তৌহীদা ইয়াকুব
অবেলায়
থুতনির একলা তিলের পাশে
পরে থাক অবেলায়।
ও তুমি মুগ্ধ হও বারে
বারে
মৌসুমি বাতাসে।
দেখনি যত তার সবটূকু ভরে
আছে আনাচ কানাচ।
তুমি ডুবে গিয়ে, ভেসে উঠে
সুগন্ধি উৎসবে নির্ভার
উড়ে যাও।
ঠিক বিপরীতে অন্য কিছু
ডুবে বা ভাসে না
.........অস্থির ঝুলে থাকা
কষ্ট ভার যোজন বাড়ে। তার
পর
সমতলে পিছলে যেতে থাকে
সময় কিংবা নষ্ট ঘড়ির
ষড়ঋতু।
বোধের তীক্ষ্ন ক্ষরণ
চিহ্ন আঁকে
অশ্রুমতী সন্ধ্যায়।
অবশেষে -
ঋণের সঞ্চয় জোটে কান্নায়
জেনে
ঠাট্টার আসরে বসিয়ে
রাখে।
স্মৃতির মানুষ
তোমরা দেখনি জীবন এখনো
ওমন হেসে যেতে পার
অনায়াসে
কি উচ্ছল ভরপুর প্রাণসুখ
নিয়ে,
সূচনার স্রোত অক্ষর জড়
করে।
অনর্থক ঝেড়ে ফেলা শিখনি,
তখনও কেউ তাকে কাঁদতে
দেখেনি,
মুষল বৃষ্টিতে একলা
ঘাটের মত
স্মৃতি কাতর।
প্রবর্তনার শস্য দানা
খুঁটে খেয়ে গেছে
বাদামী চড়ুই।
ততদিনে স্মৃতিরাও পুরোনো
হয়েছে আরো।
আয়তনে আঁচলের বাড়েনি
মহিমা,
ততদিনে জন্মগন্ধ মাখা
হাত ছেড়ে গেছে
সাজানো, ছিটানো বসুধায়।
উঠোনে বেড়েছে প্রতিবেশি
দেয়ালের আবছায়া।
মিহি শব্দে ফুটে যাওয়া
না জানা ফুলের মত আড়াল।
প্রান্তিকে এসে দাঁড়ায়-
হাজারও দৃশ্যপট নিয়ে
প্রাচীন বিষণ্ণ এক পৈত্রিক মানুষ।
বিলপ্তির দিনে
বিলপ্তির দিনে দেখি
দূর্গ ভেঙে গেছে বহু আগে,
অথচ-দমনের পুরনো নিগ্রহ
দেখে কোন মুখ আপন
মর্তলোকে!
কেউ কিছুতেই টের পাবে না
পাবে না,
অলিখিত শর্তগুলো
অদৃশ্যমত শিলালিপি,
গুপ্ত যুগ দেখায় আড়ালে।
শুধু কিছু বিষণ্ণ
শব্দমালা
নিঃশব্দের ভিতর অবিরাম
বিলাপ করে।
শাড়ির জমিনে পুরাতন
নক্ষত্র ঝড়ে গেছে।
ছাই চাপা আগুনের মুখ
চেটে খায় শতাব্দির
ভণিতা।
কোথাও যাওয়ার নেই বলে
শুধু দেখি
সুগন্ধি ছড়ানো যাত্রী
নিয়ে
প্লাটফর্ম ছেড়ে যায়
দূরগামী ট্রেন।
মরচে পড়া খিড়কির বিকট
উন্মোচনে
ক্লান্তি শুধু বাড়ে
ততদিনে জাহাজের ধোয়া
নিয়ে
দিগন্ত ওই দিকে সরে
গেছে।
ভবিতব্য
অমায়িক এই গৃহ কোণ।
বসে আছি, দেখি নাই কেউ বসে থাকে এমন।
কত কত কাজ, অন্তহীন চলা, তাড়াহুড়ো,
দেখে দেখে আমি আরও
স্থবির, আরও একলা।
নিঃশব্দ জানালায় পার করি
সূর্যাস্তের অমোঘ ঘনোঘটা।
তারপর,
ক্লান্তিতে অচেতন দু'খণ্ড পৃথিবী।
চেতনের দায় নিয়ে ভৌতিক
নির্জনতা ডাকে,
জাগে একাকি শহর এপারে
ওপারে।
সে কি ছায়া ঘেরা মায়াময়? তাকে কেমন অলিক মনে হয়।
নাকাল বাদানুবাদে
হারানো ছন্দ ফিরিয়ে দেয়
শব্দের মায়া।
এখনও স্পন্দে, পরাণে জাদু অফুরান,
প্রান্তিকেরে সেলাইকরে
দু'প্রান্তের মেঘ।
কেউ কেউ ভুলে গেছে
মানুষ এখনো ভালবেসে
কাঁদে।
কান্নাতে প্রেম শিল্পের
মত বাঁচে।
আচ্ছাদন খুলে খুলে বছরও
বিগত হোল
কত কত ঘাট ছেড়ে গেল
উদ্বাস্তু নোঙর।
ঘটন-অঘটন মিলে,
গল্প পাতার দৈনিকে লিখে
গেল কল্প দৃশ্য।
ততক্ষণে,
সদ্য পিতৃহারা অবুঝের
দিকে তাকানোর মত
অলক্ষে পৃথিবীর দিকে
তাকিয়ে আছে গোটা এক
আগামি বছর।
এখানে এখন
প্রতিটা স্রোতের গল্প
লেখা হলে
আমিও থেকে যাই।
কোথাও বৃষ্টি হলো, কোথাও রোদ
কোথাও রাতের ঘুম, কোথাও হুলুস্থুল।
এখানে এক অধিবাসি রোদের
গতিবিধি
ঘুরাতে চায় পাহাড়ি
বাতাস।
এখানে বৃদ্ধ অশোকের গায়ে
লেপ্টে থাকা কুমারি আলো
ঘোরলাগা সুরে বাজায়
বেদনা প্রমুখ।
এখন আর কেউ প্রচ্ছন্ন
ইঙ্গিত নিয়ে
শব্দ-সুন্দর রপ্ত করে
না।
চাঁড়াল কাব্যের দায়
জ্যামিতিক ভার নিয়ে
নির্দ্বিধায় উঠে আসে
দাম্ভিক প্রতিভায়।