অরুণিমা
মন্ডল দাস
আমি যখন পঞ্চাশে- (উৎসর্গ
সমস্ত প্রিয় মানুষজন)
আমি যখন পঞ্চাশে----
চোখ ,রঙ, চামড়া, দুর্বল
ফ্যাকাসে
রক্তের উত্তেজনা গুলো আর আনন্দ দেবে না
চোখের লাল আভা কামড়ে
খাবে না
হাতের
আঙুলগুলো কাতরে কাতরে যৌন নিউক্লিয়াশ খুঁজবে, শুঁকবে পুরোনো মৈথুনের সঁাতারু মন-----
দৌড়চ্ছে ---
ঘামানো পাজামা ,প্যান্টি ,জাঙ্গিয়া ---
শেষ সুখের তৃপ্তিতে---
হঠাৎ কালো রাত দুপুর হয়ে
যায়--
সাদা ঢিলে চামড়ায় সেই
জড়িয়ে ধরা স্পর্শটুকু লেগে থাকবে
লেগে থাকবে ছোঁয়ায় ভরা মুখটির, হাতটির,
শরীরটির, আত্মাটির
এক আকাশ দুষ্টুমি
পাকা চুলের গভীর
থেকে ---
ভালোবাসার গরম শ্বাস গুলো প্রতি সেকেন্ডে বঁাচিয়ে রাখবে
হয়তো ভুলতে থাকব ---ভুলতে থাকব
জীবন---
হিসাব নিকাশ ---- সংসার--- গাছপালা --উঁচু নিচু---সুখ দুঃখ
হয়তো তোমাকে ভুলতে থাকব
তিলগুলো --
হাসিগুলো--
কথাগুলো--
রাগগুলো ,আদরগুলো, আবদারগুলো---
অভ্যাসগুলো
লাঠির মাথা ঝাপসা দেখাবে
মুখের ভঁাজকরা চামড়ায় হাত ----
হাতের আঙুলে র স্পর্শে সেই
আগের শিহরন-- পান মুখে চোখের সেই সুপ্ত লাল কামনার ভাষা---
ঠান্ডা জল
সূদূর মেঠো জীবন
হরে কৃষ্ণ নাম--- ছেলে ছেলের বৌ----
প্রেমিকা পঞ্চাশের বুড়ি----
ষাটের হিসাবী বৃদ্ধ তুমি
-----
বারবার রামধনু
মেঘের বুকে দোল খাবে না
কোমরের ভঁাজে ঢেউ লুডোর দানে মিলবে না
অবশ চৌকাঠ
পুরোনো
চৌখশ সরষের সরে সরে থাকা
লেবু লঙ্কার ঢলে যাওয়া তেজ
তুমি থাকবে তো
শেষবেলার সঁাঝে আমার
হৃৎপিন্ড কেটে নিয়ে চলে যাবে
ধমনী শিরার অস্ফুট চিৎকারে
নিস্তেজ
শরীরের শেষ কাকুতি শুনতে
পাখিদের রব মুখগুলো কেমন অচেনা হতে থাকবে
সম্পর্ক বাদামের শুকনো খোসা
অগোছালো বার্ধক্যের অস্থিরতা
আমি যখন পঞ্চাশে-----
এক থালা ভাত
এক
প্লেট চাউমিন
এক প্লেট নিরামিষ ভোগ
মাছ মাংস
ডাস্টবিনের নোংরা
ছুটে
আসা ভাগবত গীতার ব্রম্ভবাদ সন্ন্যাসযোগ
ক্ষিদেগুলো
যৌবনের শুকনো ব্রেক আপ
ব্যথাগুলো কোন তরুন কবির প্রেমরক্ত
বিরহের তীক্ষ্ণ দংশন
জাগলে চিন্তার দশটি সাগরে ডুবে যাই
ঘুমালে কবিতার দাস হয়ে আলপনা আঁকি
বর্ষায় তঁার শরীরের সামনে
দঁাড়িয়ে কঁাপতে থাকি
শীতে ঘেমে
ঘেমে মরে যাই-----
কল্পনায় কাছে আসে
আবার চলে যায় --ছুটে যাই----কুয়াশা--আবেগের একরাশ অট্টহাসি--কিছু নেই
--
চারিদিক টা কেমন খাঁ খাঁ মাঠ
শুধু ই টানটা ই ভাসছে আবার
ডুবছে-----
নাচছে
নিংড়াচ্ছে
কঁাদছে
সারা রাত সে আর ফিরবে না
সব রাস্তা ফঁাকা
তবু বড়রাস্তার এক ধার দিয়ে একটি সাইকেল চলছে
আশার সাইকেল
চলতেই থাকবে
বেল বাজছে --
শুনতে পাচ্ছো আজীবন
মরার পর ও ------
অনুভূতির
সাইকেলটি অমর----চলতেই থাকবে
বাজতেই থাকবে
কান থেকে কানে
হৃদয় থেকে
হৃদয়ে-----
আমি যখন পঞ্চাশে----!
