতে বা খাদ্যের কী?

এর চেয়ে বরং ডারউইনবাদ অনেক ভালো
যদিও বা ভালো ধ্বংস মাতন প্রলয়। ক্রুর।

আঙুল যখন সেদ্ধ চালের শক্তি মাপে,
শক্তি তখন মানুষ বিদ্ধে অস্হাবরী

বিশ্লেষণের ইচ্ছে চুলোয়! টাটকা রাঁধি।
দিন জমে ক্ষীর সাগর ফেরার অহংকারে

থামবে কি তোপ মাত্রাধারক সিসমোগ্রাফে?
সতর্ক ক্ষীণ---কেল্লা গঠন, লড়াই দিতে।

অসাধ্য নয়। গোষ্ঠী মিলন কি চাও তুমি?
নিজেই রাঙাও আকাশ, নকল ঈদের চাঁদে।

সত্যবচন? মঞ্চে শরীর থিরথিরিয়ে--
ফুসলে দে ছুট। নুন জমে যায় অশ্বক্ষুরে,
বেশ দুর্লভ ফুলকি আতস। দেখবে না কি? - - -

দেওয়াল খুরে আয়না লাগাও স্নানের ঘরে।





পৌরুষ

শরীর শুকিয়ে গেলে ঢুকে যায় পরিখার ধারে
বর্শাফলকের নল। শুষে অশরীরী ওম্
জ্বালানো শিবির পেতে আজও যায় দেরাদুন 'পারে
কতটা হিমেল করে মালভূমি স্নিগ্ধ ও নরম!

চাঁদ ক্ষয়ে ম্রিয়মাণ। তখনও আরোহী জানালায়
অপেক্ষা, কেবলই মৃত-চোখ উপড়ে নিয়ে গেলো পিঠে
কখনও বলব না আমি---তুমি গেলে কেন গান গাই
কখনও বলব না আমি---পরজন্মের ঠিকানা দিতে

ঋতু ভেজা ক্ষত হাত ত্রিকোণী ফলার স্পর্শ চেয়ে
রোমশ জন্তুর ন্যায় ওঁত পেতে চুপ থাকি। তবে--
মরে যাওয়া চঞ্চু চেরা খরস্রোতা জল খেয়ে খেয়ে
তবুও জানিয়ে দিয়ো, শেষ অংশটা শেষ করছো কবে

তোমার ফ্যাকাসী ডানা বিবর্ণা দেহ রং ধৌততা
টোকা লাগে, নুয়ে যায়,মানচিত্রেও হীন সঙ্গিনী
বিশ্বাস হল না আজও---"নপুংসক মানে পৌরুষতা"
তুমি কি পারবে কক্ষনো, বার্ধক্য আঁকড়াতে কোনোদিনই






কামপাতা

তোমার শরীর মন্ত্রমুগ্ধ সংকোচে
ঢুকিয়ে নিচ্ছো বিষকুম্ভের নাগপাশে,
গর্ত ঢিবির উচ্ছ্বাসি নীল জল হাওয়া
অল্প রঙিন মস্ত দানব সন্ত্রাসে।

বাইরে তখন সহিস-ঘোড়ার অপেক্ষা,
অন্ধকার ও পুরুষ মানুষ উৎসবে
আলোকবর্ষ অধঃপতন জ্ঞানপাপে,
চিবিয়ে আগুন খেলছো পরম বৈভবে।

সমস্ত রাত শরীর ও জল-সিন্ধুতে
ডুবছে তোমার জল ডুবুরির লুণ্ঠনে,
চুম্বনে ফাঁক! মেঘ ঢুকে যায়। বর্ষাতি।
সাক্ষাতে ঘোর জ্যোৎস্না নামুক স্পন্দনে।

ঝুলন্ত ব্রীজ, জল চুঁইয়ে যায় নভোমুখ
আচমকা শ্বাস বন্ধ হলেও নিমগ্ন,
যতক্ষণ না খোলস ছাড়ছে কামপাতা,
শরীর উগরে বিষ ঢেলে যাও আজন্ম।







অবিশ্বাসী ঢেউ

ভেঙে চুরে কিছু পেলে?
নিশ্বাস চেরা সঞ্চয় ভুয়ো পোড়া ঘায়ে ঘাম ঢেলে

ভেঙে চুরে কিছু পেলে?

জলের ধাক্কা শুনি
আজও, বাঁধা ঘাট শ্যাওলা শিকড় খুলে যাবে এক্ষুনি!

জল ডুবি প্রেম সে তো
খাবি খেয়ে খেয়ে চলে গেল ঢেউয়ে শ্বেত মরালীর মতো।

ভেঙে চুরে কিছু পেলে?

রক্তে মেলে না রেণু
বিদ্রুপ ধুপ তাক হয়ে ছোটে। মঞ্জুল সুর বেণু--

ক্রমশ রপ্ত করে
লেলিহান দ্রোহ। অনলের চোখে উলকি আঁকার পরে

স্পর্ধা ইচ্ছে মেশে
লকলকে স্ফীত আস্পর্ধারা নেতিয়ে ক্লান্ত শেষে।
                                             
ভেঙে চুরে কিছু পেলে?