রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

সৌমিত্র চক্রবর্তী



সৌমিত্র চক্রবর্তী

শুভাঞ্জন সন্ধ্যা

হয়তো সন্ধেটা আরেক্টু ভালো
হতে পারতো। হয়তো বা
ফিসফিস ছায়া ছায়া গলায়
উইশ করতেই পারতাম
ভালো থেকো, ভালোবেসো।
শুভাঞ্জন সন্ধ্যা!

তলানির আগের চুমুকের চা
কখন যে ঠান্ডা হয়ে যায়
অজান্তেই, বিস্বাদ তেঁতো
মুখে তাও গিলতেই হয়
অজান্তেই,স্বাদহীন বলতেই হয়
শুভাঞ্জন সন্ধ্যা!

ব্যবহার হতে হতে হতে হতে
একসময় বিষাদেও ধার
থাকেনা। ভার বইতে বইতে
ঘাড়ে পড়ে কড়া আস্তরণ,
ব্যক্তিত্বহীন চোখ মাটিতে রেখেই
শুভাঞ্জন সন্ধ্যা!

যতকিছু বলা হয় উচ্চকিত স্বরে
মানা যায় বস্তুজীবনে? ফ্যান্টাসি
ওয়ার্ল্ড ঘিরে রাখে রঙিন বলয়ে
ভালোবাসা-ভালোথাকা বন্ধক
দিয়েও ফিসফিস বলে যাই
শুভাঞ্জন সন্ধ্যা!





বিস্মরণের শয়ান দিনে

অনিন্দিতা বসেই আছ
একলাহুতুম ছায়াশরীর
শান্তি জলের নির্বাণে,
কেমন আছ বিস্মরণের দিনে?
কেমন আছ শেষ পৌষের
কনকনে শীত ছায়া মেখে
শুদ্ধসত্ব বিকার মুঠোয় 
একলা পাতাল অন্ধকারে
মনখারাপের কান্না বুকে
স্মৃতির গন্ধ মেখলা গায়ে!
হাতপাতালি সাতপাতালি
গম্ভীরা গান বাইরে কোথাও,
শুধুই তোমার কাচের ঘরে
ভাসছে যেন ভাঙার আওয়াজ,
দেওয়াল সবই বিশ্রী দাগে
গড়ছে কাচের ফাটল ছবি।
কেমন আছ অনিন্দিতা
বন্ধ্যাত্বের সময় হাতে,
চোখ ভরা দুই পুকুর নিয়ে
সঙ্গী বিকেল বিষন্নতা!





মাঝারি স্বপ্নের পৌষল্যা

টুকটাক হরিভরি ঘাসের আভাস
ইতিউতি নজরের লাজুক লড়াই
কোণে কোণে ডিস্কের উদ্দাম জ্যাজ
ছোটখাটো স্টলে ওড়ে খাবারের লোভ।

ছোটবেলা ছোঁকছোঁক রূপমূর্তিতে
উচ্ছৃত উচ্ছ্বাসে পশমি গরম
নাবালিকা রাজহাঁস রাজার কুমারী
ফাস্ট ট্র্যাক ট্র্যাপিজেই উড়ন্ত গান।

পরীক্ষা শেষে আসে আস্ত জাহাজ
নূর ই জাহান বলে আনত সালাম
কার্ণিভালের দেশে সাতরঙ মজা
টিকটক ব্রেকড্যান্স আনন্দমেলা।

ছোটবেলা কলিং এর সুইচ টেপে
ত্বকরং মূহুর্তে সবুজ সাবাই
কচিমন জানেইনা বৃদ্ধাশ্রম
কাগজের নৌকা স্মৃতিতে ভাসায়।





থাক

তাহলে! সরু সুতোয় পাক লেগে ছিঁড়ে যায় সময়ের লিংক,
কোনো বিষাক্ত ঢিলে পুকুরের নোংরা জলে ঘুলিয়ে ভেসে ওঠে পাঁক।
যত প্রতিশ্রুতি, যত আলোর আভা মাখা কর্পোরেট প্ল্যান
হঠাৎই নীরব অবজ্ঞায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে যায় ভাঙাচোরা ডাস্টবিনে;
ময়লার মাঝে চাপা পড়ে খুন হয়ে যাওয়া অকালমৃত ভবিষ্যতের
চোখের এক ফোঁটা বায়বীয় মায়া:
তাহলে! যাব বললেও সব জায়গায় যাওয়া হয় না অকালগমনে।





হারানো রোদ্দুর

তোর চিলেছাদে এখনো রোদ্দুর আসে, ত্যারচা?

জানিস গতমাসে আমার তৃতীয় অ্যাবরশন করালো তৃষিত, জোর করেই।

কত্তোদিন টপ জিনস পরিনি জানিস? অথচ এই আমিই একদিন হামেহাল শাড়িতে বেসামাল।

নার্সিংহোম টা ওর বান্ধবীর, কি জানি হয়তো খরচ কম হলো।

খরচের হিসেব করে সবাই, জমার খোঁজে উদাসীন।

ফেরার সময়ে শরীর চলছিল না, মাথা অসহ্য ভারী। যন্ত্রণায় চারপাশের টুকরো টাকরাও কালচে হলুদ।

তোদের জানলায় সেই গরাদগুলো আছে এখনও? ওরা কথা বলে আজও তোর সাথে একলা দুপুরে!

মা বাবা স্বঘোষিত স্বজনের দল, কেউই বোঝেনি, তৃষিত কে আমি চাইনি। চাইনি ইউএস যেতে। তৃষিত যে ভঙ্গুর ছায়া।

সত্যি বলছি রে, অন্ততঃ তুই বিশ্বাস কর, বাচ্চাটা আমি চেয়েছিলাম আমার একলাহুতুম অন্ধকার তাড়াতে।

তুই ভালো থাকিস, কিছুতেই নষ্ট হতে দিসনে যেন আমার হাত ফস্কে হারিয়ে ফেলা কিশোরীবেলার মুচকি রোদ্দুর।

যা কিছুই চাই, কেন যে নেই হয়ে যায় এ কালবেলায়!