আমি যখন পঞ্চাশে-২
সরকারী চাকুরে
ডায়াবেটিস সুগারের
রুগী
পঞ্চাশের চাকুরীজীবি
প্রতিদিন জঙ্গল দিয়ে যাব
কাঠ কাটব
সোনার খনি খুঁজব
তবু
জঙ্গল সাফ করব না
আমরা পঞ্চাশের সরকারী
চাকুরে
কি পেলাম
মোমবাতি মিছিল সুন্দরী কলীগের হাওয়া হাওয়া
জামা রাজনীতির থাপ্পড়
এ বলে আমায় দেখ
ও বলে আমায় দেখ
দুজনকে দেখলে পেঁপে আর পেঁপের ডঁাটি
একজনকে দেখলে কঁাচালঙ্কা আর
লবডঙ্কা
আমি যখন পঞ্চাশে-----৩-
মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো
পূজোর ফুল
আধামোছা আবছা
আলপনার দাগ
মনে পড়ে
বিয়ের নতুন বাসর
ফুলশয্যা
যৌবন
প্রেম
কবিতা
প্রেমিক
বিছানায় আর বারবার
টিকটিকি পড়ে না
পতঙ্গরা একা বৃদ্ধ মানুষদের অপছন্দ করে
আমি যখন পঞ্চাশে--৪
লাল সালোয়ার বেনারসির বিবাহিত
নতুন বৌ নতুন বৌ গন্ধ
ভাঙা সেই
পুরোনো আলমারির জি নিসপত্র
বাড়ির পুরোনো দেয়ালের দাগ
বিয়ের আদর
প্রেমের পাগলামি
মনে পড়ে
চুম্বন
মৈথুন
প্রজাপতি ---
ভ্রমর-- আঁচড়ানো বেডসীড---
আমি যখন পঞ্চাশে--- ৫
আমার পঞ্চাশ
মেঘগুলো
আগের থেকে রাগী আর হিসেবী
নীরারা উন্নাসিক
কাছে
যেতেই সাগর শুকিয়ে ঝোপ বন বাদাড়
পা হাত বাস্তবের জালে জড়িয়ে এক
কোমর কাদা
অবিবাহিত পুরুষ গুলো হাত টানা জলহস্তী
জলে থেকে কাদায় দাপাদাপি
জড়িয়ে
ধরতে ক্যাকটাস আর বিছের কামড়
এতো কম জলে স্নান করা যায় না
ছবি আঁকতে
বই খুলতেই
প্রেমিকের একরাশ সবুজ
ধোঁয়া
তঁার হঠাৎ আলিঙ্গন
পৃষ্ঠাগুলো পূর্নাঙ্গ মিলনে খুলতে যাওয়ার আগেই
পান্ডুলিপি শক্ত হাতে বঁাধলাম---